দৈনিক যায়যায়দিন পত্রিকায় 'ভাসানী বিশ্ববিদ্যালয়ে টাকা দিয়েও চাকরি না পাওয়া ১৪ প্রার্থীর আহাজারি' শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদের একাংশের প্রতিবাদ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব অফিসের উপ-পরিচালক সত্য সাহা। প্রতিবাদলিপিতে তিনি দাবি করেন, ৩০ জানুয়ারি তারিখে উলিস্নখিত শিরোনামে তাকে জড়িয়ে মিথ্যা তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে, যার সঙ্গে তার বিন্দুমাত্র সম্পর্ক নেই। তাই তিনি প্রতিবাদটি যথাযথভাবে প্রকাশ ও প্রচার করার অনুরোধ করেছেন।
প্রকাশিত সংবাদটির প্রতিবেদক জানান, সংবাদটির দ্বিতীয় প্যারায় উলেস্নখ করা হয়, 'বিশ্ববিদ্যালয় গেস্ট হাউজের সহকারী রেজিস্ট্রার মুহা. মুজাম্মেল হোসাইন, গেস্ট হাউজের বাবুর্চি মো. জাহিদ কাজী এবং হিসাব অফিসের উপ-পরিচালক সত্য সাহার সমন্বয়ে চক্রটি বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে ৪৯ লাখ টাকা সংগ্রহ করে। পরে ওই টাকা তারা নিজেদের মধ্যে ভাগবাঁটোয়ারা করে আত্মসাৎ করেন।' এছাড়া সংবাদের কোথাও সত্য সাহার নাম উলেস্নখ করা হয়নি। গেস্ট হাউজের বাবুর্চি মো. জাহিদ কাজী কর্তৃক বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের কাছে দেওয়া অভিযোগ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে যাচাই-বাছাই করে সত্য সাহার নাম ব্যবহার করা হয়েছে। অভিযোগের বিষয়টি নিষ্পত্তির লক্ষ্যে গঠিত তদন্ত কমিটি খতিয়ে দেখছে। ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্টদের অনেকের লিখিত ও মৌখিক সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন করেছে।
লিখিত অভিযোগে গেস্ট হাউজের বাবুর্চি মো. জাহিদ কাজী উলেস্নখ করেন, সত্য সাহা তার ভাতিজা সাগরকে 'টেবিল বয়' হিসেবে চাকরি দেবেন বলে ১০ লাখ টাকায় চুক্তি করেন। ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসে চুক্তি অনুযায়ী পাঁচ লাখ টাকা নগদ গ্রহণ করেন এবং চারটি বস্ন্যাঙ্ক চেক তার কাছ থেকে নিয়ে নেন। পরে জাহিদ কাজী তার ভাতিজার চাকরির বিষয়ে সত্য সাহাকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বাকি টাকা পরিশোধ করে 'নিয়োগপত্র' নেওয়ার জন্য বলেন। টাকা সংগ্রহ করতে জাহিদ কাজী ভাসানী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা সোনালী ব্যাংক লিমিটেড থেকে ০.৯% সরল সুদে পাঁচ লাখ টাকা ব্যক্তিগত ঋণ নেন। ওই পাঁচ লাখ টাকা ব্যাংক মো. জাহিদ কাজীর সঞ্চয়ী অ্যাকাউন্টে জমা করে। সত্য সাহা তার কাছে থাকা জাহিদ কাজীর বস্ন্যাঙ্ক চেক ব্যবহার করে ঋণের পাঁচ লাখ টাকা তার নিজের অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার করে নেন। তদন্ত কমিটির সামনে তিনি এসব বক্তব্য উপস্থাপন করার পাশাপাশি কাগজপত্র দেখিয়েছেন। সংবাদকর্মীদের কাছে ভিডিও সাক্ষাৎকারও দিয়েছেন।
সরেজমিন ভাসানী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা সোনালী ব্যাংক লিমিটেডে জাহিদ কাজীর অ্যাকাউন্ট পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ব্যক্তিগত ঋণের (করপোরেট হোলসেল লোন) পাঁচ লাখ টাকা জাহিদ কাজীর অ্যাকাউন্টে ২০২৩ সালের ১১ অক্টোবর ট্রান্সজেকশন আইডি ১৮৭(২)/২০২০২৭৪২(২) মূলে জমা করা হয়। টাকা জমা হওয়ার পর জাহিদ কাজীর অ্যাকাউন্টে জমাকৃত টাকার পরিমাণ দেখা যায় পাঁচ লাখ এক হাজার ৪১৯ টাকা ৪৯ পয়সা। ওইদিনই উপ-পরিচালক সত্য সাহা জানতে পেরে তৎক্ষণাৎ জাহিদ কাজীর অ্যাকাউন্ট থেকে পূর্বে দেওয়া বস্ন্যাঙ্ক চেক (ক্লিয়ার ইনস্ট নম্বর এসবি ০০০০১২৩৫৮৭৩) ব্যবহার করে পাঁচ লাখ টাকা নিজের অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার করেন। ঋণের টাকা অ্যাকাউন্টে জমা হয়েছে জানতে পেরে জাহিদ কাজী একটি চেক (কক/১০ নং ৫১০২৩৭৬) দিয়ে টাকা উত্তোলন করতে গিয়ে জানতে পারেন, তার ঋণের পাঁচ লাখ টাকা সত্য সাহার অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার করে নেওয়া হয়েছে।
এমতাবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব অফিসের উপ-পরিচালক সত্য সাহার দেওয়া প্রতিবাদপত্রটিই বানোয়াট ও সত্যকে আড়াল করার অপপ্রয়াস মাত্র। ওই প্রতিবাদপত্রটি প্রকাশ ও প্রচার করার অনুরোধ করে তিনি স্বীয় অনিয়ম-দুর্নীতি আড়াল করার পাঁয়তারা করছেন।