টাঙ্গাইলের মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (মাভিবিপ্রবি) কর্তৃপক্ষ নানা বিষয়ের তথ্য প্রদান করতে চরম উদাসীনতা ও গড়িমসি করার অভিযোগ উঠেছে। তথ্য অধিকার আইনের নির্দিষ্ট ফরম পূরণ করে আবেদন ও আপিল করার পরও বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য অধিকার কমিটির সদস্যরা একজন অন্যজনের ওপর দায় বর্তাচ্ছেন।
জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাডহক ভিত্তিতে নিয়োগ, গঠিত নিয়োগ কমিটির বিবরণসহ নানা বিষয়ে ১১টি লিখিত প্রশ্ন উপস্থাপন করে তথ্য অধিকার আইনের 'ক' ফরম যথাযথভাবে পূরণ করে গত বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর আবেদন করেন দৈনিক বণিক বার্তার টাঙ্গাইল প্রতিনিধি মো. পারভেজ হাসান। নিয়মানুযায়ী তথ্য প্রদানের ৩০ কর্মদিবস পরেও তাকে তথ্য দেওয়া হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য অধিকার কমিটির আহ্বায়ক এফটিএনএস বিভাগের অধ্যাপক ডক্টর একে ওবায়দুল হকের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করা হলে তিনি পারভেজ হাসানকে জানান, তথ্যের বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে- তাদের অনুমতি পেলে যথাযথ নিয়ম মেনে তথ্যগুলো সরবরাহ করা হবে। তারপরও কাঙ্ক্ষিত তথ্য না পেয়ে পরে তিনি গত বছরের ১৯ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের (ভিসি) কাছে তথ্য অধিকার আইনের 'গ' ফরমে তথ্যের জন্য রেজিস্ট্রি ডাকযোগে আপিল করেন। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাকে কোনো প্রকার তথ্য দেয়নি এবং তথ্য দেওয়া হবে না মর্মেও অবহিত করা হয়নি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সূত্র জানায়, এ পর্যন্ত তথ্য অধিকার আইনের আওতায় ২-৩টি আবেদন জমা হয়। এর মধ্যে অনেক আগে জমা দেওয়া একটির বিষয় নিষ্পত্তি করা হয়েছে। অন্য দুটির বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।
তথ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অধিকার (তথ্য প্রাপ্তি সংক্রান্ত) বিধিমালা, ২০০৯ অনুযায়ী নির্ধারিত পদ্ধতি অনুসরণপূর্বক বাংলাদেশের নাগরিক যেকোনো সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাঙ্ক্ষিত তথ্য পেতে পারেন।
বিধিমালায় বলা হয়েছে, দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবেদন পাওয়ার পর ২০ কার্য দিবসের মধ্যে ক্ষেত্র বিশেষে ৩০ কার্য দিবসের মধ্যে সফট/ই-মেইল/প্রিন্টেড কপি/ফটোকপি/সিডি কপি আকারে তথ্য প্রদান করবেন। কোনো কারণে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তথ্য প্রদানে অপারগ হলে আবেদনকারীকে নির্ধারিত পদ্ধতি/ফরমেট অনুসরণপূর্বক ১০ কার্য দিবসের মধ্যে লিখিতভাবে অবহিত করবেন। এছাড়া আবেদনকারী তথ্য না পেলে বা কোনো প্রকার সংক্ষুব্ধ হলে নির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষের (নির্ধারিত নমুনা/ফরমে) কাছে আপিল করতে পারবেন। আপিল কর্তৃপক্ষ আবেদন পাওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে আপিল নিষ্পত্তি করার বিধান রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ সদস্যের তথ্য অধিকার কমিটি বিধিমালা সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করে আবেদনকারীর অধিকার ক্ষুণ্ন করেছেন।
তথ্য অধিকার আইনে তথ্য চেয়ে আবেদনকারী পারভেজ হাসান জানান, তিনি বারবার নানাভাবে চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। পরে যথাযথ নিয়ম মেনে নির্ধারিত ফরম পূরণ করে ১১টি তথ্যের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য অধিকার কমিটির কাছে আবেদন করেন। প্রথমে তথ্য অধিকার কমিটির আহ্বায়ক এফটিএনএস বিভাগের অধ্যাপক ডক্টর একে ওবায়দুল হক আবেদনপত্রটি গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানান। পরে পীড়াপীড়ি করায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ ও প্রেস প্রকাশনা দপ্তরের উপ-পরিচালকের কাছে জমা দিতে বলেন। তিনি উপ-পরিচালক মো. সামছুল আলমকে ফোন দিয়ে আবেদনটি জমা নিতে বলেন। মো. সামছুল আলম আবেদনটি বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য অধিকার কমিটির পক্ষে স্বাক্ষর করে জমা নেন।
তিনি জানান, নির্ধারিত সময় অতিক্রান্ত হলেও তথ্য অধিকার কমিটি কোনো প্রকার ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের (ভিসি) কাছে আপিল করেন। আবেদন পাওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে আপিল নিষ্পত্তির বিধান থাকলেও অদ্যাবদি তা করা হয়নি। অসুস্থতাজনিত কারণে বিলম্ব হলেও তিনি তথ্য কমিশনের প্রধান তথ্য কমিশনারের কাছে বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য আবেদন করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
তথ্য অধিকার কমিটির সদস্য সচিব বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ ও প্রেস প্রকাশনা দপ্তরের উপ-পরিচালক মো. সামছুল আলম জানান, তিনি কমিটির আহ্বায়কের নির্দেশে দায়িত্ব পালন করে থাকেন। তথ্য চেয়ে আবেদনটিও তিনি আহ্বায়কের নির্দেশে যথানিয়মে জমা নিয়েছেন।
তথ্য অধিকার কমিটির আহ্বায়ক এফটিএনএস বিভাগের অধ্যাপক ডক্টর একে ওবায়দুল হক জানান, যেহেতু রেজিস্ট্রার অফিস তথ্য প্রদান করবে। তাই তথ্য প্রাপ্তির আবেদনটি তিনি রেজিস্ট্রার অফিসে ফরোয়ার্ড করে দিয়েছেন এবং রেজিস্ট্রার অফিস এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো সাড়া দেয়নি বা তাকে কিছু জানায়নি। রেজিস্ট্রার অফিস আবেদিত তথ্যগুলো তাদের কাছে দিলে তিনি সরবরাহের ব্যবস্থা করতে পারবেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ডক্টর তৌহিদুল ইসলাম জানান, এ বিষয়ে তথ্য অধিকার কমিটির আহ্বায়ক ডক্টর একে ওবায়দুল হক ভালো জানেন। এসব বিষয়ে তাদের করণীয় তেমন কিছু নেই।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ডক্টর মো. ফরহাদ হোসেন জানান, বিষয়টি সম্পর্কে তিনি অবগত রয়েছেন এবং আবেদিত তথ্যগুলো দেওয়ার মতো হলে অবশ্যই দেওয়া হবে। আর দেওয়ার মতো না হলে আবেদনকারী পাবেন না। তথ্য দেওয়া না হলেও আবেদনকারীকে জানানো হবে কিনা- এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি উলিস্নখিত বক্তব্য পুনঃব্যক্ত করেন।