বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪, ৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

হাটহাজারীতে পিতা কেন্দ্র সচিব, ছেলে পরীক্ষার্থী দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি

হাটহাজারী (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি
  ০৭ মার্চ ২০২৪, ০০:০০
হাটহাজারীতে পিতা কেন্দ্র সচিব, ছেলে পরীক্ষার্থী দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি

হাটহাজারীতে সন্তান পরীক্ষার্থী তা গোপন রেখে অপর একটি পরীক্ষা কেন্দ্রের কেন্দ্র সচিবের দায়িত্ব পালন করছিলেন পিতা। একইসঙ্গে সন্তানকে উত্তীর্ণ করতে কেন্দ্রে বসে কৌশলে মুঠোফোনের মাধ্যমে পরীক্ষার প্রথমদিন থেকেই পরীক্ষা শুরুর নির্ধারিত সময়ের আগে প্রশ্নফাঁস করে নকল সরবরাহের অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে।

জানা গেছে, উপজেলার নাঙ্গলমোড়া শামসুল উলুম ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ছালেহ আহমদ আনছারী ছিপাতলী জামেয়া গাউছিয়া মুঈনীয়া কামিল মাদ্রাসা কেন্দ্রের কেন্দ্র সচিবের দায়িত্ব পালন করছেন। অন্যদিকে তারই প্রতিষ্ঠিত ধলই ইউনিয়নস্থ এনায়েতপুর মুঈনিয়া আহমদিয়া দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষার্থী তার সন্তান রিদোয়ান আনছারী এবার দাখিল পরীক্ষার্থী। হাটহাজারী পৌরসভাধীন জামেয়া অদুদিয়া সুন্নিয়া ফাযিল মাদ্রাসায় তার পরীক্ষার কেন্দ্র। একদিকে সন্তান পরীক্ষার্থী তা গোপন রেখে কেন্দ্র সচিব, অন্যদিকে সন্তানকে পরীক্ষার আগে তার কেন্দ্র থেকে স্মার্টফোনে কৌশলে প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগে অনুসন্ধানে নামে প্রতিবেদক।

সরেজমিনে কেন্দ্রের সচিব এবং ছেলে পরীক্ষার্থীর প্রমাণ পাওয়া যায়। পাশাপাশি প্রশ্নপত্র ফাঁসে সরাসরি জড়িত থাকার প্রমাণ না পেলেও দু'টি প্রশ্নের কপি পরীক্ষার আগে ফাঁসের তথ্য পাওয়া যায়। অভিযোগ সম্পর্কে ইউএনও এ বি এম মশিউজ্জামানকে অবগত করলে মঙ্গলবার ওই কেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে প্রশ্ন ফাঁসের প্রমাণ না পেলেও জিজ্ঞাসাবাদে সন্তান পরীক্ষার্থীর কথা স্বীকার করে ভুল হয়েছে জানিয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করেন ওই সচিব। পরে নির্বাহী কর্মকর্তা দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি প্রদান করেন তাকে।

সত্যতা নিশ্চিত করে ইউএনও বলেন, তথ্য গোপনের সত্যতা মেলায় তাকে প্রাপ্ত দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি প্রদান করা হয়। প্রশ্নপত্র ফাঁসের মৌখিক অভিযোগ আসলেও পরিদর্শনে কোনো তথ্য মেলেনি। তবে বিষয়টি তদন্তে থাকবে।

এদিকে নিজ প্রতিষ্ঠিত মাদ্রাসার সুপার, কেন্দ্রে গার্ডের দায়িত্বে শিক্ষকসহ অনেকেই নকল সরবরাহে সহযোগিতা করছেন বলে গুঞ্জন আছে। ধারণা করা হচ্ছে মুঠোফোনে প্রশ্নপত্র পেয়েই কেন্দ্রের আশপাশ থেকে নকল সরবরাহ করা হয়। এতে শিক্ষার্থীর পিতা ওই অধ্যক্ষ প্রভাবশালী হওয়ায় কেউ ভয়ে প্রতিবাদ কিংবা মুখ খুলতে পারছেন না।

জানতে চাইলে ওই কেন্দ্রের কেন্দ্র সচিব অধ্যক্ষ হেলাল উদ্দিন বলেন, তার কেন্দ্রে নকলের কোন সুযোগ নেই। তিনি শতভাগ নিশ্চিত বলেও উলেস্নখ করেন।

তথ্য গোপনের বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মাইনুদ্দিন মজুমদার বলেন, পরীক্ষার আগে কেন্দ্র কমিটির মিটিংয়ে দায়িত্বপ্রাপ্তদের কারও সন্তান পরীক্ষার্থী কিনা বার বার জানতে চাইলেও অভিযুক্ত তা গোপন রাখেন। বিষয়টি লিখিতভাবে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে জানানো হবে। দায়িত্ব থেকে অব্যাহতির পাশাপাশি উনার প্রতিষ্ঠিত মাদ্রাসার তিন শিক্ষককে অদুদিয়া মাদ্রাসা কেন্দ্রে গার্ডের দায়িত্ব থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।

প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয়টি অস্বীকার করে অভিযুক্ত ছালেহ আহমদ আনছারী বলেন, তার সুনাম ক্ষুণ্ন করতে কেউ এ ধরনের মিথ্যা অপবাদ ছড়াচ্ছে। মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের ম্যানুয়ালে আছে বলেই কেন্দ্র সচিবের দায়িত্ব পালন করছেন। সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রে সন্তান পরীক্ষা দিলে সে কেন্দ্রে অভিভাবক (পিতা) দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না। তার ছেলে অন্য কেন্দ্রের পরীক্ষার্থী। তারপরও তা গোপন রাখা ঠিক হয়নি। এটা ভুল হয়েছে বলে জানান তিনি।

এদিকে জানতে চাইলে তথ্য গোপন করা মারাত্মক অপরাধ। ভুল স্বীকার কিংবা ক্ষমা চেয়ে পার পাওয়া সম্ভব নয় জানিয়ে জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা উত্তম খিসা বলেন, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার লিখিত পেলেই বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে