দুই বছর পর বিদ্যালয় থেকে বস্তাবন্দি মরদেহ উদ্ধার
গুরুদাসপুরে আতঙ্কে স্কুলে আসছে না শিক্ষার্থীরা
প্রকাশ | ০৬ মার্চ ২০২৪, ০০:০০
গুরুদাসপুর (নাটোর) প্রতিনিধি
নাটোরের গুরুদাসপুরে নিখোঁজের দুই বছর পর মাফিজুল ইসলাম (২৫) নামে এক যুবকের খুনের ঘটনা প্রকাশের পর তার মৃতদেহ উত্তোলন করা হয়। উপজেলার পৌর সদরে অবস্থিত চাঁচকৈড় বালিকা দাখিল মাদ্রাসার টয়লেটের মেঝে ভেঙে মাটি খুঁড়ে পস্নাস্টিকের বস্তাবন্দি অবস্থায় ওই মরদেহ উত্তোলন করা হয়েছিল। মরদেহ উত্তোলনের পর থেকেই বিদ্যালয়ে আসছে না শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে ব্যাপক আতঙ্ক বিরাজ করছে। তবে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও স্থানীয়দের দাবি প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাদ্রাসায় একটি সচেতনতামূলক সেমিনার করা হলে আতঙ্ক কমে যাবে। গত রোববার ওই মাদ্রাসা থেকে মরদেহটি উত্তোলন করা হয়।
পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, ২০২২ সালের ১৭ এপ্রিল থেকে নাটোরের গুরুদাসপুর পৌরসভার খলিফাপাড়া মহলস্নার মাফিজুল ইসলাম (২৫) নিখোঁজ ছিলেন। দুই বছর পর জানা যায় তাকে খুন করা হয়েছে। তার মৃতদেহ উপজেলার চাঁচকৈড় পুরানপাড়া এলাকার একটি বালিকা মাদ্রাসার সেপটিক ট্রাঙ্কের পাশে পুঁতে রাখা হয়। অন্য একটি মামলায় কারাগারে আটক আল হাবিব সরকার (৩৫) নামে এক আসামি জাকির মুন্সি (৪০) নামে তার এক হাজতি বন্ধুর কাছে মফিজুলকে খুন করার গল্প বলেন। ওই হাজতি জামিনে ছাড়া পেয়ে মফিজুলকে খুন করার বিষয়টি নিহতের পরিবারকে জানালে তারা পুলিশের আশ্রয় নেয়। গত শুক্রবার রাতে নিহত মফিজুলের মা মাইনুর বেগম বাদী হয়ে গুরুদাসপুর থানায় হত্যা মামলা করেন। এ ঘটনায় মাদ্রাসার নৈশপ্রহরী আবু তাহের খলিফা (৫৫), তার মেয়ে তানজিলা খাতুন (২৮), স্বামী আল হাবিব সরকার (৩৫) এবং তাদের আত্মীয় আশরাফুল ইসলামকে (৪২) গ্রেপ্তার করের্ যাব ও পুলিশ। পুলিশ অভিযুক্ত তানজিলা ও তার বাবা খলিফাকে আটক করে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকান্ডের ঘটনাটি স্বীকার করেন তারা।
নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী হালিমাতুছ সাদিয়া বলে, 'যেখানে মরদেহ পুঁতে রাখা হয়েছিল, সেই ওয়াশরুম ও টয়লেট আমরা ব্যবহার করতাম। যখন শুনলাম টয়লেটের মেঝের নিচে একজনকে হত্যা করে পুঁতে রাখা হয়েছে, তখনই মনে ভয় ধরে গিয়েছিল। যেখানে আমরা প্রতিদিন যেতাম সেখানেই কিনা এমন ঘটনা। এখন তো বিদ্যালয়ে যেতেও ভয় লাগে। তবে মাদ্রাসায় যেতে এবং ভয় কাটতে আমাদের কিছুদিন সময় লাগবে।'
সহকারী শিক্ষক রিপন আলী জানান, 'মফিজুলের লাশ উত্তোলনের পর থেকেই শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে ব্যাপক আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। এ ঘটনার পর শিক্ষার্থীরা আসছে না। শিক্ষার্থীদের নিয়ে একটি সেমিনার করা হলে উপস্থিতি সংখ্যা বাড়ত।'
মাদ্রাসার সুপার এমদাদুল হক জানালেন, 'আমাদের মাদ্রাসার নৈশপ্রহরী আবু তাহের খলিফা দীর্ঘদিন যাবৎ বিদ্যালয়ে দায়িত্ব পালন করেছেন। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজও পড়তেন। তবে দুই বছর আগে ওই জায়গাটিতে টয়লেট নির্মাণ করা ছিল না। পরবর্তীতে সেখানে টয়লেট নির্মাণ হয়। এমনকি মেঝে ও ওয়াল টাইলস করা হয়েছিল। গত ৩ মার্চ টয়লেটের মেঝের টাইলস ভেঙে মাটি খুঁড়ে বস্তাবন্দি মরদেহ উদ্ধার হয়। পুলিশ ও গণমাধ্যমে জানতে পারলাম আমাদের নৈশপ্রহরী আবু তাহের খলিফা এই হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িত।