হোটেল-রেস্তোরাঁয় ঝুঁকিপূর্ণ সিএনজি গ্যাস ব্যবহার

টাঙ্গাইলে পাঁচ শতাধিক রেস্তোরাঁ ও বহুতল ভবন অগ্নিঝুঁকিতে

প্রকাশ | ০৬ মার্চ ২০২৪, ০০:০০

স্টাফ রিপোর্টার, টাঙ্গাইল
টাঙ্গাইলের বিভিন্ন হোটেল- রেস্তোরাঁসহ বহুতল ভবনে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান -যাযাদি
ঢাকার বেইলি রোডে অগ্নিকান্ডের ঘটনায় হতাহতের পর নড়েচড়ে উঠেছে টাঙ্গাইলের জেলা-উপজেলা প্রশাসন। জেলার বিভিন্ন হোটেল-রেস্তোরাঁসহ বহুতল ভবনগুলোতে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান ও তদারকি জোরদার করা হয়েছে। জেলা রেস্তোরাঁ ও মিষ্টান্ন ব্যবসায়ী মালিক সমিতি সূত্রে জানা গেছে, সমিতির আওতায় জেলা শহরে ১৬০টি রেস্তোরাঁ রয়েছে। এর বাইরেও জেলায় হোটেল-রেস্তোরাঁ আছে চার শতাধিক। সব মিলিয়ে টাঙ্গাইলের পাঁচ শতাধিক হোটেল-রেস্তোরাঁসহ বহুতল ভবনগুলো অগ্নিঝুঁঁকিতে রয়েছে। অধিকাংশ হোটেল-রেস্তোরাঁয় রান্নার কাজে এলপিজি গ্যাসের পরিবর্তে উচ্চ ঝুঁকি সম্পন্ন সিএনজি গ্যাস ব্যবহার করা হচ্ছে। বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার আগেই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছে সচেতন মহল। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, টাঙ্গাইল শহরের অনেক বহুতল বাণিজ্যিক ভবনে হোটেল-রেস্তোরাঁ রয়েছে। অপরিকল্পিতভাবে নির্মাণ করা হচ্ছে বহুতল ভবন। এসব ভবনে পর্যাপ্ত ভেন্টিলেশন ব্যবস্থা নেই। ভবনগুলোতে অবস্থিত রেস্তোরাঁয় উঠানামার জন্য একটা মাত্র সিঁড়ি রয়েছে। অনেক বহুতল ভবনে অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থাসহ ফায়ার সেফটি পস্ন্যানও নেই। শহরের রেস্তোরাঁগুলোতে পর্যাপ্ত ফায়ার এক্সটিংগুইশার নেই। অনেকেই অবৈধ গ্যাস সংযোগ ব্যবহার করছেন। অনেক হোটেল-রেস্তোরাঁয় এলপিজি গ্যাসের পরিবর্তে অত্যধিক ঝুঁকিপূর্ণ সিএনজি গ্যাস ব্যবহার করা হচ্ছে। হোটেল-রেস্তোরাঁগুলোয় যেখানে-সেখানে গ্যাসের বোতল রাখা হচ্ছে। এসব ভবন ও রেস্তোরাঁয় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটলে বাইরে বের হওয়ার তেমন সুযোগ নেই। স্থানীয় কলেজ শিক্ষক মোজাম্মেল হক জানান, বহুতল ভবন ও অভিজাত রেস্তোরাঁ প্রতিষ্ঠা করার আগে মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিতের বিষয়টি গুরুত্ব দেওয়া জরুরি। শহরের অনেক বহুতল ভবন ও হোটেল-রেস্তোরাঁয় অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা নেই। সবাইকে সচেতন হওয়ার পাশাপাশি অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা ও অগ্নি প্রতিরোধকে গুরুত্ব দিতে হবে। টাঙ্গাইল ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের ওয়ারহাউস ইন্সপেক্টর মো. রবিউল আওয়াল জানান, এ পর্যন্ত তার পরিদর্শন করা হোটেল-রেস্তোরাঁগুলোর প্রত্যেকটি অগ্নিনির্বাপণের ক্ষেত্রে ঝুঁকিতে রয়েছে। এছাড়া বহুতল আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবনগুলোও ঝুঁঁকিতে রয়েছে। অনেক ভবনে ফায়ার সার্ভিসের অনুমোদন নেই। অনেক ভবনে একটিমাত্র সিঁড়ি রয়েছে। তিনি আরও জানান, ফায়ার সার্ভিসের অনুমোদন ছাড়া যেসব ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে তাদের সেফটি পস্ন্যানের মাধ্যমে ভবন নির্মাণের জন্য প্রতিনিয়ত নোটিশ দেওয়া হয়। যারা ওই নোটিশ অমান্য করে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। টাঙ্গাইলের ১০তলা কোনো ভবনে আগুন লাগলে তা নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা তাদের নেই। এ বিষয়ে ঢাকায় চাহিদা দেওয়া হয়েছে। টাঙ্গাইল সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার হাসান বিন মুহাম্মদ আলী জানান, জেলা প্রশাসনের নির্দেশে রেস্টুরেন্ট ও বাণিজ্যিক ভবনগুলোতে অগ্নিকান্ড প্রতিরোধ এবং নির্বাপণের যে ব্যবস্থাগুলো রয়েছে সেখানে কোনো ঘাটতি আছে কিনা বা ফায়ার লাইসেন্স রয়েছে কিনা সেসব বিষয় মনিটর করা হচ্ছে। তাদের প্রাথমিকভাবে সতর্ক করার পাশাপাশি ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অর্থদন্ড প্রদান করা হচ্ছে। তিনি জানান, গত সোমবার বিকালে অগ্নিকান্ড প্রতিরোধ ব্যবস্থা পর্যাপ্ত না থাকা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের জন্য ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চালিয়ে চার প্রতিষ্ঠানে এক লাখ ৬৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এর মধ্যে অগ্নিনির্বাপণ ও প্রতিরোধ ব্যবস্থা পর্যাপ্ত না থাকায় শহরের ভিক্টোরিয়া রোডের প্রিন্স আবাসিক হোটেলে ৫০ হাজার, নুরজাহান রেস্টুরেন্টে পাঁচ হাজার, ভিক্টোরিয়া ফুড জোনে এক লাখ ও রূপসী বাংলা রেস্টুরেন্টে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হাসান বিন মুহাম্মদ আলী আরও জানান, শহরের হোটেল-রেস্তোরাঁ ও বহুতল ভবনগুলোতে ফায়ার লাইসেন্স আছে কিনা, ফায়ার ইক্সটিংগুইসার, সিওটু এক্সটিংগুইসার ও সেখানে ফায়ার নির্বাপণ পয়েন্ট এবং ওয়াটার সোর্সের পয়েন্ট আছে কিনা সবই লক্ষ্য করা হচ্ছে। অনেক রেস্টুরেন্টে এলপিজি গ্যাসের পরিবর্তে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ সিএনজি গ্যাস ব্যবহার করা হচ্ছে।