শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১

রাজশাহী শহরের পাঁচ মার্কেট অগ্নিকান্ডের ঝুঁকিতে

রাজশাহী অফিস
  ০৬ মার্চ ২০২৪, ০০:০০
রাজশাহী শহরের অগ্নিঝুঁকিপূর্ণ আর ডি এ মার্কেট -যাযাদি

অগ্নিকান্ডের ঝুঁকিতে রয়েছে রাজশাহী শহরের পাঁচটি মার্কেট। ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে বার বার সতর্ক করা হলেও তা নিয়ে উদাসীন কর্তৃপক্ষ। মার্কেটগুলোর সামনে একাধিকবার সতর্কতামূলক ব্যানার টানানো হলেও রাতারাতি তা উধাও হয়ে যায়। ফলে ব্যবসায়ীদের অসহযোগিতার কারণে ঝুঁকিপূর্ণ মার্কেটগুলো নিয়ে উদ্বিগ্ন ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারাও।

মার্কেট পাঁচটি হলো- নগরীর সাহেব বাজার এলাকার আরডিএ মার্কেট, সমবায় মার্কেট ও কাপড়পট্টি এবং নগরীর ষষ্ঠতলা এলকার নিউমার্কেট, হড়গ্রাম নিউমার্কেট। এর মধ্যে আরডিএ মার্কেট হলো রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (আরডিএ) মালিকানাধীন। সমবায় মার্কেটটি সমবায় বিভাগের। আর কাপড়পট্টি গড়ে উঠেছে সাধারণ ব্যবসায়ীদের দোকানপাট নিয়ে। এছাড়া রাজশাহী নিউমার্কেট ও হড়গ্রাম নিউমার্কেট রাজশাহী সিটি করপোরেশনের।

এ পাঁচ মার্কেটে অগ্নিকান্ড ঘটলে তা নিয়ন্ত্রণে বেগ পেতে হবে বলে জানিয়েছে রাজশাহী ফায়ার সার্ভিস। আশপাশে পানির উৎস না থাকায় মার্কেটগুলো ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে আরডিএ মার্কেট। ঘিঞ্জি এই মার্কেটে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটলে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ঢোকার উপায়ও নেই।

সাহেববাজার এলাকার সড়কটি সম্প্রসারণের সময় ব্যবসায়ীদের উচ্ছেদ করে ১৯৯০ সালে আরডিএ মার্কেটে পুনর্বাসিত করে। তিনতলা এই মার্কেটে ১ হাজার ৯৫২টি দোকান রয়েছে। মার্কেটের তিনপাশেই সরু রাস্তা। ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ঢোকার কোন উপায় নেই। সামনে প্রশস্ত রাস্তা থাকলেও প্রধান ফটকের কারণে মার্কেটের ভেতরে গাড়ি ঢুকতে পারবে না। মার্কেটটিতে মুদি দোকান, খাবারের হোটেল, কাপড়, কসমেটিক্স থেকে ক্রোকারিজ ও ইলেক্ট্রনিক্সের দোকানও রয়েছে। ফলে অগ্নিকান্ডের চরম ঝুঁকি রয়েছে।

গত ৮ জানুয়ারি রাতে মার্কেটের প্রধান ফটক সংলগ্ন বাইরের অংশে একটি মুদি দোকানের দোতলার গুদামে আগুন লাগে। পরে ফায়ার সার্ভিসের ১০টি ইউনিট প্রধান সড়ক থেকে প্রায় দুই ঘণ্টা চেষ্টার পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এই আগুন মূল মার্কেটে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি এবং বহু মানুষের হতাহতের আশঙ্কা ছিল।

অগ্নিকান্ডের চরম ঝুঁকি থাকায় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি কয়েক বছর আগেই আরডিএ মার্কেট ভেঙে ফেলতে সুপারিশ করে। তবে এখনো ভাঙা হয়নি। এ মার্কেটে প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ কেনাকাটা করেন। ঈদের সময় মার্কেটের ভেতরে পা ফেলার জায়গা থাকে না।

সবশেষ গত বছরের ১৭ এপ্রিল আরডিএ মার্কেট, সমবায় মার্কেট ও সাহেববাজার কাপড়পট্টি, রাজশাহী নিউমার্কেট, হড়গ্রাম নিউমার্কেটকে অগ্নিনিরাপত্তায় ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে ব্যানার টানিয়ে দেয় ফায়ার সার্ভিস। ব্যানারে লেখা ছিল, 'অগ্নিনিরাপত্তার দিক থেকে এই মার্কেট খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। সংশ্লিষ্ট সবাইকে সতর্ক হওয়ার জন্য অনুরোধ জানানো হলো।' এছাড়াও সবাইকে সতর্ক থাকার অনুরোধ জানিয়ে মাইকিং করার পাশাপাশি প্রচারপত্রও বিতরণ করা হয়।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের রাজশাহী বিভাগের উপ-পরিচালক ওহিদুল ইসলাম বলেন, 'এসব মার্কেট ঝুঁকিপূর্ণ। সেখানে নিজস্ব অগ্নিনির্বাপণের তেমন ব্যবস্থা নেই। আমরা এ বিষয়ে বারবার চিঠি দিলেও মার্কেট কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিচ্ছে না। আরডিএ মার্কেটের আশপাশে পুকুর নেই। ফলে অগ্নিকান্ড ঘটলে পানির অভাবে আগুন নেভাতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হবে।

তিনি বলেন, 'এই মার্কেটগুলোর সিঁড়িতেও মালামাল রাখা হয়। ফলে আগুনের ঘটনা ঘটলে মানুষ সহজে নামতে পারবেন না। আরডিএ মাকের্টের ভেতরে এলোমেলোভাবে বৈদু্যতিক তার রয়েছে। এসব কারণে মার্কেটগুলো ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়েছে।'

আরডিএর চেয়ারম্যান জিয়াউল হক বলেন, 'মার্কেটের অগ্নিনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সম্প্রতি আমরা প্রায় ২০০টি ফায়ার এক্সট্রিংগুইসার দিয়েছি। পাশ দিয়ে বিদু্যতের লাইন আছে। প্রয়োজনীয় সতর্কতা অবলম্বনের জন্য বিদু্যৎ সরবরাহকারী সংস্থার সঙ্গেও কথা বলেছি। মার্কেটটা ভাঙার পরিকল্পনা আছে।

রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর ইসলাম তুষার বলেন, 'অনেকেই দোকান বরাদ্দ নিয়ে অন্য ব্যবসা শুরু করেন। অবকাঠামোর আকৃতিও পরিবর্তন করে দেন। এক্ষেত্রে ঝুঁকি তৈরি হতে পারে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে