মধ্য বয়সি মনজিনা বেগম। বাড়ি পঞ্চগড় উপজেলার চাকলাহাট ইউনিয়নের সর্দারপাড়া গ্রামে। পাঁচ শতক জমির ওপর টিন-বাঁশের ঘর বানিয়ে বসবাস করছেন স্বামী ওসমান গনি আর একমাত্র মেয়েকে নিয়ে। সংসারের আয়ের একমাত্র উৎস স্বামীর একটি রিকশা-ভ্যান। প্রাত্যহিক আয় দিয়ে সংসারের খরচসহ মেয়ের লেখাপড়ার খরচের সংস্থান হয়। আবাদি কোনো জমি নেই তাদের। তাই বাড়তি কিছু করার সুযোগও নেই। দিন এনে দিন খাওয়া এই সংসারে সহায়তার ইচ্ছে করে মনজিনারও। বাড়িতে গরু-ছাগল আর হাঁস-মুরগি পালন করে বাড়তি আয়ের স্বপ্ন দেখতেন তিনি। তার সহায়তায় এগিয়ে আসে চাকলাহাট ইউনিয়ন সমাজকল্যাণ ফেডারেশন। বাংলাদেশ এনজিও ফাউন্ডেশন-বিএনএফের হতদরিদ্র মহিলাদের ছাগল পালনের মাধ্যমে আর্থসামাজিক উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় গত ২০২০-২১ অর্থবছরের বরাদ্দ থেকে ২৪ জনের মতো মনজিনা বেগমকেও দেয়া হয় দ'টি বকনা ছাগল। ছাগল দেয়ার এক বছরের মধ্যে দুটি ছাগলই দুটি করে বাচ্চা দেয়। এরই মধ্যে তিনটি ছাগল ১২ হাজার টাকায় বিক্রি করে জমানো টাকা যোগ করে ৩০ হাজার টাকায় একটি গরু কিনেন তিনি। কিছুদিনের মধ্যে গরুটির বাছুর হবে। এখন আরও ছয়টি ছাগল আছে। কয়েকটা ছাগল বিক্রি করে আরও একটি গরু কিনবেন তিনি। মনজিনা জানান, 'ছাগলকে ঘাস খাওয়ানোর মতো জায়গা নেই। ২ বা ১টি রেখে বাকি ছাগল বিক্রয় করে আরও একটি গরু কিনবে। বাড়িতে হাঁস-মুরগিও পালছি। সব সময় নিজের কাছে কিছু টাকাও থাকে। পরিবারের প্রয়োজনে নিজেও শরিক হতে পারছি। আমাদের এই সুযোগ করে দিয়েছেন চাকলাহাট ফেডারেশন।'
এ নিয়ে কথা হয় চাকলাহাট ইউনিয়ন সমাজকল্যাণ ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সহিরুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি জানান, 'আরডিআরএস বাংলাদেশের সহায়তায় আমাদের ফেডারেশন প্রতিষ্ঠা হয় ১৯৯২ সালে। সমাজসেবার নিবন্ধনপ্রাপ্ত হই ২০০৪ সালে। শুরু থেকেই আমরা সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে নিয়ে কাজ করছি। আমরা বাংলাদেশ এনজিও ফাউন্ডেশনের আর্থিক সহায়তায় হতদরিদ্র মহিলাদের কর্মসংস্থানে কাজ করে যাচ্ছি।'
তিনি আরও জানান,'এরই অংশ হিসেবে ২০২০-২১ অর্থবছরে ৩৫ জন ও ২০২২-২৩ অর্থবছরে ২৪ জন মহিলাকে বিনামূল্যে দুটি করে ছাগল দিয়েছি। এর আগে বোদা উপজেলা বড়শশি ইউনিয়নের বিলুপ্ত বোদেশ্বরী ছিটমহলের ৬০ জন হতদরিদ্র মহিলাকে একটি করে ছাগল দেয়া হয়েছিল। এই ছাগল পালন করে অনেকেই এখন স্বাবলম্বি।'
সহিরুল ইসলাম বলেন, বিএনএফের বিশেষ বরাদ্দে গত অর্থবছরে দেবীগঞ্জ উপজেলার চিলাহাটী ইউনিয়নের কাজলদিঘী বিলুপ্ত ছিটমহলে ১৪টি পরিবারের মধ্যে বিনামূল্যে একটি করে বকনা গরু প্রদান করা হয়েছে। গবাদিপশু প্রদানের এক বছর পর্যন্ত আমরা চিকিৎসাসেবাসহ নিয়মিত মনিটরিং করে আসছি। এ ছাড়া সদর উপজেলার হাড়িভাসা ইউনিয়নের বিলুপ্ত গারাতি ছিটমহলের হালুয়া পাড়া ও ডাবরভাঙ্গা গ্রামের ২০ জন হতদরিদ্র নারীকে ছয় মাসের প্রশিক্ষণ দিয়ে বিনামূল্যে সেলাই মেশিন প্রদান করেছি। তারা অধিকাংশই এখন নিজের বাড়িতে কাপড় সেলাই করে সংসারে সচ্ছলতা এনেছে।'