সাদা শাড়িতে সেজেছে শজনে গাছ

প্রকাশ | ০৪ মার্চ ২০২৪, ০০:০০

গাংনী (মেহেরপুর) প্রতিনিধি
অত্যন্ত সুস্বাদু ও রোগ প্রতিরোধক সবজিখ্যাত শজনে। বসন্তের শুরুতে মেহেরপুরের গাংনী উপজেলাজুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা শজনে গাছগুলো সাদা ফুলে ফুলে ছেয়ে গেছে। ফুলের পরিমাণ এত বেশি যে, কিছু গাছের পাতা পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে না। মনে হচ্ছে যেন শজনে গাছগুলো সেজেছে সাদা শাড়িতে। এবার গাছে গাছে যে পরিমাণ ফুল এসেছে তাতে প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে এলাকার চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা সম্ভব। শজনে একটি আমিষ জাতীয় সবজি, এর বৈজ্ঞানিক নাম (গড়ৎরহমধ ড়ষবরভবৎধ), শজনে প্রাচীনকাল থেকে গ্রাম বাংলার পাশাপাশি শহরে মানুষের কাছে অতি পরিচিত সুস্বাদু সবজি। সাধারণত মাঘ মাসের শেষ দিকে এবং ফাল্গুনের শুরুতে ফোটে শজনের ফুল। চৈত্রের শুরুতে কচি শজনের ডাঁটা খাওয়ার উপযোগী হলেও আষাঢ় মাস পর্যন্ত পাওয়া যায়। সজনে গাছ সব স্থানে লাগানো যায়, যেমন- রাস্তার পাশ, জমির আইল, পুকুর ডোবার ও বাড়ির আশপাশে পতিত জায়গা এবং সব ধরনের মাটিতে এর চাষ করানো যায়। শজনে পুষ্টিকর খাদ্য হওয়ায় এটি অর্থকরী ফসলও বলা হয়। এটি শুধু সুস্বাদু নয়, এর পাতা, ফল, ছাল থেকে বিভিন্ন ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। সাহারবাটি গ্রামের হোমিও চিকিৎসক মোকাদ্দেসুর রহমান জানান, তার বাড়ির আঙ্গিনা ও জমিতে ২২টি শজনে গাছ আছে। শজনে গাছ থেকে আমরা ডাল সংগ্রহ করে সেই ডাল রোপণ করলে সেখান থেকে নতুন শজনে গাছ হয়ে ওঠে। শুধু শজনে ডাঁটা নয়, এর পাতার অনেক উপকার আছে। গেল মৌসুমে ফুল ঝরে পড়ার পরপরই ২২ হাজার টাকায় সেগুলো বিক্রি করে দেন। প্রতি কেজি শজনে ডাঁটা বিক্রি করা হয়েছিল ৪০০ টাকা থেকে ৪২৫ টাকা দরে। কচি ডাঁটার দাম কিছুটা কম থাকে। পুষ্ট হলে দাম বেশি। একই গ্রামের জাহিরুল ইসলাম জানান, গ্রামের প্রায় প্রতিটি বাড়িতে দু'চারটি শজনে গাছ রয়েছে। একেকটি বয়ষ্ক শজনে গাছ ফুল ফোটা অবস্থায় ৮ থেকে ১০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। তার বাড়িতেও কয়েকটি শজনে গাছ রয়েছে। জোড়পুকুরিয়া গ্রামের কামরুজ্জামান খোকন জানান, তার বাড়ি ও পুকুর পাড়ে ২০টি শজনে গাছ রয়েছে। গাছে প্রচুর ফুল এসেছে। গাছ থেকে যে ডাঁটা আসে তা আমরা বাড়িতে খাই, আত্মীয়স্বজনকে দেই। এটা খেতে খুবই মজাদার। প্রতিবেশীরাও নিয়ে যায়। বাড়ির লোকজন বিক্রি করে। তবে আগামীতে বাণিজ্যিকভাবে শজনে গাছ রোপণ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তিনি। গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) আব্দুল আল মারুফ জানান, শজনে খুব সুন্দর, সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর একটি খাবার। এর পাতাও অত্যন্ত উপকারী। এটি পিত্তথলি, বাতব্যথা, চিকন জ্বর, শরীরের ব্যথাসহ অনেক রোগের ওষুধ হিসেবে কাজ করে। যদি কেউ চিকন জ্বর, পাতলা পায়খানা, কোষ্ঠকাঠিন্য, বুকেব্যথা অনুভব করে, বিশেষ করে ডানদিকের ব্যথা সে ক্ষেত্রে শজনে পাতার রস করে বা সেদ্ধ করে বা তরকারিতে খেলে অনেক উপকার পাওয়া যায়। এটি এজমা এবং হাঁপানিতেও কাজ করে, তাই সব মিলে এটিকে ঔষুধি গাছও বলা যেতে পারে। উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা ইমরান হোসেন জানান, উপজেলায় বাণিজ্যিকভাবে কোনো শজনে বাগান নেই। বাড়ির আশপাশে পুকুর পাড়ে অনাদরে বেড়ে ওঠে এ গাছ। মৌসুমি এই দুই ধরনের শজনে আবাদ হয়ে থাকে। মার্চ থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত এ সময় বাজারে শজনে বেশি পাওয়া যায়। এটি একটি উচ্চমূল্যের ফসল, ও খুব কম যত্নের প্রয়োজন হয়। এটি যদি কোন কৃষক চাষাবাদ করেন তিনি অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবেন। শজনে কে বলা হয় পুষ্টির ডিনামাইট, পাতা থেকে শুরু করে ফল এর প্রত্যেকটি অংশ ব্যবহার করা যায়। কৃষক ভাইদের বাণিজ্যিকভাবে শজনে চাষের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।