দুই মাস বন্ধের পর সুন্দরবনের খুলনা অংশে কাঁকড়া আহরণ শুরু

ইঞ্জিনচালিত নৌযানে পরিবহণের নিষেধাজ্ঞা

প্রকাশ | ০৪ মার্চ ২০২৪, ০০:০০

খুলনা অফিস
খুলনায় দুই মাসের নিষেধাজ্ঞা শেষে আবারও শুরু হয়েছে কাঁকড়া আহরণের জন্য বন বিভাগ থেকে পাস-পারমিট প্রদান। তাই দীর্ঘ সময় অলস বসে থাকার পর সুন্দরবনের নদী ও খালে কাঁকড়া আহরণের জন্য সরঞ্জাম নিয়ে ছুটছেন জেলেরা। শুক্রবার থেকে সুন্দরবনে কাঁকড়া আহরণ শুরু হলেও আহরণের নৌকা ও মালামাল সংগ্রহ এবং প্রস্তুতি নিতে দেরি হওয়ায় শনিবার বিকালে ভাটিতে বনের গহিনে প্রবেশ করতে শুরু করেছেন মোংলা, রামপাল, দাকোপসহ উপকূলীয় অঞ্চলের জেলেরা। পূর্ব সুন্দরবন চাঁদপাই রেঞ্জের তথ্য অনুযায়ী- সুন্দরবনের ৬ হাজার ১৭ বর্গকিলোমিটার বাংলাদেশ অংশে জলভাগের পরিমাণ একহাজার ৮৭৪ দশমিক এক বর্গকিলোমিটার। যা পুরো সুন্দরবনের আয়তনের ৩১ দশমিক ১৫ শতাংশ। জলভাগে ছোট-বড় মিলিয়ে ৪৫০টি নদ-নদী ও খাল আছে। এসব খালে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ছাড়াও ১৪ প্রজাতির কাঁকড়া রয়েছে। জানুয়ারি ও ফেব্রম্নয়ারি দুই মাস কাঁকড়ার প্রজনন মৌসুম। তাই ৫৯ দিনের জন্য জেলেদের সুন্দরবনে প্রবেশ করে কাঁকড়া ধরার অনুমতি বন্ধ রাখে বন বিভাগ। করমজল বন্যপ্রাণী ও ইকোটু্যরিজম কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আজাদ কবির জানান, সুন্দরবনের মধ্যে অভয়ারণ্য ঘোষিত ৩০টি খাল এবং ২৫ ফুটের কম প্রশস্ত খালে সারা বছরই কাঁকড়া ধরা নিষিদ্ধ থাকে। বাকি অংশের নদী ও খালে বন বিভাগের বৈধ পাস-পারমিটধারী প্রায় ১৫ হাজার জেলে শুধু কাঁকড়া আহরণ করে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করেন। ১৯৯৮ সালে কাঁকড়া রপ্তানি নীতিমালা প্রণয়নের পর থেকেই প্রতি বছর দুই মাস কাঁকড়া ধরার পাস-পারমিট বন্ধ রাখা হয়। কাঁকড়া আহরণকারী মোংলার জয়মনি এলাকার আনিছুর রহমান জানান, আর্থিকভাবে সচ্ছল কোনো লোক সুন্দরবনে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাঁকড়া ধরতে যান না। যারা যান, তারা প্রায় সবাই দরিদ্র। দুই মাস নিষেধাজ্ঞা চলাকালে দরিদ্র জেলেদের চরম দুর্দিন গেছে। বন্ধের দিনগুলোয় সরকারি কোনো ভাতার ব্যবস্থা না থাকায় মানবেতর জীবনযাপন করতে হয়েছে তাদের। শুক্রবার সকালে কাঁকড়া ধরার অনুমতি পেয়ে তারা আশার আলো দেখছেন। একই এলাকার ছগির মোলস্না জানান, সংসারে সাতজন সদস্য। সুন্দরবনে একদিন না গেলে তার চুলা জ্বলে না। দুই মাসের কাঁকড়া আহরণ বন্ধে দিনমজুরি করে কোনোমতে সংসার চালিয়েছেন। মহাজনের কাছ থেকেও ধার নিয়ে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক মিহির কুমার দে বলেন, বংশবৃদ্ধির লক্ষ্যে সুন্দরবনে বিভিন্ন নদী-খালে দুই মাস জেলেদের কাঁকড়া আহরণ নিষিদ্ধ ছিল। ১ মার্চ থেকে বন বিভাগের অনুমতি নিয়ে জেলেরা প্রবেশ নিষিদ্ধ অভয়াশ্রম ছাড়া অন্য নদী-খালে কাঁকড়া আহরণ করতে পারবেন। তবে কেউ যাতে সুন্দরবনে কাঁকড়া ধরার অনুমতি নিয়ে বেআইনি কর্মকান্ডে জড়িত হতে না পারেন, সেজন্য বনরক্ষীদের স্পার্ট পেট্রোলিং টহল ও অন্য কার্যক্রম জোরদার করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে ইঞ্জিন চালিত কোনো নৌকা বা ট্রলার কাঁকড়া পরিবহণের ক্ষেত্রে কঠোর নির্দেশনা রয়েছে।