বৃষ্টি এলেই পড়ে পানি, কষ্টে বসবাস আশ্রয়ণ প্রকল্পের জরাজীর্ণ ঘরে
প্রকাশ | ০৪ মার্চ ২০২৪, ০০:০০
দুর্গাপুর (নেত্রকোনা) প্রতিনিধি
ঘরের টিনের চাল মরিচা ধরে জরাজীর্ণ হয়ে বৃষ্টির পানি পড়ে ভিতরে, চারপাশের বেড়া ও দরজা-জানালাগুলো ভাঙাচোরা। বৃষ্টির পানি ঠেকাতে দেওয়া হয়েছে পলিথিন ও কম্বলের ছাউনি। একই অবস্থা শৌচাগারের। এমনই জরাজীর্ণ ও বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে নেত্রকোনার দুর্গাপুর পৌর শহরের দক্ষিণপাড়া এলাকার দুটি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরগুলো।
প্রায় একযুগ ধরে মেরামত না করায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরগুলোর এই করুণ দশা। ফলে বাসিন্দাদের কষ্টে দিন কাটছে। বাসিন্দাদের দাবি, এবারের বর্ষার আগেই ঘরগুলো মেরামত করে দিলে তারা নিশ্চিন্তে বসবাস করতে পারবেন।
সূত্র জানায়, দুর্গাপুর পৌর শহরের দক্ষিণপাড়া এলাকায় খাসজমির ওপর ২০০৮ সালে ছিন্নমূল ও হতদরিদ্র ৪৫০ পরিবারের জন্য 'সুসং আশ্রয়ণ প্রকল্প' নির্মিত হয়। পরে ২০১১ সালে আরও ২০০ পরিবারের জন্য 'দক্ষিণপাড়া আশ্রয়ণ প্রকল্প' নামে নির্মিত হয়। সেগুলোতে বসবাস শুরু করে পরিবারগুলো। এরপরে গত এক যুগের মধ্যে কোনো সময় মেরামত করা হয়নি। ফলে দিনদিন নষ্ট হতে থাকে ঘরগুলো। বর্তমানে সুসং আশ্রয়ণ প্রকল্পের প্রায় সব ঘরই বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, সারি সারি টিনের ঘর। প্রতিটি পরিবারের জন্য রয়েছে পৃথক কক্ষ। তবে মরিচা পড়ে নষ্ট হয়ে গেছে ঘরের টিনের বেড়া ও চাল। কিছু ঘরে চাল একদমই নেই। কঙ্কালের মতো দাঁড়িয়ে আছে কাঠামো। এসব ঘরে কোনো মানুষও নেই। বাকি জরাজীর্ণ ঘরে বাস করছে পরিবারগুলো।
প্রকল্পের সামনে পৌঁছাতেই ছুটে আসেন সেখানকার বাসিন্দারা। তারা জানান, বর্ষা মৌসুমের বৃষ্টিতে ঘরে পানি পড়ে। তাই চালের ওপর পলিথিন বা কম্বল দিয়ে রেখেছেন। বর্তমানে যে অবস্থা তাদের বসবাস করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
তারা আরও বলেন, টিউবওয়েল সবই বিকল হয়ে পড়েছে। তবে বাসিন্দারা নিজেদের উদ্যোগে বেশকিছু টিউবওয়েল বসালেও তা পর্যাপ্ত নয় বলে জানান তারা। পরিবারগুলোর জন্য একটি নির্দিষ্ট স্থানে শৌচাগার ব্যবস্থা থাকলেও তা ব্যবহারের অনুপযোগী। তাই প্রতিটি পরিবারকে রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে।
আশ্রয়ণ প্রকল্পে বসবাসকারী আলামিন মিয়া, হারেজ মিয়া, আব্দুল জলিল ও রহিমা খাতুন বলেন- তাদের ঘরগুলোর অবস্থা খুবই খারাপ। চালে মরিচা পড়ে টিন নষ্ট হয়ে গেছে। বৃষ্টি হলেই সেগুলো দিয়ে পানি পড়ে। দরজা-জানালাগুলো ভেঙে গেছে। নির্মাণের পর ঘরগুলো মেরামত করা হয়নি। এ কারণে ঘরগুলো বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
নাহার বেগম বলেন, টিনের চালা ও দেওয়ালের টিনে মরিচা ধরেছে। বর্ষার সময় ঘরে বৃষ্টির পানি পড়ে। এ কারণে তিনি পলিথিন ও কম্বল দিয়ে রেখেছেন। জরিনা বেগম বলেন, শৌচাগারগুলোও ব্যবহার করা যায় না। গরিব মানুষ বলে অবহেলায় পড়ে আছি।
এ নিয়ে সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিল ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মতিউর রহমান বলেন, 'এমপি মোস্তাক আহমেদ রুহীর হাত ধরেই তৈরি হয়েছিল ছিন্নমূল মানুষের মাথা গোঁজার ঠাঁই। তিনি এমপি থাকাকালে এগুলোর যত্ন ছিল। কিন্তু ২০১৫ সালের পরে এগুলোর উন্নয়ন হয়নি। বর্তমানে ঘরগুলোর খুবই বেহাল দশা। মানুষের কষ্ট লাঘবে কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে এমনটাই আমরা আশাবাদী।'
এ ব্যাপারে দুর্গাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এম রকিবুল হাসান জানান, এ বিষয়ে অবগত নন। তবে খোঁজ নেবেন তিনি।