চাঁদপুরে সাত বছরেও শেষ হয়নি ৪৪ কোটি টাকার সেতুর কাজ
প্রকাশ | ০৪ মার্চ ২০২৪, ০০:০০
চাঁদপুর প্রতিনিধি
চাঁদপুরের হাজীগঞ্জের হাজীগঞ্জ পৌরসভার টোরাগড় হয়ে হাজীগঞ্জ বড়কুল ফেরিঘাট-বড়কুল ইউনিয়ন সেতুর নির্মাণ কাজের উদ্বোধন হয় ২০১৭ সালের ১৪ মে। ২০১৮ সালের ২০ জুলাই সেতু নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও সেই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান একাধিকবার কাজের সময় বাড়িয়ে মূল সেতু নির্মাণ কাজ শেষ করে। মূল সেতু নির্মাণ কাজ শেষ হয়ে পড়ে রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে। অ্যাপ্রোস সড়কের জন্য জমি অধিগ্রহণ করে সব মিলিয়ে ৪৪ কোটি টাকা ব্যয় করে। তবু নানা জটিলতার কারণে গত ৭ বছরে সেতুটি জনগণের চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া সম্ভব হয়নি। সেতুর দক্ষিণ পাড়ের অ্যাপ্রোস সড়ক নির্মাণ কাজ পুরোপুরি শেষ হওয়ার পরেও উত্তর পাড়ের অ্যাপ্রোস সড়ক নির্মাণ না হওয়ার কারণে এলাকার কয়েক হাজার মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
উপজেলা এলজিইডি কার্যালয় সূত্র জানায়, হাজীগঞ্জ বড়কুল ফেরিঘাট-বড়কুল সেতুটি ডাকাতিয়ার ওপর নির্মাণ কাজ শুরু করে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলডিইডি)। সেতু নির্মাণ কাজের মূল ব্যয় ধরা হয়েছে ২২ কোটি ৪৯ লাখ ১৪ হাজার ৬৭ পয়সা। পরে ব্যয় কমিয়ে তা ১৭ কোটিতে আনা হয়।
উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে নির্মাণকারী দীর্ঘ সেতুটি ৮১০ মিটার চেইনেজে ডাকাতিয়া নদীর ওপর ২৬৬.৩০ (সংশোধিত ২৫০. ২০ মিটার) দীর্ঘ সেতু নির্মাণ প্রকল্প যার প্যকেজ পিডি/ সিএলবিইউইউআরপি/ডবিস্নউ ১৮৯.০০ দৈর্ঘ্য ২৫০.২০ মিটার (৮২০) ফুট ১১ ইঞ্চি। মূল সেতুর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সুরমা/আরবিএল (জয়ন্টে ভেঞ্চার)। তবে মূল সেতুর কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়ে গেছে।
হাজীগঞ্জ পাইলট হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজের পূর্ব পাশের সড়ক ধরে টোরাগড় হয়ে বড়কুল পূর্ব ইউনিয়নে ডাকাতিয়া নদীর ওপর নির্মিত সেতুটি খুলে দেওয়া হলে বড়কুল পূর্ব ইউনিয়ন, ৯নং গর্ন্ধব্যপুর উত্তর ইউনিয়ন, ১০নং গর্ন্ধব্যপুর দক্ষিণ ইউনিয়ন হয়ে লক্ষ্ণীপুর জেলার রামগঞ্জ উপজেলায় চলাচলকারী হাজার হাজার স্থানীয় বাসিন্দাদের চলাচলের পথ অর্ধেকটা কমে যাবে।
বর্তমানে সেতুর নিচ দিয়ে প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষকে নৌকায় খেয়াঘাট ব্যবহার করতে হচ্ছে। সেতুটি খুলে দেওয়া হলে খেয়াঘাটটি বন্ধ হয়ে যাবে।
উপজেলা এলজিইডি কার্যালয় সূত্র আরও জানায়, সেতুটির কাজ করতে তিন বরাদ্দ আনতে হয়েছে। এর মধ্যে মূল সেতু ১৭ কোটি টাকা, ভায়াডাক্ট (মূল সেতুর সঙ্গের অ্যাপ্রোস সড়ক) ২১ কোটি টাকা ও অ্যাপ্রোস সড়ক ৬ কোটি টাকা মিলিয়ে মোট ৪৬ কোটি টাকার কাজ শেষ করতে হচ্ছে সেতুটি। মূল সেতুর সঙ্গে দক্ষিণ পাড়ের অ্যাপ্রোচ সড়ক নির্মাণ শেষ হলেও উত্তর পাড় তথা টোরাগড় গ্রাম পৌর এলাকা হওয়ায় এখানকার জমির মালিক অধিগ্রহণের টাকা না পাওয়া পর্যন্ত অ্যাপ্রোচ কাজে বাধা প্রদান করেন। বর্তমানে জমি অধিগ্রহণের টাকা পরিশোধ শেষে পুনরায় কাজ শুরু হয়েছে। বর্তমানে সেতুর মোট কাজের ৮৫% সম্পন্ন হয়েছে। শুধুমাত্র টোরাগড় অংশের অ্যাপ্রোচ অংশের কাজ হলে সেতুটি জনসাধারণের খুলে দেওয়ার কথা জানায় এলজিইডি।
স্থানীয় টোরাগড় গ্রামের আবুল কাশেম পাটোয়ারী (৭৫) জানান, গত ৬-৭ বছর ধরে সেতুর কাজ চলছেই। শেষ আর হচ্ছে না। সেতুর কাজ শেষ হলে নদীর উভয় পাড়ের সবার উপকার হতো।
বড়কুল গ্রামের শীল বাড়ির মনা শীল, শিকদার বাড়ির মজিবুর রহমান জানান, 'সেতুটির কাজ শেষ না হওয়াতে আমরা কি যে বিপদে আছি বলে বুঝাতে পারব না। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে আর রোগী নিয়ে রাতের বেলা খেয়াঘাটে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। চলাচলের জন্য খুলে দিলে স্থানীয় বাসিন্দারা উপকৃত হতাম।
এ বিষয়ে হাজীগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) রেজওয়ানুর রহমান জানান, প্রায় তিন দফায় সড়ক নির্মাণ কাজ শেষ করতে হচ্ছে। সেতুর উত্তর পাশের অংশের জমি অধিগ্রহণ জটিলতায় এতদিন অ্যাপ্রোচ সড়কের কাজ আটকে ছিল। সর্বশেষ স্থানীয় সংসদ সদস্য মেজর অব রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম, জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার উদ্যোগে জমি অধিগ্রহণের টাকা পরিশোধ করে আমরা অ্যাপ্রোচ সড়ক নির্মাণ কাজ শুরু করেছি। আশা করি, ৩০ জুনের মধ্যে জনগণের জন্য সেতুটি খুলে দেওয়া হবে।