ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলার শতাধিক বছরের জামিয়া আরাবিয়া আশরাফুল উলুম বালিয়া ঐতিহাসিক কওমি মাদ্রাসার মুহতামিমের বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। প্রায় কোটি টাকার অনিয়মের অভিযোগ মাদ্রাসার শুরা কমিটির কাছে লিখিতভাবে জানান প্রতিষ্ঠানটির ৪৮ জন শিক্ষক। তবে এসব অভিযোগ তদন্ত না করেই পুনরায় দ্বিতীয়বারের মতো মাওলানা ওয়াইজ উদ্দিনকে মুহতামিম হিসেবে নিয়োগ করার অভিযোগ রয়েছে। এ নিয়ে মাদ্রাসার শত শত ছাত্র ও শিক্ষকরা বিক্ষোভ করেছেন।
বালিয়া মাদ্রাসা সূত্রে জানা যায়, ২০২১ সালে এ মাদ্রাসার নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে প্রভাবশালী মহলের সহায়তায় মুহতামিম হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় মাওলানা ওয়াইজ উদ্দিনকে। গত ২৮ ফেব্রম্নয়ারি আবারও মুহতামিম হিসেবে দ্বিতীয়বারের মতো তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়।
জানা যায়, আরও প্রায় দুই মাস চাকরির মেয়াদ থাকলেও দুর্নীতির অভিযোগ উঠায় তড়িঘড়ি করে তাকে নিয়োগ দেয় শুরা কমিটি। এর আগে প্রায় কোটি টাকা আত্মসাৎ করার বিষয়টি সরেজমিন তদন্ত করে একটি লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয় মাদ্রাসার মজলিস শুরা কমিটির কাছে। মাদ্রাসার ৪৮ জন শিক্ষক মাওলানা ওয়াইজ উদ্দিনের বিরুদ্ধে এসব অনিয়মের লিখিত অভিযোগ তুলে ধরেন।
অভিযোগ থেকে জানা যায়, মাদ্রাসার নামে রশিদ ছাড়াই টাকা তোলেন তিনি। ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে বিদু্যৎ বিলের টাকা অগ্রিম নেওয়া হলেও সময়মতো পরিশোধ করা হয় না। পরবর্তীতে জরিমানা দিয়ে পরিশোধ করা হয়। পাওনাদারের টাকা ফেরত না দিয়ে তালবাহানা করেন। মাদ্রাসার টাকা ব্যাংকে জমা না দিয়ে ব্যক্তিগত কাজে খরচ করেন। মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে ফলের বাগান করে কয়েক লাখ টাকা খরচ দেখান। শিক্ষকদের মাসের পর মাস বেতন দেওয়া হয় না। রেজিস্টারে রশিদ বহি ছাপার সঠিক তথ্য না থাকায়, মাদ্রাসার টাকা নিজ ব্যবসার কাজে লাগান। প্রায় ২৯টি বিষয়ে বিভিন্ন দুর্নীতিসহ অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া যায় মুহতামিমের নামে।
এ ব্যাপারে মাদ্রাসা শুরা কমিটির সহসভাপতি ইকরাম তালুকদার বলেন, 'শুরা কমিটির গঠনতন্ত্রের নিয়ম অনুযায়ী মাওলানা ওয়াইজ উদ্দিনের চাকরির মেয়াদ আবার পাঁচ বছরের জন্য বর্ধিত করা হয়েছে। অনিয়মের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তারা অভিযোগপত্র নিয়মতান্ত্রিকভাবে দেননি। নিয়মতান্ত্রিক অভিযোগ হলে সেটা আমরা তদন্ত কমিটি গঠন করে থাকি। তারপরও বিষয়টি দেখব। আমার জানামতে কোনো অনিয়ম নেই।'
শুরা কমিটির সাবেক সদস্য আমির উদ্দিন তালুকদার বলেন, 'বর্তমানে অবৈধ পকেট শুরা কমিটি মাওলানা ওয়াইজ উদ্দিনকে অনিয়মভাবে মুহতামিম পদে নিয়োগ দিয়ে ঐতিহ্যবাহী এই মাদ্রাসাকে ধ্বংসের শেষপ্রান্তে পৌঁছে দিয়েছে। এই মুহতামিমের নামে পদ্মা ব্যাংকে ৭-৮ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ রয়েছে এবং কোটি কোটি টাকার সুদের ব্যবসা রয়েছে যা শরীয়ত পরিপন্থি।'
বালিয়া মাদ্রাসার সিনিয়র শিক্ষক মাওলানা মোখলেছুর রহমান মন্ডল বলেন, 'অভিযোগের সত্যতা আমাদের কাছে আছে। বড় হুজুর পীরে কামেল মাওলানা এমদাদুল হকের সঙ্গে মতবিনিময় করে ৪৮ শিক্ষকের সাক্ষরে এ অভিযোগ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। শুরা কমিটি তাদের স্বার্থে আমাদের দরখাস্ত বাতিল বলে তদন্ত না করে মুহতামিম সাহেবকে বহাল রেখেছে।'
এ ব্যাপারে বালিয়া মাদ্রাসার মুহতামিম মাওলানা ওয়াইজ উদ্দিন বলেন, 'আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ ভিত্তিহীন ও বানোয়াট। সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও বর্তমান স্থানীয় সংসদ সদস্য শরীফ আহমেদ বা তার লোকজন সবকিছু দেখে আমাকে যোগ্য ব্যক্তি মনে করেন। আমি আমার যোগ্যতায় সুন্দরভাবে এই তিন বছর মাদ্রাসা পরিচালনা করেছি। তবে আমার এজেন্সির নামে পদ্মা ব্যাংকে একটা লোন রয়েছে।'