নওগাঁয় দুধের দাম বাড়লেও খুশি নন খামারিরা
মিলি লিটারে বেচাকেনা দাবি
প্রকাশ | ০২ মার্চ ২০২৪, ০০:০০
ইউসুফ আলী সুমন, বরেন্দ্র অঞ্চল (নওগাঁ)
দেশের সীমান্তবর্তী বরেন্দ্র অঞ্চলের জেলা নওগাঁয় পবিত্র রমজানকে সামনে রেখে বাড়ছে দুধের দাম। লিটারপ্রতি বেড়েছে ৫-৭ টাকা। বর্তমানে প্রতিলিটার দুধ বিক্রি হচ্ছে ৫৫-৬০ টাকা। দাম বাড়লেও সন্তুষ্ট নয় খামারিরা। তারা বলছেন, দানাদার খাবারের দাম বেশি হওয়ায় তেমন লাভবান হতে পারছেন না। এদিকে নিয়ম অনুযায়ী মিলিলিটারে বেচাকেনা না হয়ে বাংলা পরিমাপ (সের) হিসেবে দুধ বিক্রি হওয়ায় সঠিক পরিমাপ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন ক্রেতারা। সঠিক মাপে দুধ বেচাকেনার দাবি জানিয়েছেন ভোক্তারা।
নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের তথ্যমতে, উপজেলার ১০টি ইউনিয়নে গাভীর খামার রয়েছে ৪৯টি। বাৎসরিক দুধ উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা দশমিক ২৭ লাখ মেট্রিক টন। এর বিপরীতে উৎপাদন হয় দশমিক ৩১ লাখ মেট্রিক টন। মহাদেবপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাক্তার আব্দুল মালেক বলেন, বর্তমানে দুধের দাম কিছুটা বেড়েছে। খামারি বা কৃষকরা দুধ সের হিসেবে বিক্রি করে আসছে। যা মিলিলিটার থেকে প্রায় ৩০ মিলিলিটার কম। ইতোপূর্বে কয়েকবার খামারিদের মিলিলিটার হিসেবে বিক্রি করতে সচেতনতামূলক প্রচার করা হয়েছে। তবে শিগগিরই বিষয়টি নিয়ে তারা মাঠে নামবেন বলে নিশ্চিত করেছেন তিনি।
মহাদেবপুর উপজেলা সদরে প্রতিদিন দুইবার করে দুধের বাজার বসে। সকাল ৭টা থেকে বেলা ১০টা পর্যন্ত বকচত্বর মোড়ে এবং বিকাল ৩টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের সামনে। সকালে দুধের সরবরাহ বেশি থাকায় বর্তমান বাজারে প্রতি সের দুধ ৫৫-৬০ টাকায় বিক্রি হয়। এই বাজারে সকালে ৪০-৫০ মণ দুধের সরবরাহ হচ্ছে। ২০-২৫ জন ব্যবসায়ী দুধ কিনে থাকেন। পাশাপাশি অনেকেই বাসাবাড়িতে খাবার জন্য কিনে থাকেন। সকালে প্রতিদিন প্রায় লক্ষাধিক টাকার দুধ বেচাকেনা হয়ে থাকে। বিকালে দুধের সরবরাহ কম হওয়ায় প্রতিসের দুধ ৭০-৮০ টাকায় বিক্রি হয়। এতে প্রায় ৫০-৬০ হাজার টাকার দুধ বেচাকেনা হয়। তবে সামনে রমজান মাস সে সময় প্রায় ৮০-৯০ টাকা সের পর্যন্ত বিক্রি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এসব দুধ ব্যবসায়ীর হাত ধরে চলে যায় বিভিন্ন মিষ্টান্নের দোকানে। দুধ থেকে ছানা উৎপাদনের পর তা থেকে বিভিন্ন প্রকার মিষ্টি, দই ও সন্দেশ তৈরি হয়।
ক্রেতা ও ভোক্তারা জানান, দুধ একমাত্র পণ্য যা এখন পর্যন্ত বাংলা ওজন (সের) হিসেবে বিক্রি হয়। এতে ওজনে কম হয়। তবে দুধের ওজন লিটারে চালু করা প্রয়োজন। এতে বিক্রেতা ও ভোক্তা দুইজনের সুবিধা হবে।
মধুবন গ্রামের কৃষক সামছুল হক বলেন, তিনটি গাভীর মধ্যে গত ৮ মাস থেকে একটি গাভী দুধ দিচ্ছে। প্রতিদিন প্রায় ১৮ সের দুধ দেয়। তার মধ্যে সকালে ১১ সের হয়। গত কয়েকদিন থেকে ৬০ টাকা সের বিক্রি হচ্ছে। দাম কিছুটা বেড়েছে। তবে গরুর খাবারে প্রতিদিন খরচ হয় প্রায় ২৫০ টাকা। দানাদার খাবারের পাশাপাশি খড় ও সবুজ ঘাস দেওয়া হয়। ৮ মাস আগে দুধের দাম ছিল ৪০ টাকা। সামনে রমজান মাস চাহিদা বাড়ায় দাম বেড়েছে।
তিনি বলেন, বাংলা ওজন সের হিসেবে দুধ বিক্রি করা হয়। যদি লিটারে বিক্রি করতে হয় পরিমাপে বেশি লাগবে। কিন্তু লিটারে বিক্রি করলে তো দাম বেশি পাওয়া যাবে না।
উপজেলার উত্তরগ্রাম গ্রামের কৃষক আজিজুল হক বলেন, একটি গাভী থেকে দিনে প্রায় ১৪ সের দুধ পাওয়া যায়। এর মধ্যে সকালে ৯ সের হয়। দুধ বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা সের। যেখানে দিনে গাভীর প্রতি খরচ হয় ২৫০-৩০০ টাকা। বর্তমানে ভুসি ৫০ টাকা ও দানাদার খাবার ৫২ টাকায় কিনতে হচ্ছে। দুধের দাম ৮০ টাকা সের হলে কিছুটা লাভবান হওয়া যাবে। শুধু রমজানের সময় দাম পেলে হবে না। সারাবছরই দাম থাকতে হবে।