বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪, ৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

মই বেয়ে উঠতে হয় ৬৫ কোটি টাকার সেতুতে!

চাঁদপুর প্রতিনিধি
  ০২ মার্চ ২০২৪, ০০:০০
চাঁদপুরে ৬৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন 'ভাষাবীর এম এ ওয়াদুদ' সেতুতে উঠতে হচ্ছে মই বেয়ে -যাযাদি

তিন ধাপে সময় বৃদ্ধির পরও সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কাজে ধীরগতি ও সময়মতো সেতু নির্মাণ করতে না পারায় যাতায়াতে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন স্থানীয়রা। বাধ্য হয়ে মই বেয়ে উঠতে হচ্ছে ৬৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন ওই সেতুতে।

মই বেয়ে সেতুতে উঠছেন, এ দৃশ্য কাল্পনিক ও অবাস্তব মনে হলেও চাঁদপুরে ভাষাবীর এম এ ওয়াদুদ সেতুর বর্তমান চিত্র এটি। সেতুর ফরিদগঞ্জ অংশের শেষ ভায়াডাক্টের ঢালাইয়ের কাজ সম্পন্ন না হওয়ায় সেতু পারাপারে যাত্রীদের ভরসা এখন মই।

দেখা যায়, সেতুর চাঁদপুর সদর অংশের ভায়াডাক্টের কাজ শেষে সংযোগ সড়ক সম্পন্ন হয়েছে। কিন্তু রেলিংয়ের কাজ হয়নি। অন্যদিকে ফরিদগঞ্জ অংশে শেষ ভায়াডাক্টের রড বাঁধাই হলেও ঢালাই না হওয়ায় সড়কের সঙ্গে সংযোগ হয়নি। ফলে সেতুটি ব্যবহার করা যাত্রীদের মই বেয়ে সেতুতে ওঠে তারপর গাড়িতে চড়তে হচ্ছে।

জানা যায়, ২০১৭ সালের ১১ ফেব্রম্নয়ারি সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী, শিক্ষা মন্ত্রী ও বর্তমান সমাজকল্যাণ মন্ত্রী ডা. দিপু মনি এবং চাঁদপুর-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য প্রয়াত ডক্টর মোহাম্মদ শামছুল হক ভূঁঁইয়া যৌথভাবে ডাকাতিয়া নদীর ওপর ২৭৪.২০ মিটার দৈর্ঘ্যের এ সেতুটির ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন।

গত বছর সেতুটির চাঁদপুর সদর অংশের কাজ শেষে উদ্বোধনের পর সেতুটি ব্যবহার শুরু করেন ডাকাতিয়া নদীর দুই পাড়ের মানুষ। সিএনজি, অটোরিকশা ও মোটর সাইকেল নিয়ে সেতুটির এক পাড়ের যাত্রীরা ওপরে উঠতে পারলেও ফরিদগঞ্জ অংশ থেকে সেতুতে ওঠা যায় না। ওই প্রান্ত থেকে সেতুতে উঠতে হলে মই ছাড়া উপায় নেই।

জানা যায়, প্রথম ধাপে ৩৬ কোটি ৮৬ লাখ টাকা ব্যয়ে ঢাকার প্রথম শ্রেণির ঠিকাদার নবারণ ট্রেডার্স লি. সেতুটির মূল কাজ সম্পন্ন করে। ২০২০-২১ অর্থবছরে ২৮ কোটি ৯৫ লাখ ৮২ হাজার ৮৫৪ টাকা বরাদ্দে দ্বিতীয় ধাপের কাজ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রিজভী কনস্ট্রাকশন ও ইউনুছ আল মামুন (জেবি) যৌথভাবে শুরু করে। নির্মাণকাজের মেয়াদ ডিসেম্বর ২০২১ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও পরবর্তী সময়ে তা ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়। পরে ওই সময় ডিসেম্বর পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হলেও এখন পর্যন্ত শেষ হয়নি নির্মাণ কাজ।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর থেকে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে তাগাদা দিয়ে সময় বেঁধে দিলেও নির্ধারিত সময়ে কাজই শেষ করতে পারেনি তারা।

এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গেছে স্ত্রী সন্তান নিয়ে মই বেয়ে সেতুতে ওঠা আলাউদ্দিন, শহিদ হোসেন ও ইব্রাহিম হোসেনসহ বেশ কিছু বাসিন্দাকে। মই বেয়ে উঠতে গিয়ে ইতোমধ্যে নারীসহ বেশ কয়েকজন গুরুতর আহত হয়েছেন বলেও জানান তারা।

স্থানীয়রা জানায়, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই সেতুর নির্মাণ কাজ বন্ধ হয়ে যায়। এছাড়া নিবার্চনের পর চুরির ঘটনাকে কেন্দ্র করে এখানে ঝামেলা হয়। ঠিকাদারের লোক ও অবৈধ সুবিধাভোগীদের কারণে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

সেতুর নির্মাণ কাজ দেখাশুনার দায়িত্বে থাকা এলজিইডির উপ-সহকারী প্রকৌশলী আইউব খান জানান, জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং পরবর্তীতে চুরির ঘটনাকে কেন্দ্র করে অস্থিরতা তৈরি হওয়ায় শেষের দিকে এসে কাজ থমকে গেছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কিছু বিল ছাড়া হলে তাদেরকে দিয়ে বাকি কাজ শেষ করানো সম্ভব হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে