বাঁচার আকুতি জানিয়ে কথা বলতে বলতেই মারা যান রকি

চাকরি নিয়েছিলেন দু'মাস আগে

প্রকাশ | ০২ মার্চ ২০২৪, ০০:০০

মিলন রহমান, যশোর
বেইলি রোডের অগ্নিকান্ডে নিহত যশোরের কামরুল হাবিব রকির বাড়িতে শোকের মাতম, শোকে কাতর ছোট ভাই -যাযাদি
বাঁচার আকুতি জানিয়ে ভিডিওকলে কথা বলতে বলতেই মারা যান কামরুল হাবিব রকি। ঢাকার বেইলি রোডের আগুনে পুড়ে শেষ হয়ে যায় তার স্বপ্ন। চাকরি করে পরিবারের হাল ধরতে মাত্র দু'মাস আগে কাচ্চি ভাই রেস্টুরেন্টে চাকরি নেন যশোরের কামরুল হাবিব রকি (২১)। কর্মরত ছিলেন ঢাকার বেইলি রোডের কাচ্চিভাই রেস্টুরেন্টে। তিনি যশোর সদর উপজেলার ধোপাখোলা গ্রামের কবির হোসেনের ছেলে। গত বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকার বেইলি রোডে আগুন লাগলে তার মধ্যে আটকা পড়ে মারা যান রকি। দু'মাস আগে বাড়ি থেকে ঢাকায় গিয়েছিলেন চাকরির জন্য। বাড়ি ফিরলেন লাশ হয়ে। তাই শোকের মাতম চলছে সদর উপজেলার ধোপাখোলা গ্রামের বাড়িতে। শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে তার লাশ পৌঁছায় গ্রামের বাড়িতে। তার মৃতু্য সংবাদে স্বজন, প্রতিবেশিরা ভিড় করেন একনজর দেখার জন্য। তাদের আহাজারি, কান্নায় গোটা এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। নিহত রকির মামা জিহাদ হোসেন বলেন, 'বৃহস্পতিবার রাতে রকির ম্যাসেঞ্জারে ভিডিও কল দিয়েছি, সে রিসিভ করেনি। পরে আমাকে কল ব্যাক করে বাঁচানোর আকুতি জানায়। আমাকে বলে মামা আমাদের ব্রাঞ্চে (কাচ্চিভাই বেইলি রোড শাখা) আগুন লাগছে। আমি আটকা পড়েছি। আমাকে বাঁচাও। কিছুক্ষণ পর কল কেটে যায়। আমি ৯৯৯ নম্বরে কল দিয়ে বিষয়টি জানাই। তারা জানায় উদ্ধার কাজ চলছে, ধৈর্য ধরুন। এরপর আমি ঢাকায় রওনা হই। সেখানে হাসপাতালে পাই রকিকে। ততক্ষণে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়েছে।' তিনি বলেন, 'আমিই রকিকে ঢাকায় নিয়ে গিয়েছিলাম। ওর চাকরির পর আমিই ঢাকা চিনিয়েছি। গত ডিসেম্বরে রকি চাকরিতে ঢুকেছে। আজ ওর লাশ নিয়ে বাড়ি ফিরলাম।' নিহত রকির ভাই কামরান হোসেন সাজিম বলেন, তার ভাই আলিম পাস করে গত ডিসেম্বর মাসে কাচ্চিভাই রেস্টুরেন্টে ক্যাশিয়ার পদে চাকরি নেন। বৃহস্পতিবার সেখানে কর্মরত অবস্থায় আগুন লাগে। তিনি ভবনের ভেতরে আটকা পড়েন। তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়ার সময় মারা যান। আগুনের ধোঁয়ায় দম বন্ধ হয়েই তার মৃতু্য হয়েছে। শুক্রবার সকালে তার মরদেহ বাড়িতে এসেছে। কামরান হোসেন সাজিম বলেন, 'আমাদের তিন ভাইয়ের মধ্যে রকি সবার বড়। পরিবারের বড় ছেলে হিসেবে চাকরি করে সংসারের হাল ধরেছিল। বাবা ইজিবাইক চালিয়ে সংসার চালান। তাদের দু'জনের আয়ে আমাদের সংসার চলত। ভাইকে এভাবে হারাতে হবে কখনো কল্পনাই করিনি।' এদিকে, নিহত রকির বাড়িতে শোকের মাতম চলছে। স্বজনদের আহাজারিতে চারপাশ ভারি হয়ে উঠেছে। প্রতিবেশীরাও রকির স্মৃতিচারণ করে দীর্ঘশ্বাস ফেলছেন। স্বজনদের সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা হারিয়ে ফেলেছেন তারা। রকির মা রিপা বেগম ও বাবা কবির হোসেন সন্তানের শোক বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন। শুধু সন্তানের জন্য মাতম করছেন তারা।