'এখন গ্রামাঞ্চলের প্রত্যেক বাড়িতে মর্টার হয়ে গেছে। মানুষ সব কাজ এখন মর্টারের পানিতেই করে। পুকুরে কেউ আর গোসল করতে যায় না। তাই পুকুরে কারো কোনো জিনিসও হারায় না। আমাদেরও আর দরকার লাগে না। আজ হোক, কাল হোক এই পেশাটা একদিন বিলুপ্ত হয়ে যাবে ভাই।'
এমন আক্ষেপ করে কথাগুলো বলছিলেন রিপন মিয়া। পেশায় বেদে হলেও তিনি গ্রামে গ্রামে ঘুরে পুকুরে হারানো বিভিন্ন জিনিসপত্র খুঁজে দেন। আর বিভিন্ন রকম তাবিজ বিক্রি করেন। নিয়ামতপুর উপজেলার চৌরাপাড়া এলাকায় তার সঙ্গে কথা হয়। রিপন মিয়ার বাড়ি ঢাকার সাভারে। তারা বহর নিয়ে তাঁবু গেড়েছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার চৌডালা এলাকায়। তিনি জানালেন, বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে মানুষের পুকুরে হারিয়ে যাওয়া বিভিন্ন জিনিসপত্র খুঁজে দেন। আর তাবিজ, নজরকাঠি, বাতের চুড়ি, কড মাছের কাঁটা, ঝুনঝুনি বিক্রি করেন।
আরও জানালেন, 'এটা আমার বাপ-দাদার পেশা। বংশ পরম্পরায় তাই আমিও এই পেশায় আছি। আমার দাদা বেদে বহরের সর্দার ছিলেন। বাবা এখন সর্দার। বাবার পরে আমি সর্দার হব। তবে আমার ছেলেমেয়েরা এই পেশায় থাকবে কিনা বলতে পারছি না।'
আলাপচারিতায় জানা গেল, তারা গত একমাস আগে চৌডালাতে এসেছেন। থাকবেন আরও ১৫দিন। তারপর আবার চলে যাবেন অন্য কোনো এলাকায়। এভাবে ছয় মাস দেশের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে বেড়ান তারা। বাকি ছয়মাস বাড়িতে থাকেন। তখন আর তাবিজ কবজ বিক্রি করেন না। তাদের বহরে ১৫ পরিবারের প্রায় ৮০ জন সদস্য রয়েছে। তাদের সবাই কাজ করেন। কেউ সাপ ধরেন, কেউ সাপ খেলা দেখান। মেয়েরা গ্রামে গ্রামে ঘুরে সিংগা লাগান, ঝাড়-ফুঁক দেন, তাবিজ বিক্রি করেন।
তবে আক্ষেপ করে বললেন, 'নতুন প্রজন্ম আর এই পেশায় আসতে চাচ্ছে না। তারা বাপ-দাদার এই পেশা ছেড়ে অন্য পেশা বেছে নিচ্ছে। তাছাড়া লোকজন আগের চাইতে অনেক সচেতন হয়ে গেছে। তাবিজ-কবজ, ঝাড়-ফুঁকে কম বিশ্বাস করে। এখন আমাদের দিন চলাই খুব কষ্টকর হয়ে গেছে। এখন পর্যন্ত কোনো রোজগার হয়নি। মনে হয় খালি হাতেই ফিরতে হবে।' এই বলে আবার বেরিয়ে পড়লেন রিপন মিয়া।