জলবায়ু ঝুঁকিতে খুলনার পাইকগাছার বোয়ালিয়া বীজ উৎপাদন খামারে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ব্যাহত হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে খামারের বেশকিছু জায়গায় রোপণকৃত ধানের পাতা লাল রংয়ে বিবর্ণ হয়ে শুকিয়ে যাচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দুশ্চিন্তার কারণ নেই। লবণাক্ততার প্রাদুর্ভাব ও স্যালো পানিতে আয়রণ থাকায় শিকড়ে কালো আস্তরণ পড়ে ধানের এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। গ্যাব ফিলিং পদ্ধতিতে নতুন চারা লাগানোর তথ্য দিয়ে ফার্মের উপ-সহকারী পরিচালক আশ্বস্ত করেছেন। বলছেন- অনুখাদ্য ও জিপসাম ব্যবহার ও পরিচর্যার ফলে দ্রম্নত রোপণকৃত ধানে সতেজতা ফিরে আসবে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের বোয়ালিয়া বীজ উৎপাদন খামারস্থ বোরো মৌসুমে ৫৫ একর প্রোগ্রামে ব্রি-৬৭ জাত ৪০ একর ও ব্রি-৮৯ জাত-১৫ একর জমিতে বোরো ধান লাগানো হয়েছে। তবে বেশকিছু জায়গায় ধানের পাতা লাল বর্ণ হয়ে শুকিয়ে যাচ্ছে। এমনকি অনেক স্থানে চারা মারাও যাচ্ছে। এ অবস্থায় কর্তৃপক্ষ যথেষ্ট দুশ্চিন্তায় পড়লেও শেষ পর্যন্ত বীজ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছানোর সম্ভাবনার কথা বলেছেন।
খামার বিভাগের অধীনে দেশের ২৪টি বীজ উৎপাদন খামারের মধ্যে খুলনা বিভাগে রয়েছে ৯টি। এর মধ্যে একমাত্র উপকূলবর্তী কপোতাক্ষ নদ ঘেঁষা পাইকগাছার বোয়ালিয়া বীজ উৎপাদন খামারটি খারাপ অবস্থানে।
প্রাকৃতিক দুর্যোগে ঝুঁকি, অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, ক্ষরা, প্রয়োজনীয় কৃষি সরঞ্জামের ঘাটতিসহ নানা কারণে আমন ও বোরো মৌসুমে বীজ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে হিমশিম খেতে হয় কর্তৃপক্ষকে। চলতি বোরো মৌসুমে বীজ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫৯ মে. টন। এর মধ্য ব্রি-৮৯ একর প্রতি ২ হাজার কেজি ও ব্রি-৬৭ একর প্রতি ১৪৭৫ কেজি। কর্তৃপক্ষ বলছেন, ফার্মে প্রয়োজনীয় কৃষি যন্ত্রপাতির ঘাটতি রয়েছে, দুটি পাওয়ারটিলার ও দুটি ট্রাকটরের মধ্যে একটি করে সচল আছে। একটি পুরাতন মডেলের হার্বেস্টার (ধান কাটার) মেশিন আছে। ফার্ম কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও জনবল ঘাটতি পূরণে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পত্র পাঠালে তারা এসব সমস্যা সমধানের কথা দিয়েছেন।
জনবল বাড়ানো ও কৃষি সরঞ্জামের তাগিদ দিয়ে বোয়ালিয়া বীজ উৎপাদন খামারের সহকারী পরিচালক কৃষিবিদ নাহিদুল ইসলাম বলেন, জলবায়ুর পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে গত একদশকে উপকূলীয় এ ফার্মটিতে বীজ উৎপাদন চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। আমন ও বোরো মৌসুমে ঘন-ঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা ঝড়ে ফলন মুখে ধানের রেনু ঝড়ে পড়ে, বিধায় বীজে চিটে হয়। অন্যদিকে লবণাক্ততা, অতিবৃষ্টি-অনাবৃষ্টি ও ক্ষরা, মাটির স্বাস্থ্যহীনতা, খামারের স্যালোর পানিতে আয়রনসহ নানা কারনে উৎপাদন টার্গেট পূরণে ব্যাহত হয়। চলতি মৌসুমের বোরো ধান কাটার পর মাটির পরিচর্যা ও সবুজ সার তৈরি করে মাটির গুণগতমান বৃদ্ধি করার মাধ্যমে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে সক্ষমতার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।