সীতাকুন্ডে পাহাড়ের ঢালে বিষমুক্ত বেগুন আবাদে লাভবান কৃষক
প্রকাশ | ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
শেখ সালাউদ্দিন, সীতাকুন্ড (চট্টগ্রাম)
প্রথম অবস্থায় বাজার দর ভালো থাকায় চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড উপজেলার ভাটিয়ারী ইউনিয়নের পাহাড়ের পাদদেশে সু-স্বাদু উত্তরা জাতের বেগুন আবাদে এবার আর্থিকভাবে অনেক লাভবান হয়েছেন কৃষক মো. শিবলু। তিনি উপজেলার ভাটিয়ারী ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের জাহানাবাদ খাদেম পাড়া গ্রামের প্রবীণ কৃষক ফরিদুল আলমের ছেলে। চলতি বছর তিনি পাহাড়ের পাদদেশে নতুন প্রজাতির সু-স্বাদু সবজি উত্তরা জাতের বেগুন চাষ করেন।
এ বেগুনের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অন্যান্য বেগুন থেকে অনেকটা বেশি। পোকার আক্রমণ নেই বললে চলে। তাই এ প্রজাতির বেগুনের উৎপাদনও ভালো হয়। সে কারণেই কৃষক শিবলুর মতো এ অঞ্চলের আরও অন্যান্য কৃষক কৃষানি উত্তরা জাতের বেগুন চাষ করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন।
এদিকে কৃষক মো. শিবলু জানান, এ এলাকার পাহাড়ের পাদদেশে তারা বংশানুক্রমেই বিভিন্ন প্রজাতির সবজি আবাদ করে আসছেন। ছোটবেলা থেকে বাবার সঙ্গে থেকে সবজি আবাদের বিষয়ে জানতে ও বুঝতে পেরেছেন। তিনি বলেন, পাহাড়ের মাটি প্রচুর উর্বর, তাই সবজি আবাদে তেমন সারও দিতে হয় না। যে কোনো সবজি এখানে ভালো জন্মে। চলতি মৌসুমে পাহাড়ের ঢালুতে ১৪২ শতক জমিতে উত্তরা জাতের বেগুনের চাষ করেন। কৃষি অফিসের পরামর্শে এবং এ বস্নকে দায়িত্বে থাকা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা শিরিন আক্তারও বিষমুক্ত সবজি ও কীটনাশক ছাড়াই বিভিন্ন সবজি চাষে উদ্বুদ্ধ করছেন। ফসলে পোকা দমনেও নতুন প্রযুক্তি ফেরোমন ফাঁদ ও হলুদ টেপ ব্যবহার করা হচ্ছে।
এ এলাকার কৃষক মো. ইসমাইল, মো. সফি, মো. শাহ্ আলম, মহিউদ্দিন, শাহাবুদ্দিনসহ প্রায় ৫০ জন কৃষক পাহাড়ের ঢালুতে বেগুন চাষ করেছেন। তবে গত বছর এ উত্তরা জাতের বেগুনের আবাদ করেছিলেন মাত্র ২০-২৫ জন। বর্তমানে তা বেড়ে ৫০ জন কৃষক এ উত্তরা জাতের বেগুনের আবাদ করেছেন। বেগুন আবাদে লাভবান হওয়ায় দিন দিন বাড়ছে কৃষকের সংখ্যাও। অল্পদিনে মাত্র দেড় থেকে দুই মাসেই গাছে বেগুন ধরা শুরু করে।
শিবলু বলেন, শ্রমিক ও বাঁশের কঞ্চিসহ সব মিলিয়ে তার খরচ হয়েছে আনুমানিক দেড় লাখ টাকা। প্রথম অবস্থায় বাজারদর ভালো ছিল। তখন বিভিন্ন হাঁট বাজারে পাইকারিতে কেজি ৫০ টাকা করে বেগুন বিক্রি করেছেন। বর্তমানে কেজি বিক্রি করছি ২০ থেকে ২৫ টাকা। বাজার দর এ অবস্থায় থাকলে আরও ৩ লাখ টাকার বেগুন বিক্রি করতে পারবেন বলে তার আশা।
জাহানাবাদ বস্নক খাদেম পাড়ার দায়িত্বে থাকা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা শিরিন আক্তার বলেন, এ এলাকার পাহাড়ের পাদদেশে শুধু খাদেম পাড়ায় ৫০ জন কৃষক বাণিজ্যিকভাবে বেগুনের চাষ করেছেন এবার। সে হিসাবে কৃষক শিবলুও চলতি বছরে উত্তরা জাতের বেগুন চাষ করে আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছেন। উপজেলা কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে কৃষকদের আর্থিক ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতা করা হচ্ছে।
উপজেলা কৃষি অফিসার মো. হাবিবুলস্নাহ বলেন, ভাটিয়ারী ইউনিয়নের জাহানাবাদ খাদেমপাড়া এলাকার কৃষক শিবলু সুস্বাদু উত্তরা জাতের বেগুন চাষ করে অনেক লাভবান হয়েছেন। বেগুনসহ বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষে সফলতা অর্জন করছেন এখানকার কৃষি পরিবারগুলো। বেগুন চাষে বাজার জাতের মধ্যদিয়ে অধিক হারে লাভবান হচ্ছেন কৃষক। উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ১৮০ শতক জমিতে ১ হাজার ৪৪০ জন কৃষক উত্তরা জাতের বেগুনসহ বিভিন্ন জাতের বেগুনের আবাদ করেছেন। উপজেলার পৌরসভাসহ প্রতিটি ইউনিয়নে কৃষকদের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা নিয়মিত পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন।