দাম বাড়ায় ক্ষেত থেকে পেঁয়াজ চুরি হওয়ায় রাতে পাহারা দিচ্ছেন পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার কৃষকরা। গত শুক্রবার রাতে সরেজমিন ভবানীপুর গ্রামে দেখা যায় পেঁয়াজ পাহারার জন্য ক্ষেতের পাশে কুঁড়েঘর তুলেছেন কয়েকজন। তিন-চারজন করে বসে আড্ডা দিয়ে রাত জেগে পাহারা দিচ্ছেন পেঁয়াজ।
জানা যায়, সাঁথিয়া উপজেলার হাটবাজারে মূলকাটা পেঁয়াজ গত এক সপ্তাহ ধরে প্রতি মণ ৪ থেকে সাড়ে ৪ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। হালি পেঁয়াজও উঠতে শুরু হয়েছে। ভরা মৌসুমে এই অস্বাভাবিক দামের কারণে মাঝেমধ্যেই রাতের অন্ধকারে ক্ষেত থেকে চুরি হচ্ছে পেঁয়াজ। চুরি ঠেকাতে রাত জেগে লাঠিসোঁটা নিয়ে পাহারা দিচ্ছেন উপজেলার কৃষকরা। কোনো কোনো পেঁয়াজ চাষি আবার চোরের ভয়ে পুষ্ট হওয়ার আগেই ক্ষেত থেকে পেঁয়াজ তুলে বিক্রি করছেন। প্রতি কেজি পেঁয়াজ পাইকারি ১০০ থেকে ১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় এবার ১৭ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে ১৬০০ হেক্টর জমিতে আবাদ করা হয়েছে আগাম বা মুড়িকাটা জাতের পেঁয়াজ। বাকি সাড়ে ১৫ হাজার হেক্টর জমিতে হালি জাতের পেঁয়াজ আবাদ করা হয়েছে।
কয়েকটি গ্রাম ঘুরে জানা যায়, গত ১১ ফেব্রম্নয়ারি বেড়ার জোরদহ গ্রামের ইসাক হাজীর খাকছাড়া গ্রামের আইয়ুব আলীর ক্ষেত থেকে পেঁয়াজ চুরি হয়েছে। সাঁথিয়ার পুন্ডুরিয়া গ্রামের হাবুল মানিক মন্টু এক সপ্তাহে ইমদাদুল হকসহ প্রায় ১০ জন কৃষকের ক্ষেতের তিন থেকে চার মণ পেঁয়াজ চুরি হয়ে গেছে।
শিগগিরই সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও থানায় অবহিত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সাঁথিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নুসরাত কবির।
কৃষকরা জানান, একজন আধাঘণ্টা পেঁয়াজ তুললে এক থেকে দেড় মণ পেঁয়াজ তুলতে পারেন। তাই সুযোগমতো দুই-তিনজন চোর এসে ১০ থেকে ১৫ মিনিটের মধ্যেই দুই-তিন মণ পেঁয়াজ তুলে নিয়ে যাচ্ছে।
চাকলা গ্রামের কৃষক সাইফুল মোলস্না বলেন, অনেক গ্রামেই পেঁয়াজ চুরি হওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে। চুরির ভয়ে তারা সবাই রাতে পেঁয়াজ পাহারা দিচ্ছেন। দাম বেশি তাই, কাঁচা পেঁয়াজ তুলে বিক্রি করছেন।
সাঁথিয়ার পুন্ডুরিযা গ্রামের আরেক পেঁয়াজ চাষি খালেক ব্যাপারী বলেন, ভালো দামের কারণে পেঁয়াজের ক্ষেতে চোরের উৎপাত খুব বেড়েছে।
চাকলা-পুন্ডুরিয়া গ্রাম ছাড়াও উপজেলার আফড়া, বায়া, শহীদনগরসহ বেশ কিছু গ্রামে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, চোরের ভয়ে পেঁয়াজের ক্ষেতের পাশে বসানো হয়েছে অস্থায়ী ছাউনি। রাতে কৃষকরা সেখানে বসে পেঁয়াজ পাহারা দেন।
পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাসুদ আলম জানান, পেঁয়াজ চাষি ভলেন্টিয়ারদের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করবেন।