শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১

বেদখল হয়েছে গাংনীর স্টুয়ার্ড খাল

গাংনী (মেহেরপুর) প্রতিনিধি
  ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
বেদখল হয়েছে গাংনীর স্টুয়ার্ড খাল

মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার স্টুয়ার্ড খাল দখল হয়েছে অনেক আগেই। খালের দু'ধারের জমির মালিকদের ভোগ দখলে আকার আকৃতির পরিবর্তন হয়েছে। এখন খালের বুক চীরে তৈরি হয়েছে অসংখ্য পুকুর। ফলে এর নামধাম ভুলতে শুরু করেছে নতুন প্রজন্ম। খাল উদ্ধারে প্রশাসনের কোনো হস্তক্ষেপ নেই বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। তবে খাল উদ্ধার ও অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে পদক্ষেপ নেবেন বলে জানালেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিষ্ণুপদ পাল।

জানা গেছে, গাংনী উপজেলার মহব্বতপুর গ্রাম থেকে শুরু করে ভোমরদহ গ্রাম পর্যন্ত প্রায় ৬ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে খালের বুকে শুধুই পুকুর। সেখানে মাছ চাষ করা হচ্ছে। খালের দু'পাশের জমির মালিকরা প্রথমে পুকুর খনন করেন। তাদের দেখাদেখি এলাকার প্রভাবশালীসহ বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ খাল দখল করে পুকুর খনন শুরু করেন। পুরো এলাকাজুড়ে পুকুর খননের কারণে খালের পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়ে খালটি মরে গেছে। পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় বর্ষা মৌসুমে খালের উপরিভাগের আবাদি জমি জলাবদ্ধতায় পরিণত হয়।

জনশ্রম্নতি রয়েছে, ঐতিহাসিক ভাটপাড়া নীলকুঠির সর্বশেষ ম্যানেজার ইংরেজ শাসক জন স্টুয়ার্ড এই খাল পুনর্খননের কাজ করেন বলেই একে স্টুয়ার্ড খাল বলা হয়। সিন্দুরকৌটা গ্রামের পাশে (খলিশাকুন্ডির সন্নিকটে) মাথাভাঙ্গা নদীতে খালটি উৎপন্ন হয়ে কামারখালী, বাদিয়াপাড়া-মহব্বতুপুর, তেরাইল, দুর্লভপুর, ভোমরদহ ও হিজলবাড়ীয়া গ্রাম হয়ে ভাটপাড়ার পাশের কাজলা নদীতে গিয়ে মিশেছে। ব্রিটিশ বেনীয়াদের প্রধান নীল উৎপাদন কেন্দ্র ভাটপাড়া নীলকুঠির সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনের জন্য ইংরেজ শাসক খাল পুনর্খনন করেছিলেন। নীল পরিবহণের স্বার্থেই এ উদ্যোগ নেওয়া হয়। এখন নীল চাষও নেই, স্র্রোতঃস্বিনী খালও নেই, কিন্তু জন স্টুয়ার্ডের নামটি জানেন এলাকার বয়োবৃদ্ধরা।

তেরাইল গ্রামের বাসিন্দা বামন্দী ইউপি সদস্য মিলন হোসেন বলেন, 'আমরা ছোটবেলায় এই খালে প্রচুর মাছ ধরেছি। স্রোতের টানে খালের এপার-ওপার যাওয়া খুব বিপজ্জনক ছিল। খালটির প্রস্থ অনেক চওড়া। কিন্তু আজ এমনভাবে জবর-দখল করা হয়েছে তাতে খালের কোনো অস্তিত্ব নেই। এখন শুধুই পুকুর আর পুকুর। ফলে বর্ষার সময় পুকুর ভাটিয়ে পানি বের হতে পারে না।' অবৈধ দখলদার উচ্ছেদে প্রশাসনের নীরব ভূমিকার তীব্র সমালোচনাও করেন তিনি।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, স্টুয়ার্ড খালে পুকুর খননের কারণে আশপাশের মাঠগুলোতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। বর্ষাকালে মাঠের নিচু জমিতে আগের মতো চাষাবাদ হচ্ছে না। প্রতি বর্ষা মৌসুমে ক্ষতিগ্রস্ত কিছু চাষি এ নিয়ে প্রতিবাদ জানালেও তাদের পাশে কেউ দাঁড়ায় না। ফলে দখলকারীদের দৌরাত্ম্যই প্রতিষ্ঠা হচ্ছে। গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রীতম সাহা জানান, বিষয়টি খতিয়ে দেখে খালের জমি উদ্ধারের চেষ্টা করা হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে