লংগদুতে অবৈধ করাতকলের ছড়াছড়ি, নির্বিকার প্রশাসন

প্রকাশ | ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০

লংগদু (রাঙামাটি) প্রতিনিধি
নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে যত্রতত্র গড়ে উঠেছে অবৈধ করাতকল। রাস্তার আশেপাশেসহ বিভিন্ন জনসমাগম এলাকায় গড়ে উঠছে এই করাতকল। এগুলোতে নির্বিচারে কাটা হচ্ছে অনেক গাছ। রাতে কিংবা দিনে নিয়ন্ত্রণহীনভাবে চলছে কাঠ চেরাই। এতে দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। এসব মিলের নেই কোন সরকারি অনুমতিপত্র কিংবা লাইসেন্স। উপজেলার উল্টাছড়ি বনবিভাগে বিভিন্ন ব্যস্ততম সড়ক ঘেঁষে জনবসতি স্থানে অবৈধভাবে ১৭টি করাতকল ও পাবলাখালী বনবিভাগের সীমানায় ১৩টিসহ মোট ৩০টি করাতকল গড়ে উঠেছে। এছাড়াও উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় আরো কয়েকটি অবৈধ করাতকল চালু হচ্ছে বলে জানা গেছে। আইন অমান্য করে গড়ে ওঠা এসব করাতকল গত কয়েক বছরে উচ্ছেদ করা হয়নি বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। অনুসন্ধানে জানা যায়, বনবিভাগের নীতিমালায় (সংরক্ষিত আইন) করাতকল (লাইসেন্স) বিধিমালা ২০১২ এর ৭ ধারা অনুযায়ী সংরক্ষিত, রক্ষিত, অর্পিত ও অন্য যেকোনো ধরনের সরকারী বনভূমি ও আন্তর্জাতিক স্থল সীমানার ১০ কিলোমিটারের মধ্যে কোনো সরকারি অফিস-আদালত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, বিনোদন পার্ক, উদ্যানে করাতকল স্থাপন ও পরিচালনা করা যাবে না। অথচ এখানে লাইসেন্সবিহীন করাতকল গুলো সরকারি বনভূমির একেবারে কাছাকাছি স্থাপন করা হয়েছে। বন্ধ হচ্ছেনা করাতকলের ধ্বংসযজ্ঞ। নীতিমালা ভেঙে এসব অবৈধ করাতকলে গভীর রাতে বিভিন্ন বন থেকে পাচার হয়ে আসা বিভিন্ন প্রকারের সরকার নিষিদ্ধ গাছ ভোর রাতে চেরাই করে চালাচ্ছে জমজমাট ব্যবসা। এতে হুমকির মুখে পড়েছে পার্বত্যাঞ্চলের বনজসম্পদ। আর এসব থেকে সরকার হারাচ্ছে বিপুল পরিমানের রাজস্ব। সরেজমিন দেখা গেছে, করাতকল বিধিমালা ২০১২ এর ৭ নম্বর ধারার পুরোপুরি লঙ্ঘন করে স্থাপিত ও পরিচালিত হচ্ছে উপজেলার আটারকছড়া ইউনিয়নের ডাঙ্গাবাজার সেতুসংলগ্ন যুবলীগ নেতা হাফিজুল ইসলাম মনির ও শহর আলীর যৌথ অবৈধ করাতকল। মনির ইউনিয়ন আওয়ামী যুবলীগের সাধারণ সম্পাদকের পদে রয়েছেন বলে জানা গেছে। করাতকলের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হচ্ছে উল্টাছড়ি বন বিভাগের আওতাধীন রিজার্ভের। পাশাপাশি স্থানীয় কৃষি ও ফলজ ভূমিসহ জমবসতির। তথ্যে জানা গেছে, প্রতিটি করাতকলে ৯০ শতাংশ রিজার্ভ ফরেস্টের গাছ চিরাই হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, বন বিভাগের এক শ্রেণির অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মাসোয়ারা আদায় করছেন ওইসব মিল মালিকদের কাছ থেকে। এতে করে সরকার হারাচ্ছে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ব্যক্তি বলেন, রাস্তার পাশে করাতকল থাকায় স্কুলগামী শিক্ষার্থীদের স্কুলে আসতে সমস্যা হয়। যখন করাতকল চলে, তখন শব্দ দূষণসহ কাঠেরগুড়া বাতাসে ছড়িয়ে নিঃশ্বাসের সঙ্গে নাকের ভেতর দিয়ে মানব শরীরে প্রবেশ করে। এতে মানুষের শরীরের ব্যাপক ক্ষতি হয়। যানবাহনের চালক ও পথচারীদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। জনবসতিপূর্ণ এলাকায় করাতকল থাকায় পরিবেশেরও মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। উপজেলার একাধিক করাতকল মালিকের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, এ উপজেলাতে করাতকলের জন্য কোনো লাইসেন্স দেয়না কর্তৃপক্ষ। বৈধ অনুমতি না থাকলেও সরকার নিষিদ্ধ কোন প্রকার গাছ কাটায় না বলে দাবি করে তারা। ডাঙ্গা বাজারে সদ্য গড়ে ওঠা করাতকল মালিক মনির বলেন, অনুমতিপত্র পাওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আবেদন করে তার করাতকলের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। তবে অনুমতিপত্র না পাওয়া গেলে বাকিগুলো যেভাবে চলবে তারটাও একই ভাবে চলবে বলে জানান। মাসিক মোটা অঙ্কের মাসোয়ারার কথা অস্বীকার করে উল্টাছড়ি বন কর্মকর্তা মাহাবুব উল আলম বলেন, মিল মালিকদের থেকে মাসোহারা নেওয়ার কথা ভিত্তিহীন দাবি করে বলেন- অবৈধ স'মিলগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছে। ইতোমধ্যে কয়েকটি করাতকলে অভিযান পরিচালনা করে ম্যাজিস্ট্রেট জরিমানা করেছেন। দ্রম্নত এসব অবৈধ করাতকল উচ্ছেদের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।