বুধবার, ০২ অক্টোবর ২০২৪, ১৮ আশ্বিন ১৪৩১

ভালো নেই গাংনীর মৃৎশিল্পীরা

মজনুর রহমান আকাশ, গাংনী (মেহেরপুর)
  ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
মেহেরপুরের গাংনীতে মাটির তৈরি সামগ্রী রোদে শুকাচ্ছেন মৃৎশিল্পীরা -যাযাদি

কঠোর পরিশ্রম আর নিপুণ হাতের ছোঁয়ায় মাটির তৈরি জিনিসপত্রে নিপুণতার ছাপ ও সৌন্দর্য থাকলেও মলিন পোশাক ও রোগব্যাধির ফলে দ্রম্নত আসা বার্ধক্য একটা মলিন আবরণ ফেলে দিয়েছে গাংনীর আমতৈল কুমোরদের জীবনে। দিনরাত পরিশ্রম করেও দারিদ্র্যের কষাঘাত থেকে মুক্ত হতে পারছে না তারা। অভাব যেন হা করে আসছে ওদের গিলে খেতে। কঠোর পরিশ্রমে চলে এদের সংসার। একদিকে মাটি ও আনুষঙ্গিক জিনিসের দাম বেড়েছে অন্যদিকে পস্নাস্টিকের চমকপ্রদ দ্রব্যাদির চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় নিপুণ শিল্পকর্ম খচিত মাটির জিনিসের কদর কমে গেছে। তার পরও নিজেদের জীবন-জীবিকার তাগিদে কোনো রকমে এ পেশায় নিয়োজিত রয়েছেন তারা।

মেহেরপুর জেলার গাংনী উপজেলা শহর থেকে ৮ কিলোমিটার দূরে আমতৈল গ্রাম। গ্রামের ২৭টি কারখানায় শতাধিক পরিবারের লোকজন মৃৎশিল্পের সঙ্গে জড়িত। নারী-পুরুষ সবারই কাদামাটির গন্ধমাখা শরীর। এদের নিপুণ হাতের শিল্পকর্মে তকতকে কাদামাটি হয়ে ওঠে নিত্যব্যবহার্য বাসনপত্র, নানা দেব-দেবীর মূর্তি। ফুলের টব, নান্দা, খেলনাসহ কারুকাজ করা শোপিস তৈরি করে বিক্রি করতেন এ পেশায় নিয়োজিতরা। এনামেল ও পস্নাস্টিকের তৈরি জিনিসের কদর বেড়ে যাওয়ায় মাটির তৈরি জিনিসের এখন আর সেই কদর নেই। এখন পয়ঃনিষ্কাশনের জন্য তৈরি করা হচ্ছে মাটির পাট বা সস্নাব।

পালপাড়ার জগন্নাথ পালের স্ত্রী সুমিতা (৫৮) জানান, 'কিশোর বয়সে মনের অজান্তেই মা-বাবার দেখা দেখিতে এই কুমোর জীবনে জড়িয়ে গেছি। রাতদিন কাদামাটির কাজ করে যেন হয়ে গেছি মাটির মানুষ। সংসারে রয়েছে ৬ মেয়ে ২ ছেলে। জমি জিরাত নেই। এ কাজ করে যা আয় হয় তা দিয়ে সংসারের ব্যয় নির্বাহ হয় না। তার পরও বাধ্য হয়ে এ পেশায় নিয়োজিত।'

কর্ণপালের ছেলে মঙ্গল কুমোর জানালেন, আগে মাঠ থেকে মাটি সংগ্রহ করা যেত। এখন তা সম্ভব হচ্ছে না। মাটির দাম বেড়েছে। আগে এক ট্রলি মাটির দাম ছিল ২০০ টাকা। এখন তা বেড়ে হয়েছে ১৫০০ টাকা। বছর খানেক আগে এক ট্রলি খড়ির (জ্বালানি) দাম ছিল ৫০০ টাকা এখন সেই খড়ি বা জ্বালানির দাম ১০০০ টাকা। মণপ্রতি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরির ঝুট কিনতে হচ্ছে ৬০০ টাকায়। অন্যান্য জিনিসের দাম বাড়লেও মাটির তৈরি জিনিসের দাম বাড়েনি। তারপরও পৈতৃক পেশা টিকিয়ে রাখতে এটিকে ছাড়তে পারেননি।

মৃৎশিল্পের অন্যতম ব্যবসায়ী জমসেদ আলী জানান, 'অনেক মৃৎশিল্পীর নিজস্ব জমি নেই। কারখানার মালামাল তৈরি ও চুলার জন্য জমি লিজ নিতে হয়। এক বিঘা জমি লিজ নিতে বাৎসরিক ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকা দিতে হয়। বছরের মাত্র ৮ থেকে ৯ মাস চলে এ ব্যবসা। অনেক কুমোর বিভিন্ন সমিতি থেকে ঋণ নিয়ে মৃৎশিল্পে বিনিয়োগ করেছেন। আনুষঙ্গিক খরচ মিটিয়ে এমন কোনো টাকা থাকে না যা দিয়ে সমিতির কিস্তি পরিশোধ করবেন। সরকার যদি স্বল্প সুদে কুমোরদের ঋণের ব্যবস্থা করতো তাহলে সকলেই স্বাবলম্বী হতে পারতো।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে