তিস্তা নদীর চরাঞ্চলে ব্যাপকহারে বাড়ছে বিষাক্ত তামাকের চাষ। এতে একদিকে পরিবেশের ওপর যেমন পড়ছে বিরূপ প্রভাব, অন্যদিকে এসব এক বা দো ফসলি জমিগুলোর মাটির গুণাগুণও নষ্ট হচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তিস্তা নদীর প্রত্যন্ত চরাঞ্চলের জমিগুলোতে দিন দিন বেড়েই চলেছে ফসলের চাষাবাস। বিশেষ করে শুষ্ক মৌসুমে নদীর বুকজুড়ে জেগে ওঠা চরের হাজার হাজার হেক্টর জমি ফসলের সমারোহে ভরে ওঠে। তার ওপর বন্যার সময় উজানের পানির ঢলের সঙ্গে পলিমাটি আসায় তিস্তার তীর ঘেঁষা কৃষিজমি এবং চরাঞ্চলের মাটির উর্বরতা বাড়ছে। এতে ফসলি জমি বাড়ার সঙ্গে বেশি করে চাষাবাদে ঝুঁকছেন তিস্তাপাড়ের কৃষক। কিন্তু চরের জমিতে আবাদ হওয়া এসব ফসলের একটা বড় অংশই তামাক।
সরেজমিন জেলার ৫ উপজেলারেই তিস্তার প্রত্যন্ত দ্বীপচর ঘুরে দেখা গেছে, তিনটি ফসলি জমির অন্তত একটি জমিতে আবাদ করা হয়েছে তামাক। কোথাও কোথাও তা আরও বেশি। যার মধ্যে কোনোটা হয়েছে কর্তনযোগ্য, কোনোটা কেটে সেই জমিতেই শুকাতে দেওয়া হয়েছে। কোনোটায় আবার নারী-পুরুষ এমনকি শিশুদের দিয়ে চলছে পরিচর্যা। কৃষকরা স্বাস্থ্যঝুঁকিসহ তামাক চাষের ক্ষতিকর প্রভাব জেনেই করেন এর আবাদ। বেশি লাভের আশায় তিস্তার বিস্তীর্ণ এলাকায় হয়েছে এই বিষবৃক্ষের চাষ। ধান, ভুট্টা, আলু, বাদামসহ শীতকালীন শাকসবজির জন্য উপযুক্ত হলেও চরের প্রায় এক তৃতীয়াংশ জমি দখল করেছে তামাক।
কালীগঞ্জ উপজেলার তুষভান্ডার ইউনিয়নের নোহালী গ্রামের কৃষক আব্দুল মান্নান জানান, এক দোন (স্থানীয়ভাবে ২৭ শতাংশ সমান এক দোন) জমি এক মৌসুমের জন্য চার হাজার টাকায় ভাড়া দিয়ে আবাদ করছেন। তামাক কোম্পানির প্রণোদনার সার, বীজ, কীটনাশকে এর আবাদ করা তার জন্য সহজ হয়েছে। তামাক পাতা শুকানোর পর বিক্রির জন্য বেগও পেতে হয় না। কেননা ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো কোম্পানি তাকে এক একর জমিতে তামাক চাষের জন্য প্রণোদনা দিয়েছে। তার উৎপাদিত তামাক তারাই নির্ধারিত দামে কিনে নেয়। তামাকের আবাদে স্বাস্থ্যঝুঁকি আছে জেনেও বেশি লাভের আশায় তামাক আবাদ করেছেন।
কাকিনা ইউনিয়নের কৃষক জলিল মিয়া জানান, ভুট্টা ও বাদামের পাশাপাশি তিন একরের অধিক নিজের জমিতে তিনি তামাক আবাদ করেছেন। যার অল্প কিছু কাটতে বাকি। নারী শ্রমিক আড়াইশ' টাকা আর পুরুষ শ্রমিক সাড়ে তিনশ' টাকা দিয়ে তামাকের জমিতে শুরু থেকে কাজ করাচ্ছেন।
তিনি আরও জানান, বছরের একটা সময়ে ফসল আবাদ হয় এসব জমিতে। এরপর পানিতে ডুবে থাকবে। কোনো কোনো জমিতে অবশ্য ধান আবাদের পর তামাক আবাদ করেন কৃষকরা।
ভোটমারী ইউনিয়নের শৌলমারী এলাকার কৃষক আবদুল লতিফ জানান, এখনো তামাকের গাছগুলো অপরিপক্ব। তাই শ্রমিক নিয়ে গাছের পুরাতন পাতা ছিড়ে শুকাতে দেওয়ার কাজ করছেন। সেইসঙ্গে চলছে পানি দেওয়ার কাজও। চারাগাছ পূর্ণ বয়স্ক হলে পাতা ছিঁড়ে শুকাতে দেওয়ার কাজ করতে হবে। অধিক মুনাফার আশায় তিনিও আলুর পাশাপাশি তামাক চাষ করছেন।
লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) সৈয়দা সিফাত জাহান বলেন, 'গোটা জেলায় গতবারের তুলনায় তামাকের আবাদ বেড়েছে। তামাক বিষাক্ত ফসল হওয়ায় আমরা কৃষক পরিবারের স্বাস্থ্যঝুঁকির বিষয়টা মাথায় রেখে এর চাষাবাদে নিরুৎসাহিত করার চেষ্টা করছি। পাশাপাশি উচ্চ মূল্যের ফসল আবাদে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।'