একসময় চোখ মেলালেই প্রাণটা ভরে যেত সবুজের সমারোহে। চার দিকে ফসল আর আম বাগান। কৃষকের প্রাণ ভরে থাকত বছরজুরেই। তবে কৃষকের সেই প্রাণ ভরা বুক চিরে এখন শুধুই পুকুর আর পুকুর। বছর ধরেই এখন চারঘাটের কৃষি জমির বুক চিরে অবৈধভাবে চলছে পুকুর খননের মহোৎসব। পেপার-পত্রিকায় বিভিন্ন সময় সংবাদ প্রকাশসহ কৃষকদের বুক ফাটা কান্নায় মাঝেমধ্যে স্থানীয় প্রশাসন একটু নড়েচরে বসে। ফলে অবৈধ পুকুর খননকারীদের কাজে ব্যবহৃত ভ্যাকু মেশিনের ব্যাটারি খুলে নেয়া ও জরিমানার মধ্যেই থেমে থাকে স্থানীয় প্রশাসনের কার্যক্রম। অভিযোগ উঠেছে সরকারি অফিসের কিছু অসৎ কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে চারঘাটের চিহ্নিত কয়েকটি সিন্ডিকেট কৃষি জমির ধ্বংসযজ্ঞ পরিচালনা করে এলেও দেখার কেউ নেই। ফলে অনেকটা বাধাহীনভাবেই চলছে পুকুর খননের মহোৎসব। এতে করে শুধু কৃষি জমিই নষ্ট হচ্ছে না পরিবেশের উপরও বিরূপ প্রভাবের আশঙ্কা রয়েছে। অপর দিকে মাটি বহনকারী ট্রাক্টর চলাচলের কারণে সড়ক-মহাসড়কেরও ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। দ্রম্নত এর অবসান না হলে জলাবদ্ধতাসহ পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ারও আশঙ্কা করছেন কৃষি সংশ্লিষ্টরা। তবে উপজেলা প্রশাসনের দাবি পুকুর খনন বন্ধে জোর প্রচেষ্টা ও অভিযান চালাচ্ছেন তারা। চারঘাট উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গত কয়েক দিন ধরে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার নিমপাড়া, চারঘাট, ভায়ালক্ষ্ণিপুর ও শলুয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় অবাধে চলছে পুকুর খনন। তবে অধিকাংশ পুকুর খননকারীরা বিভিন্ন জমির মালিকদের নিকট থেকে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে লিজ নিয়ে এসব পুকুর খনন করছেন। আর সাবার করা হচ্ছে আমসহ বিভিন্ন ধরনের ফলের বাগান। ধ্বংস করা হচ্ছে ধানসহ তিন ফসলির জমির। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নিমপাড়া ইউনিয়নের নন্দনগাছী বাজারের জনৈক ব্যবসায়ী বলেন, শলুয়া ইউনিয়নে এক প্রভাবশালীর চত্রছায়াই রাতে পর রাত পুকুর খনন করে চলেছে। এক শিক্ষক প্রতিরোধে ইউএনও অফিসে, ভুমি অফিসে অভিযোগ করলে অসাধু চক্রের নেতারা অভিযোগকারীকে হুমকি দেয়। পরে খবর পেয়ে প্রশাসন গিয়ে ভ্যেকুর ব্যাটারিসহ সব ভেঙে দেয়। শুধু ফকিরপাড়া মাঠে নয়, ভাটপাড়া মাঠজুড়ে আগে যেখানে দেখা গেছে, গম ও ধানের শীষ। এখন সেখানে তাকালেই দেখা যাবে পুকুর আর পুকুর। এভাবে পুরো উপজেলার বেশির ভাগ মাঠজুড়েই এক শ্রেণির অসাধু ব্যক্তি দীর্ঘদিন ধরেই পুকুর খনন করে চলেছে। শুধু নিমপাড়া ইউনিয়নেই পুকুর খনন সীমাবদ্ধ নয়। উপজেলার শলুয়া, ভায়ালক্ষ্ণিপুর, ইউসুফপুর, সারদা ও চারঘাট সদর ইউনিয়নেরও বেশির ভাগ মাঠজুড়েই এখন চলছে পুকুর খননের মহোৎসব। দেখার যেন কেউ নেই। এতে করে পুকুর খননকারীরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। দ্রম্নত এসব অবৈধ পুকুর খননকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন এলাকার সর্বস্তরের কৃষক সমাজ। এই ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইদা খানম বলেন, পুকুর খনন সম্পূর্ণভাবেই অবৈধ। তার পরেও উপজেলার যে প্রান্তেই পুকুর খননের সংবাদ পাওয়া যাচ্ছে সেখানেই অভিযান পরিচালনা করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। এ ছাড়াও যারা সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করছে তাদের বিরুদ্ধে সামাজিকভাবে ও সবার সহযোগিতায় প্রতিরোধ গড়ে তোলা উচিত বলে মনে করেন তিনি।