গাংনীর আকরামুল ও হোসেনপুরের রতনের অন্ধত্বকে জয়
প্রকাশ | ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
স্বদেশ ডেস্ক
অন্ধ হয়েও কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে জীবনযুদ্ধে জয়ী হয়েছেন মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার আকরামুল এবং কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরের রতন। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হয়েও জীবনে সফলতা অর্জন করায় হয়েছেন অনেকের আদর্শ। তাদের জীবনযুদ্ধের গল্প নিয়ে আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যে বিস্তারিত ডেস্ক রিপোর্ট-
গাংনী (মেহেরপুর) প্রতিনিধি জানান, এমন অনেকেই আছেন, যারা জীবনটাকে এগিয়ে নিচ্ছেন প্রতিকূলতাকে অগ্রাহ্য করে। তারা প্রতিকূলতা বা প্রতিবন্ধকতা জয় করে পৌঁছে গেছেন সাফল্যের চূড়ায়। এমনই একজন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী আকরামুল ইসলাম। তিনি প্রচন্ড ইচ্ছাশক্তিকে কাজে লাগিয়েছেন। নিজের পাশাপাশি পুরো পরিবারের দুই মুঠো খাবারের ব্যবস্থাও করেছেন তিনি। সমাজসেবা দপ্তর বলছে, তাকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করা হবে।
আকরামুল হোসেনের বাড়ি মেহেরপুরের গাংনীর বাওট গ্রামে। পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে আকরামুল তৃতীয়। তার বয়স যখন তিন, তখন নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলেন। তবে অদম্য ইচ্ছাশক্তির কাছে অন্ধত্ব বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। সেই ছোটবেলায় বাবার হাতের কাজ উপলব্ধি করতে পেরে সেই বিদ্যা কাজে লাগিয়ে চারজনের সংসারের ব্যয়ভার বহন করছেন তিনি।
আকরামুল ইসলাম জানান, সংসারের অন্য কাজ সাধারণ সুস্থ সবল মানুষের মতোই নিজ হাতে করেন তিনি। ছোটবেলায় বাবার কাছ থেকে সব কাজের হাতেখড়ি তার। প্রথমে বাবা কিভাবে বাঁশ কঞ্চি কেটে কাজ করতে হয় সেটা রপ্ত করিয়েছেন। এখন কারো সাহায্য ছাড়াই কাজ করেন তিনি। বাঁশ ও কঞ্চি কেটে ঝুড়ি তৈরি, গাছে উঠে নারিকেল পেড়ে আনা, পুকুরে নেমে মাছ ধরাসহ যাবতীয় কাজ এখন তার করায়ত্বে।
আকরামুলের মা ছানোয়ারা খাতুন জানান, খুব ছোট বেলা আকরামুলের হামজ্বর ও পেটেব্যথা হওয়ার পর চোখ মেলতে পারত না। পরে আর চোখে দেখতে পারে না।
আকরামুলের স্ত্রী শাহারবানু জানান, অন্ধ মানুষকে বিয়ে করলেও এখন সেই মানুষটিকে নিয়ে গর্ব হয়। সংসারের খরচ জোগাড় করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয় তার। একটি ঝুপড়ি ঘরে তাদের বসবাস। সরকার যদি একটা ঘরের ব্যবস্থা করত তাহলে পরিবারটি একটি আশ্রয় পেত বলে জানান তিনি।
গাংনী উপজেলা সমাজসেবা অফিসার আরশাদ আলী জানান, আকরামুলের ঘটনাটি শুনেছেন। তার জন্য প্রতিবন্ধী ভাতার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ভিক্ষা বা কোনো খারাপ কাজ না করে আকরামুলের মতো স্মার্ট হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
হোসেনপুর (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, দুই চোখে কিছুই দেখতে পান না। তবুও থেমে নেই তার জীবন। কারও কাছে হাত পাতেন না। অন্ধ দুই চোখ নিয়েই কৃষি কাজ করে চলেন কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলার দক্ষিণ কুড়িমারা গ্রামের আজহারুল ইসলাম রতন। দুই মেয়ে তৃষা, উষা আর স্ত্রী সোহাগী নাসরিন পান্নাকে নিয়ে ছোট্ট একটি টিনের ঘরে বসবাস করেন অন্ধ রতন।
তবে রতনের জীবন এমন ছিল না। বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রি পাস করে ঢাকার ইউরোপিয়ান স্ট্যান্ডার্ড স্কুলে একাউন্ট ডিপার্টমেন্টে চাকরি করতেন তিনি। ভালোভাবেই চলত সংসার।
হঠাৎ ২০১১ সালের কোন একদিন কাল হয়ে এসেছিল রতনের জীবনে। স্ট্রাকে আক্রান্ত হয়ে হারিয়ে ফেলেন দুই চোখের দৃষ্টি। অনেক চিকিৎসার পরও আর ফেরানো যায়নি তার চোখের দৃষ্টি। এরপর থেকে শুরু হয় রতনের সংগ্রামী জীবন।
তবে চিকিৎসক জানিয়েছিলেন ভারতে উন্নত চিকিৎসার মাধ্যমে তার একটি চোখের দৃষ্টি ফেরানো সম্ভব। কিন্তু অর্থের কাছে হার মেনে অন্ধ দুই চোখ নিয়েই থেমে রইলেন রতন।
নিজের বলতে ছোট একটি টিনের ঘরের ভিটে ছাড়া আর কিছুই নেই। অন্যের জমিতে ধান চাষ করে অর্ধেক নিজে নেন আর অর্ধেক মালিককে দেন।
রতন জানান, খেয়ে বেঁচে থাকতে তো হবে। এভাবে আস্তে আস্তে কাজ করতে করতে অভ্যাস হয়ে গেছে। বড় মেয়ে তাকে চলাফেরায় সহযোগিতা করেন।
এদিকে রতনের স্ত্রী জানান, কোন মতে কষ্টে চলছে তাদের সংসার। সরকার সহযোগিতা করলে তার স্বামীর একটি চোখের দৃষ্টি ফেরানো সম্ভব।