দুর্দিনে কুড়িগ্রামে বাঁশ পণ্যের কারিগররা
প্রকাশ | ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
আব্দুল ওয়াহেদ, কুড়িগ্রাম
কুড়িগ্রামে বাঁশ পণ্যের কারিগরদের তৈরিকৃত পণ্য স্থানীয় হাটে অল্প বিক্রি হওয়ায় এখন তারা আর্থিকভাবে কঠিন সময় পার করছেন। তাদের অনেকে প্রতিবেশীদের কাছে ঋণ নিয়ে সংসার চালাচ্ছেন।
সম্প্রতি কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার কাঁঠালবাড়ী হাটে কয়েকজন বাঁশ পণ্য কারিগর এখন অর্থনৈতিকভাবে কঠিন সময় পার করার কথা জানিয়েছেন। তারা বোরো ধান কাটার মৌসুমে (এপ্রিল-জুন) এবং আমন ধান কাটার মৌসুমে (জুলাই- সেপ্টেম্বর) ব্যস্ত সময় পার করেন এবং বাকি মাসগুলোতে তারা অর্থনৈতিক সংকটে থাকেন। সাধারণত তারা ডার্কি (মাছ ধরার যন্ত্র), খাঁচা, ঘোরপা, কবুতরের খাঁচা, ধানের ডুলি, বিভিন্ন ধরনের কুলা, হাতপাখা, চাইলন, মাদুর, ঝুড়ি, বড় টুপরি, দারিপালস্না ইত্যাদি তৈরি করে থাকেন।
মোজাম্মেল হক (৫৫) নামের এক ক্রেতা বলেন, 'আমি গৃহস্থালির কাজের জন্য হাটে একটি ঘোরপা কিনেছি। এ মৌসুমে বাঁশের কোনো পণ্য কেনার প্রয়োজন হয় না। তবে ধান কাটার মৌসুমে কিছু বাঁশের পণ্য কিনতে থাকি।'
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার কাঁঠালবাড়ী ইউনিয়নের শিবরাম গ্রামের বাঁশ পণ্য কারিগর মুকুল চন্দ্র দাস (৪৫) বলেন, 'আমার আবাদি জমি না থাকায় বাঁশ দ্বারা তৈরিকৃত হস্তশিল্প বিক্রি করে সংসার চালাই। আমাদের হিন্দু দাস সম্প্রদায়ের জন্য এটি একটি স্থায়ী পেশা।'
মুকুল চন্দ্র জানান, 'আমাদের বেশিরভাগ বাঁশ পণ্য কৃষিভিত্তিক কাজে ব্যবহৃত হয়। যে কোনো ফসল কাটার সময় আমরা ব্যস্ত সময় পার করি। অনেক সময় আমরা ক্রেতার চাহিদা অনুযায়ী পণ্য সরবরাহ করতে ব্যর্থ হই। ওই সময় আমরা অনেকে প্রতি হাটে কৃষি-ভিত্তিক পণ্য ৭৫ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি করে থাকি।'
এলাকার বাঁশ কারুপণ্য কারিগর সুমন চন্দ্র দাস (২৬) বলেন, 'আমার পরিবার বাঁশের কারুকাজের ওপর নির্ভরশীল। শিশু ছাড়া আমাদের পরিবারের সবাই বাঁশের কারুকাজ তৈরির সঙ্গে জড়িত। আমরা বিভিন্ন অর্ডারের মাধ্যমে এবং স্থানীয় বাজারে আমাদের পণ্যগুলো বিক্রি করে থাকি।'
কাঁঠালবাড়ী ইউনিয়নের পাটনীপাড়া গ্রামের আরেক বাঁশের কারিগর কল্পনা রানী দাস (৫০) বলেন, 'আমার জমি না থাকায় কুড়িগ্রাম-রংপুর মহাসড়কের পাশে একটি ঝুপড়িতে থাকি। আমরা বংশ-পরমপরায় এই পেশার সঙ্গে জড়িত। চলমান সময় আমাদের বাঁশ পণ্য অল্প পরিমাণে বিক্রি হওয়ায়, অর্থনৈতিকভাবে কঠিন সময় পার করছি।'
কাঁঠালবাড়ী ইউনিয়নের পাটনিপাড়া গ্রামের বাঁশ-কারু কারিগর রাধা রানী দাস (৫০) বলেন, 'আমরা স্বামী-স্ত্রী মিলে বাঁশের কারু পণ্য তৈরি করে তা বাজারে বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছি। এখন প্রতিদিনই বাঁশের পণ্য বিক্রি হচ্ছে না। কখনো কখনো আমরা দিনে একবার খাবার খাই। ইতিমধ্যে প্রতিবেশীদের কাছে কিছু ঋণ নিয়েছি, যা সুদসহ কয়েক মাস পরে পরিশোধ করতে হবে।'
আরেক বাঁশ-কারু কারিগর সরস্বতী রানী দাস (৩০) বলেন, 'এখন আমাদের অনেকে ঋণ নিয়েছি চলছে। কোন কোন সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে হস্তশিল্প ব্যবসার ওপর ঋণ নেওয়া যায় এবং কীভাবে ঋণ নিতে হয়- তা জানি না। তবে, বাঁশের কারুপণ্য তৈরির ওপর সরকারি ঋণ (অল্প সুদে) পেলে আমরা সংসারে সচ্ছলতা আনতে পারতাম।'