বায়ান্নর ২১ ফেব্রম্নয়ারিতে যাদের বুকের তাজা রক্তে ঢাকার রাজপথ রঞ্জিত হয়েছিল, তাদের একজন শহীদ জব্বার। তার স্মৃতি রক্ষায় ২০০৮ সালে গফরগাঁও উপজেলার রাওনা ইউনিয়নের পাঁচুয়াতে প্রতিষ্ঠা হয় ভাষা শহীদ আবদুল জব্বার গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর। এখানে শহীদের ছবি ছাড়া ব্যবহৃত কোনো স্মৃতি জাদুঘরের ভেতরে নেই। জেলা পরিষদের ব্যবস্থাপনায় স্থাপিত গণগ্রন্থাগারটিতে চার হাজারের অধিক বই রয়েছে।
গফরগাঁও উপজেলা সদর থেকে ৬ কিলোমিটার দূরে রাওনার পাঁচুয়া গ্রামে ভাষা শহীদ আব্দুল জব্বারের পৈত্রিক ভিটার পাশেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ভাষা শহীদ আবদুল জব্বার গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর। এখানে রয়েছে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, শহীদ জব্বার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। সারা বছর সরব না থাকলেও ভাষার মাসে মিলন মেলায় পরিণত হয় পাঁচুয়ার শহীদ জব্বারের জন্মভিটা। এখানে সরকারি পর্যায়ে উদযাপিত হয় অমর একুশের অনুষ্ঠানমালা। আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধনের পর গ্রন্থাগারটিতে প্রায় ৪ হাজার মূল্যবান বই দেওয়া হয়। কিন্তু প্রতিষ্ঠার ১৬ বছরেও পূর্ণাঙ্গ হয়নি ভাষা শহীদ আবদুস সালাম স্মৃতি জাদুঘর ও গ্রন্থাগারটি। সারা বছরজুড়েই অযত্ন অবহেলায় পড়ে থাকে জাদুঘরটি। বিশাল হল রুমে ফাঁকা পড়ে আছে চেয়ার-টেবিল। মাঝেমধ্যে উঁকি দিয়ে যায় কিছু দর্শনার্থী।
ছুটির দিন বাদে সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকে এই স্মৃতি গ্রন্থাগার ও জাদুঘর। শহীদ জব্বারের জন্মভিটার পাশে ৪০ শতক জায়গার ওপর নির্মিত ভাষা শহীদ আবদুল জব্বার গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর। আলমারির তাকে শোভা পাচ্ছে ৪ হাজার ১৩০টি বই। রয়েছে অনেক মূল্যবান ও দুর্লভ বই। পুরো জাদুঘর গ্রন্থাগার হিসেবে ব্যবহৃত হয়। আগে দৈনিক পত্রিকা রাখা হলেও এখন আর দৈনিক পত্রিকার পাঠক আসে না বলে রাখা হয় না।
গ্রন্থাগার দেখাশুনা ও পরিচালনার জন্য লাইব্রেরিয়ান, সহকারী লাইব্রেরিয়ান ও পিয়নসহ মোট ৫টি পদ থাকলেও এখানে কর্মরত আছেন একজন সহকারী লাইব্রেরিয়ান ও একজন কেয়ারটেকার। লাইব্রেরিয়ান কায়সারুজ্জামান জানান, অনেক মূল্যবান বইয়ের সমাহার রয়েছে গ্রন্থাগারে। নিয়মিতভাবেই গ্রন্থাগার খোলা হয়। ভাষার মাসজুড়ে এখানে দর্শনার্থী এলেও বই পড়ার জন্য পাঠক তেমন আসে না। অন্য সময়ে তেমন কেউ আসে না।'
পাঠাগার ঘুরে দেখা গেল বেশ কিছু দর্শনার্থী আসছেন, তারা আশপাশ ঘুরে দেখলেও গ্রন্থাগারের ভেতরে এসে বই পড়ছেন না। জাদুঘরের সামনে, শহীদ মিনার কিংবা ভাষা শহীদ জব্বারের মু্যরালের সামনে দাঁড়িয়ে ছবি তোলার পর লোকজন ফিরে যাচ্ছেন। গ্রন্থাগার ও জাদুঘর দেখতে এসে হতাশা প্রকাশ করেন শিক্ষার্থীরা।
আলতাফ হোসেন গোলন্দাজ কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র আমিনুল ইসলাম বলেন, 'ভাষা শহীদ জব্বারের ব্যবহৃত কোনো জিনিসপত্র এখানে নেই। শহীদ জব্বারের উত্তরসূরিরা এখানে কেউ থাকেন না বলে তাদের কারো সঙ্গে দেখা হওয়ার সুযোগ নেই।' আরেক শিক্ষার্থী শরিফা খাতুন বলেন, 'উপজেলা সদর থেকে সরাসরি যানবাহন না থাকায় আসা-যাওয়া করতে পরিবহণ সংকটে পড়তে হয়।'
আশরাফ হোসেন নামে এক দর্শনার্থী বলেন, একুশে ফেব্রম্নয়ারি ছাড়াও যেন এটিকে আরও জাঁকজমক করা যায় সেজন্য একটি শিশুপার্ক স্থাপন করা যেতে পারে।
রাওনা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহাবুল আলম বলেন, গ্রাম্য পরিবেশ বিধায় সারা বছরই গ্রন্থাগারটি প্রাণহীন থাকছে। তাই নতুন প্রজন্মের কাছে ভাষা শহীদের ইতিহাস তুলে ধরতে এলাকাটিকে দৃষ্টিনন্দন গড়ে তোলার জন্য ইতোমধ্যে স্থানীয় সংসদ সদস্য ফাহমী গোলন্দাজ বাবেল উদ্যোগ নিয়েছেন।
গফরগাঁও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম বলেন, 'আমি এখানে নতুন যোগদান করে ভাষা শহীদ আবদুল জব্বার গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শন করেছি। বইয়ের সংখ্যা ও মানের দিক থেকে বেশ সমৃদ্ধ একটি গ্রন্থাগার। দর্শনার্থী ও পাঠকদের জন্য আরও আকর্ষণীয় করতে উদ্যোগ নেওয়া হবে।'