মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

অযত্ন ও অবহেলায় পড়ে আছে গোবিন্দগঞ্জের শহীদ মিনার

গোবিন্দগঞ্জ (গাইবান্ধা) প্রতিনিধি
  ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে অযত্ন, অবহেলা আর তদারকির অভাবে লেপ-তোশক তৈরির কারখানায় পরিণত হওয়া শহীদ মিনার চত্বর -যাযাদি

অযত্নে অবহেলা আর তদারকির অভাবে পবিত্রতা হারাচ্ছে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের প্রধান দুই শহীদ মিনার। নিয়ন্ত্রণহীন থাকার সুযোগে শহীদ মিনার চত্বর দুটি ময়লা আবর্জনা, লেপ-তোশক তৈরির কারখানা আর সিএনজিচালিত অটোরিকশা স্ট্যান্ডে পরিণত হয়েছে। চরম অবহেলায় বর্তমানে একরকম লোকচক্ষুর আড়ালে যেতে বসেছে গোবিন্দগঞ্জ পৌরশহরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ও শিল্প এলাকা কোচাশহরের শহীদ মিনার দুটি। এর মধ্যে গোবিন্দগঞ্জ পৌরশহরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের বেদিতে সারা বছর নির্বিঘ্নে লেপ তোষক আর বালিশ তৈরি করায় পরিণত হয়েছে এ সবের কারখানায়। এ ছাড়াও সামনে চা, বিস্কুট ও সবজির দোকান দেওয়ায় ঢাকা পড়েছে শহীদ মিনার।

গোবিন্দগঞ্জ পৌরসভা কর্র্তৃপক্ষ শহীদ মিনারের গেটে তালা দিয়ে এর পবিত্রতা রক্ষা করার চেষ্টা করলেও পরবর্তীতে তা আর নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়নি। অন্যদিকে শীত পোশাকের জন্য বিখ্যাত শিল্পাঞ্চল কোচাশহরের কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারটি সারাবছরই দখল হয়ে থাকে সিএনজিচালিত অটোরিকশার স্ট্যান্ড হিসেবে।

স্থানীয়রা জানান, গোবিন্দগঞ্জ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারটি পৌর শহরের গোলাপবাগ হাটের মধ্যে অবস্থিত। এ শহীদ মিনারের পাশেই রয়েছে গোবিন্দগঞ্জ প্রেস ক্লাব কার্যালয়, উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়, মুক্তিযোদ্ধা অফিসসহ অন্য স্থাপনা। স্বাধীনতা, বিজয় ও শহীদ দিবসসহ অন্য দিবসে এ শহীদ মিনারে পুষ্পমাল্য অর্পণ করে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়। এছাড়া বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন বিভিন্ন সময় সভা-সমাবেশ, ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করে থাকে। জাতীয় দিবস ও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে এ শহীদ মিনারে রঙ ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে দিবস পালন করা হয়। এরপর তদারকি না থাকায় আবারো সাবেক অবস্থায় ফিরে যায়।

একইভাবে গোবিন্দগঞ্জ-মহিমাগঞ্জ ও ফাঁসিতলা সড়কের তিন মোহনায় অবস্থান হওয়ায় কোচাশহর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারটি সারাবছরই দখলে থাকে সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালকদের। এর বেদিতে বসে নিয়ন্ত্রণ করা হয় এ সব গাড়ি পরিচালনার রুট। কেবলমাত্র একুশে ফেব্রম্নয়ারি সকালে কিছু সময়ের জন্য ফুল দেওয়ার জন্য দয়া করে ছেড়ে দেওয়া হয় মিনারের বেদিটি।

কাঁচাবাজার করতে আসা আব্দুল কাদের বলেন, 'অনেকদিন আগে থেকেই দেখছি এ শহীদ মিনারের বেদিতে কারিগররা লেপ-তোষক তৈরি করে থাকে। সেই সুযোগে সেখানে হাটুরেরা প্রবেশ করে মল-মূত্র ত্যাগ করেন। আশপাশের ব্যবসায়ীরা আবর্জনা ফেলায় শহীদ মিনারের পেছনে তৈরি হয়েছে আবর্জনার স্তূপ।

গোবিন্দগঞ্জ নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক এম এ মতিন মোলস্না বলেন, শহীদ মিনারের বেহাল অবস্থা বিরাজ করলেও তা দেখার কেউ নেই। এর পবিত্রতা রক্ষায় স্থায়ী উদ্যোগ নেওয়া দরকার। বর্তমান মেয়র ক্ষমতায় আসার পর শহীদ মিনারের গেট কিছুদিন তালা মেরে রেখেছিলেন। কিন্তু এখন আরও নোংরা অবস্থা বিরাজ করছে। এ শহীদ মিনারটি আরও উঁচু এবং সুন্দর করে এর চত্বরটি স্বাধীনতা চত্বর করার দাবি জানান তিনি।

এ ব্যাপারে পৌর মেয়র মুকিতুর রহমান রাফি বলেন, 'শহীদ মিনারের পবিত্রতা রক্ষার জন্য নানা পদক্ষেপ নিয়েছিলাম। কিন্তু পরবর্তীতে বেশ কিছু কারণে তা ধরে রাখা সম্ভব হয়নি। তারপরেও পবিত্রতা রক্ষায় পৌরসভার আন্তরিকতার ঘাটতি নেই। একটি প্রকল্পের অপেক্ষায় আছি। পাওয়ামাত্র স্মৃতিসৌধের আদলে দৃষ্টিনন্দন শহীদ মিনার নির্মাণ করব।'

ইউএনও রাসেল মিয়া বলেন, শহীদ মিনারের পবিত্রতা নষ্ট করে এরকম কোনো কাজ হলে এর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে