শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১

মনপুরায় নরমাল ডেলিভারিতে আস্থার প্রতীক স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র

মনপুরা (ভোলা) প্রতিনিধি
  ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
মনপুরায় নরমাল ডেলিভারিতে আস্থার প্রতীক স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র

ভোলার মূল ভূখন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন দ্বীপ উপজেলা মনপুরায় ইতোপূর্বে প্রসূতি মায়েদের গর্ভকালীন ও মাতৃত্বকালীন সেবা পাওয়া যেখানে দুঃস্বপ্ন ছিল; সেখানে প্রসবকালীন সময়ে মায়েদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি কমিয়ে নতুন করে ঝুঁকিমুক্ত চিকিৎসা সেবা পাওয়ার স্বপ্ন যেন সত্যিতে রূপ নিয়েছে এই উপকূলের প্রসূতি মায়েদের। আর সেই বিশ্বাস, ভরসা ও আস্থার প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে একটি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র।

উপজেলার দক্ষিণ সাকুচিয়া ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা- মঞ্জুরা বেগম, শাহিনুর বেগম, তাসনুর, মাজেদা, ফজিলাতুন নেছা, সিরাজ ও আব্দুল বারী বলেন, এই স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রটি মনপুরাবাসীর জন্য আশীর্বাদ হিসেবে এসেছে। এখান থেকে আমরা সাধারণ স্বাস্থ্যসেবা ও আমাদের পরিবারের গর্ভবতী মায়েদের নরমাল ডেলিভারী সেবা পেয়ে খুব খুশি। সরকার যেন এই সেবা বন্ধ না করে।

জানা যায়, মনুপরা উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের আওতায় দক্ষিণ সাকুচিয়া ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডে পিএইচডি (পার্টনার ইন হেল্‌থ ডেভেলপমেন্ট) নামক এনজিও'র প্রকল্পের অধীন মাত্র দুইজন মিডওয়াইফ নার্স ও একজন মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট দিয়ে পরিচালিত হচ্ছে এই স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রটি। দ্য সুইডিশ পোস্টকোড ফাউন্ডেশন'র অর্থায়নে কনসার্ণ ওয়ার্ল্ডওয়াইড'র সহযোগিতায় 'মিডওয়াইফ পরিচালিত স্বাস্থ্যসেবা' প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর। এক বছর মেয়াদি এই প্রকল্পটি ২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে শুরু হয়ে এখনো চলমান রয়েছে। তবে এই প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হবে ২০২৪ সালের ৩১ মার্চ।

ইতোমধ্যে গ্রামীণ নারী ও শিশুদের স্বাস্থ্যসেবা, গর্ভকালীন সেবা, সার্বক্ষণিক প্রসবকালীন সেবা, প্রসব পরবর্তী সেবা, স্যাটেলাইট সেবা ও সাধারণ রোগী সেবা দিয়ে এই উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছে স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি। এই স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রটির আওতায় গত ৮ মাসে ৩৭০ গর্ভবতী মা নরমাল ডেলিভারি সেবা গ্রহণ করেছেন। এ ছাড়া প্রায় ৪ হাজার মা ও শিশুকে মাতৃত্বকালীন সেবা, ১৪ হাজার সাধারণ রোগীকে চিকিৎসাসেবা ও ২৩ প্রকারের সরকারি ওষুধ সরবরাহ করে আসছে।

ওই কেন্দ্র থেকে প্রসবকালীন সেবা গ্রহণকারী মাইমুনা, স্বপ্না, বিবি আরজু, রোজিনা বলেন, আগে ডেলিভারীর জন্য মনপুরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সে গেলে অনেক ভোগান্তি পোহাতে হতো। কেন্দ্রটি চালু হওয়ায় গর্ভবতী মায়েরা অনেক নিরাপদ বোধ করছেন।

প্রকল্পের মিডওয়াইফ নার্স ইতি আক্তার ও জ্যোতি আক্তার বলেন, সফল নরমাল ডেলিভারির বিষয়টি প্রচার হলে মানুষ আমাদের ওপর আস্থা রেখে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে রোগী নিয়ে আসা শুরু করে। বর্তমানে ১নং মনপুরা, উপজেলা সদর-হাজীরহাট এবং উত্তর সাকুচিয়া ইউনিয়ন থেকেও আমাদের এই কেন্দ্রে ডেলিভারি রোগী আসছে।'

মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট ফারুক হোসেন বলেন, 'আমরা প্রসবকালীন নরমাল ডেলিভারি রোগীকে ১৫শ' টাকা আর্থিক সহায়তা দিয়ে থাকি এবং ঝুঁকিপূর্ণ রোগীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য অন্যত্র পাঠানো হলে যাতায়াত খরচ বাবদ ৮ থেকে ৯ হাজার টাকা পর্যন্ত দেই।'

এ ব্যাপারে ভোলা জেলা পরিবার পরিকল্পনা উপপরিচালক তাপস কুমার শীল জানান, মনপুরা উপজেলার দক্ষিণ সাকুচিয়া ইউনিয়নে নতুন এই স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রটিতে কোনো প্রকার সরকারি জনবল পদায়ন নেই। জনবল পদায়নের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। 'মিডওয়াইফ পরিচালিত স্বাস্থ্যসেবা' প্রকল্পটি ইতোমধ্যে সাড়া জাগিয়েছে। আশা করি এই প্রকল্পটি চলমান থাকবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে