ঘোড়াঘাটে রোপণে ব্যস্ত কৃষক
চৌদ্দগ্রামে বোরো চাষে লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম
প্রকাশ | ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
চৌদ্দগ্রাম (কুমিলস্না) প্রতিনিধি
কুমিলস্নার চৌদ্দগ্রাম উপজেলা কৃষি অফিসের লক্ষ্যমাত্রাকে অতিক্রম করেছে বোরো আবাদ। চলতি মৌসুমে ১২ হাজার ২৯৩ হেক্টর জমিতে বোরোর আবাদ হয়েছে এ উপজেলায়। গত মৌসুমের লক্ষ্যমাত্রাকে অতিক্রম করে প্রায় ৪৩ হেক্টর বাড়তি জমিতে কৃষকরা এই বোরো আবাদ করেন।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, একটি পৌরসভা ও ১৩টি ইউনিয়নের প্রত্যন্ত অঞ্চলের প্রান্তিক কৃষকরা এবার তাদের আবাদি জমিগুলোতে ব্রি ধান ২৮, ২৯, ৫৮, ৮৯, ৯২, ৯৫, ১০০ ও হাইব্রিড এসএলএলডি এইচসহ নানাবিধ জাতের আবাদ করেন। বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, কনকনে শীত কাটিয়ে ফাল্গুনের শুষ্ক মৌসুমে প্রতিদিন কাকডাকা ভোরেই লাঙল-জোয়াল কাঁধে নিয়ে কৃষকরা নেমে পড়েন জমিতে স্বপ্নের সোনালি ফসল বোনায়। আঁটি বাঁধা ধানের কচি চারাগুলো কাদাযুক্ত জমিতে রোপণ করছেন তারা। অন্যদিকে সময়মতো সেচের পানি পাওয়ায় উপজেলার প্রান্তিক কৃষকরা এবার তাড়াতাড়ি বোরো আবাদে নেমে পড়েন। আবার কিছু এলাকায় সরিষা থাকায় একটু বিলম্ব হচ্ছে। ফলে এখন পর্যন্ত উপজেলায় কৃষকের আবাদি জমির পরিমাণ প্রায় ১১০৬৪ হেক্টর। বাকি জমিগুলোতে সরিষা উঠে গেলে আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে বোরো লাগাতে পারবে বলে উপজেলা কৃষি অফিস জানায়।
উপজেলার মুন্সিরহাট ইউনিয়নের দেড়কোটা গ্রামের কৃষক নবী হোসেন বলেন, ভোরে জমিতে বদলা নিয়ে রোপা লাগাতে এসেছেন। প্রায় ৮০ শতক জমিতে এবার রোপা লাগাচ্ছেন। লোডশেডিং যদি না হয়, তাহলে সময়মতো সেচের পানি পাবেন। কিন্তু দেখা গেছে, অতিরিক্ত লোডশেডিং আর চৈত্রের তীব্র খরায় মাঠ ফেটে চৌচির হয়ে যায়। তখন আবাদি রোপা নিয়ে চরম বেকায়দায় পড়তে হয়।
কনকাপৈত ইউনিয়নের মরকটা গ্রামের কৃষক কামাল হোসেন বলেন, বোরো সিজনে বৃষ্টি বাদল কম হওয়ায় সেচের পানি পেতে দেরি হয়। এসময় বৈদু্যতিক জটিলতা থাকে বেশি। তবুও সেচ পাম্প মালিকদের প্রতি কানি জমিতে সেচ পানি দিতে ৩ হাজার ৫শ' থেকে ৪ হাজার টাকা দিতে হয়। বোরোতে খরচ অনেক বেশি। কুলিয়ে ওঠা প্রায় অসম্ভব।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা যোবায়ের হোসেন বলেন, প্রণোদনা হিসেবে এবার উপজেলার প্রায় ৪ হাজার ৮শ' কৃষককে ৫ কেজি বীজ, ১০ কেজি ডিএপি ও ১০ কেজি এমওপি সার দেওয়া হয়েছে এবং হাইব্রিট প্রণোদনার আওতায় ২ হাজার ৩শ' জনকে ২ কেজি বীজ দেওয়া হয়।
ঘোড়াঘাট (দিনাজপুর) প্রতিনিধি জানান, দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটে চলতি মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় সরিষার বাম্পার ফলনের সম্ভাবনায় কৃষদের মুখে হাসি ফুটেছে। সেই সঙ্গে বোরো ধান রোপণে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। উপজেলা কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে কৃষকদের দেওয়া হচ্ছে নানা ধরনের পরামর্শ ও কারিগরি সহায়তা।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকার বিস্তীর্ণ মাঠ ঘুরে দেখা গেছে- কৃষকরা জমিতে সেচ প্রদান, জমি চাষ, জৈব অজৈব সার প্রয়োগ ও বীজতলা থেকে চারা তোলাসহ বিভিন্ন কাজ করছেন। কাক ডাকা ভোর থেকে কৃষক শ্রমিকদের বোরো রোপণে এ ব্যস্ততা চোখে পড়ে।
উপজেলা বুলাকীপুর ইউনিয়নের কৃষক মোফাজ্জল হোসেন জানান, চলতি মৌসুমে সরিষার বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে। সেই সঙ্গে আরও কয়েকদিন পর সরিষা ঘরে তোলা হবে। এরপর সরিষার জমিগুলোতে কৃষকরা বোরো রোপণে ব্যস্ত সময় পার করবেন। তবে শ্রমিক সংকটের কারণেই চলতি মৌসুমে বোরো রোপণে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে।
ঘোড়াঘাট পৌরসভার চকবামুনিয়া গ্রামের কৃষক মজনু মিয়া জানান, তিনি গত বছর ১২ বিঘা জমিতে উচ্চ ফলনশীল জাতের ধান রোপণ করেছিলেন। গত বছর ফলন ভালো হওয়ায় এ বছর তিনি ১৫ বিঘা জমিতে ধান রোপণ করেন।
উপজেলা কৃষি অফিসার মো. রফিকুজ্জামান জানান, ঘোড়াঘাট পৌরসভাসহ ৪টি ইউনিয়নে বোরো রোপণে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। এ বছর ৯ হাজার ১২৬ হেক্টর জমিতে বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। চলতি মৌসুমে কৃষকেরা বোরো উফসি জাতের ব্রিধান ৫০, ব্রিধান ৭৪, ব্রিধান ৯২, ৯০, ব্রিধান ৫৮ ও বোরো হইব্রিড সিনজেনটা ১২৫০, জনকরাজ ১৪সহ বিভিন্ন জাতের ধান রোপণ করছেন তারা।