হারানো যৌবন ফিরে পেতে চায় নবীগঞ্জের শাখা বরাক নদী

প্রকাশ | ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০

এটিএম সালাম, নবীগঞ্জ (হবিগঞ্জ)
হবিগঞ্জের নবীগঞ্জে ময়লা-আবর্জনায় অস্তিত্ব সংকটে বরাক নদী -যাযাদি
নবীগঞ্জের শাখা বরাক তার হারানো যৌবন ফিরে পেতে আকুতি জানাচ্ছে। হাতছানি দিয়ে ডাকছে। কিন্তু কেউই যেন শুনছে না তার এই আকুতি। শাখা বরাকের মায়াবি বুকে প্রতিদিন ফেলা হচ্ছে শহরের ময়লা-আর্বজনা। একদিকে নদীতে তৈরি হচ্ছে ময়লা আর্বজনার ভাগাড়, অন্যদিকে এই ভাগাড়ে আগুন দেওয়ায় ধোঁয়ায় আশপাশের মানুষ শ্বাসকষ্টে ভুগছেন বলে অভিযোগ করছেন শহরবাসী। তবে আশার আলো জ্বলেছিল ২০২০ সালে। কিন্তু করোনা মহামারি সেই আলো নিভিয়ে দিয়ে গেছে। আর কেউ আলো দেখাতে পারেনি। এবার নদীদূষণ ও দখলের বিরুদ্ধে সামাজিক সচেতনা তৈরি করতে 'রিভার উইংস' নামে একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। ২০২০ সালের ২ মার্চ নবীগঞ্জের শাখা বরাক নদী সচল ও প্রবহমান রাখতে হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসন আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলন করে ঘোষণা দেয়। তৎকালীন জেলা প্রশাসক কামরুল হাসানের নির্দেশে নবীগঞ্জ উপজেলার শাখা বরাক নদী থেকে উচ্ছেদ অভিযান শুরু করে স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন। করা হয় অবৈধ স্থাপনার তালিকা প্রণয়ন। নবীগঞ্জের শাখা বরাক নদীর ১০১টি স্থাপনা উচ্ছেদ করার সিদ্ধান্ত হয়। জেলা প্রশাসনের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানান নবীগঞ্জবাসী। ওই সময় পানি উন্নয়ন বোর্ড, নবীগঞ্জ ভূমি অফিস ও পৌরসভার সার্ভেয়াররা সরেজমিন দখলদারদের নাম তালিকাভুক্ত করে বিভিন্ন বাসা-মার্কেটে লাল রং দ্বারা চিহ্নিত করে। পরে প্রশাসন অভিযান করে বেশকিছু স্থাপনা উচ্ছেদ করে। কিন্তু করোনা সংক্রমণ বাড়ায় অভিযান শুরুর কিছুদিন পরই বন্ধ হয়ে যায়। এখন পর্যন্ত নদী সচল ও প্রবহমান রাখতে আর কোনো কার্যক্রম লক্ষ্য করা যায়নি। বর্তমানে শাখা বরাক নদীতে ফেলা হচ্ছে শহরের সব ময়লা-আবর্জনা। বর্তমানে ডাকবাংলোর সামনে, সবজি বাজারের পেছনে, নোয়াপাড়া পয়েন্টে, শিবপাশা ব্রিজের কাছে ও হাসপাতাল সংলগ্ন শাখা বরাকে ফেলা হচ্ছে এসব ময়লা। এতে দূষিত হচ্ছে পরিবেশ, দূষণ ছড়িয়ে পড়ায় বাড়ছে রোগব্যাধি। যদিও স্থানীয়দের অভিযোগ তারা নামিদামি গাড়ি দিয়ে দাপিয়ে বেড়ান। তাই গাড়ির ভেতর দিয়ে গন্ধ তাদের নাকে পৌঁছায় না। সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, এক সময়ের উত্তাল স্রোতের বরাক নদী কালের গর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। নদীপথ ফিরে পেতে বিভিন্ন সময় মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভা করেও যেন সুফল মিলছে না হতভাগা এলাকাবাসীর। রাঘব-বোয়ালদের চরাঞ্চল দখলের মহোৎসব চলছে। সচেতন মহলের অভিযোগ রহস্যজনক নীরবতা পালন করছে প্রশাসন। এর ফলে শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়কপথগুলো বর্ষা মৌসুমে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। সামান্য বৃষ্টিতেই শহরতলীর সড়কগুলো পানির নিচে তলিয়ে যায়। নবনির্মিত সড়কগুলো অকালেই ভেঙে পড়ে। যদিও চলতি বছরে ড্রেন নির্মাণের মেগা প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। এ ব্যাপারে আলাপকালে ৭০ বছর বয়সি রহিম উদ্দিন বলেন, ১৫ থেকে ২০ বছর আগেও এ নদীতে ৫০০ মণের ওজনের নৌকা ধান, ইট, বালু, বাঁশ নিয়ে যাতায়াত করত। সময়ের পরিক্রমায় এখন রাস্তার ও বসতবাড়ির বৃষ্টির পানি পর্যন্ত ঠিকভাবে নিষ্কাশন হতে পারছে না। বর্তমানে শাখা বরাক নবীগঞ্জ বাজারের ময়লা-আবর্জনা ফেলার স্থান হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। পৌর এলাকার আনমনু গ্রামের এমরান মিয়া বলেন, 'এক সময় নবীগঞ্জ বাজারের সঙ্গে দেশের অন্যান্য স্থানের পণ্য পরিবহণের একমাত্র নদীপথ ছিল শাখা বরাক। আমরা এক সময় এই নদীতে সাঁতার কেটেছি। বড় বড় নৌকা দিয়ে বিভিন্ন স্থানে বিয়ের অনুষ্ঠানে গিয়েছি। বর্ষার সময় শাখা বরাকের পানি থইথই করত। ময়লা-আবর্জনায় এখন মরা খালে পরিণত হয়েছে। সাংস্কৃতিক কর্মী পলাশ বণিক বলেন, 'শহরের সব ময়লা-আবর্জনা পৌর কর্তৃপক্ষ সংগ্রহ করে তা এই নদীতে ফেলে যায়। আবার সন্ধার সময় এসব ময়লার স্তূপ পুড়িয়ে দেওয়া হয়। এ কারণে যে ধোঁয়া উৎপন্ন হয় তা খুবই ক্ষতিকর।' নবীগঞ্জ পৌর মেয়র ছাবির আহমদ চৌধুরী বলেন, 'আমি প্রথমবার মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর শাখা বরাককে রক্ষা করতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে উদ্ধার কার্যক্রম শুরু করেছিলাম। সেটা আমাদের ডাকবাংলোর সামনে থেকে কিছুটা অগ্রসর হওয়ার পরই করোনা মহামারি শুরু হলে এই কার্যক্রম স্থগিত হয়ে যায়। তবে আশা করছি পৌরসভার উদ্যোগে আবারও এ অভিযান শুরু হবে। তবে শুধু ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কারই নয়, যারা সরকারি জায়গা দখল করে নদীকে বাধাগ্রস্ত করছেন তাদের কাছ থেকে আমরা নদী উদ্ধার করব।'