স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে যক্ষ্ণা নির্মূলে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করা সত্ত্বেও মেহেরপুরের গাংনীতে ক্রমশ বাড়ছে যক্ষ্ণারোগীর সংখ্যা। সাধারণ যক্ষ্ণার পাশাপাশি মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ যক্ষ্ণা হিসেবে খ্যাত এমডিআর টিবি রোগে আক্রান্ত হয়েছেন ৯ জন। ইতোমধ্যে ওই সব রোগীর বাড়িকে রেডজোন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এমনই উদ্বেগজনক তথ্য জানিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ।
গত ১৩ ফেব্রম্নয়ারি যক্ষ্ণা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি ও বেসরকারি সংস্থা ব্রাক আয়োজিত কর্মশালায় এমন তথ্য জানানো হয়। আরও জানানো হয়, রোগ নির্ণয়ে শতভাগ নির্ভুল পদ্ধতি অবলম্বন এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হলে যক্ষ্ণারোগী শনাক্তের সংখ্যাও বৃদ্ধি পাবে। তবে চিকিৎসকরা বলছেন, চিকিৎসায় যক্ষ্ণা ভালো হয়। সময়মতো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে নিয়মিত ওষুধ সেবন ও স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়াতে হবে।
স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্যমতে, গেল ২০২৩ সালে গাংনীতে যক্ষ্ণারোগীর সংখ্যা ছিল ৪০৮ জন। গত ডিসেম্বরে এ উপজেলায় ৪৩ জন আক্রান্ত হয়। আর চলতি বছরের জানুয়ারিতে সনাক্ত হয়েছেন ৪৪ জন। এর মধ্যে শিশুর সংখ্যা ৪ জন। তবে এমডিআরটিবি সনাক্ত করা হয় ৯ জনকে। এরা হচ্ছেন কাজিপুর ইউনিয়নের হাড়ভাঙ্গা গ্রামের বুলুয়ারা (৪৫), বেতবাড়িয়ার রওশনারা (৯০), লিয়াকত আলী (৬৫), তেঁতুলবাড়িয়া ইউনিয়নের রামদেবপুরের কাশেম আলী (৭৮), রামনগরের নাজির মন্ডল (৬০), পলাশী পাড়ার তহমিনা (৪৫), কাথুলি ইউনিয়নের গাড়াবাড়িয়ার বজলুর রহমান (৬০) ও রাইপুর ইউনিয়নের ঝোড়পাড়া গ্রামের জহুরা খাতুন (৬৫)। আক্রান্ত রোগীরা শুধু নয়, গোটা পরিবারকে রেডজোন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সের টিএলসিএ জাহিদুল ইসলাম জানান, যক্ষ্ণায় আক্রান্ত ও মৃতু্যহার কমাতে সময়মতো রোগ শনাক্তের বিকল্প নেই। তাই পরিবারের একজনের যক্ষ্ণা হলে সবার পরীক্ষা করার পরামর্শ দেন তারা। তবে যক্ষ্ণা হলে মানুষ সহজে প্রকাশ করতে চায় না। এর মূলে রয়েছে লোকলজ্জা, রোগের ব্যাপারে অবহেলা, সচেতনতার অভাবের মতো বিষয়। তা ছাড়া কর্মজীবীরা কাজ বাদ দিয়ে সহজে রোগনির্ণয়ের জন্য চিকিৎসকের কাছে যেতে চান না। যদিও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সে যক্ষ্ণা রোগ নির্ণয়ের প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি রয়েছে। তারপরও অনেকেই আসতে চান না পরীক্ষার জন্য।
গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সের ডা. আব্দুলস্নাহ আল আরাফাত জানান, যক্ষ্ণায় আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে থাকা পরিবারের সদস্যরা, শিশু, বয়োবৃদ্ধ, বিশেষ করে যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম এবং যাদের অন্য সমস্যা যেমন ডায়াবেটিস, এইচআইভি, কিডনির জটিলতা ইত্যাদি রয়েছে, এরা যক্ষ্ণায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকেন বেশি। আবার নতুন করে সুপ্ত যক্ষ্ণার জীবাণুর প্রকোপ বৃদ্ধি পাচ্ছে। যক্ষ্ণা প্রধানত ফুসফুসকে প্রভাবিত করে। তবে এটি কিডনি, মেরুদন্ড এবং মস্তিষ্ককেও প্রভাবিত করতে পারে। যখন একজন সংক্রামিত ব্যক্তি কাশি বা হাঁচি দেয়, তখন টিবি বাতাসের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
জাতীয় যক্ষ্ণা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচিতে সহযোগী সংস্থা ব্রাকের মেহেরপুর জেলা সমন্বয়কারী মনিরুল ইসলাম জানান, যক্ষ্ণার ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীকে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। মাইকোব্যাকটেরিয়াম টিউবারকিউলোসিস ব্যাকটেরিয়া এই রোগের জন্য দায়ী।
উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা সুপ্রভা রাণী জানান, বাংলাদেশে সর্বত্র বিনামূল্যে যক্ষ্ণা রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা দেওয়া হয়। তাই এই রোগের উপসর্গ দেখা দিলে দ্রম্নত তা শনাক্ত করে চিকিৎসা নেওয়া প্রয়োজন।