কয়রায় লবণ পানির চিংড়ি ঘের বন্ধের বাস্তবায়ন চায় এলাকাবাসী

প্রকাশ | ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০

কয়রা (খুলনা) প্রতিনিধি
খুলনার কয়রা উপজেলায় লবণ পানির চিংড়ি ঘের বন্ধের কার্যকর বাস্তবায়ন দেখতে চায় এলাকার লাখ লাখ মানুষ। লবণ পানির বিরুদ্ধে সংসদের প্রথম অধিবেশনে লবণ পানিমুক্ত মৎস্য চাষ ও টেশসই বেড়িবাঁধের দাবি উস্থাপন করে বক্তৃতা দেওয়ায় প্রশংসিত হয়েছেন সংসদ সদস্য মো. রশীদুজ্জামান। তিনি বলেছেন, সতিনের সঙ্গে সংসার করা যায় কিন্তু লবণ পানির সঙ্গে বসবাস করা যায় না। সংসদ সদস্যর এই গণমুখী বক্তৃতা নির্বাচনী এলাকায় বিভিন্ন শ্রেণি- পেশার মানুষের মধ্যে আশার সঞ্চার হয়েছে। ১৯৮০ সাল থেকে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বেড়িবাঁধের ভাঙন ঠেকাতে বাঁধ কেটে অবৈধভাবে বসানো পাইপ অপসারণ এবং লবণ পানির চিংড়ি ঘের বন্ধের দাবি জানিয়ে আসছে এলাকাবাসী। জানা গেছে, লবণ পানির চিংড়ি ঘের বন্ধে সাবেক সংসদ সদস্য ২০২১ সালের ২৩ ডিসেম্বর উপজেলা পরিষদের সাধারণ সভায় মতামত ব্যক্ত করেন। যার ধারাবাহিকতায় জনপ্রতিনিধি, জমির মালিক, ঘেরমালিক ও সুধীসমাজের সঙ্গে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভার সিদ্ধান্ত অনুয়ায়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা সময়সীমা বেঁধে দিয়ে মাইকিং করেন অবৈধ পাইপ অপসারণের জন্য। সে সময় অনেক ঘের মালিক পাইপ অপসারণ করেন এবং কয়রা সদর ইউনিয়ন লবণ পানি মুক্ত ঘোষণা করেন চেয়ারম্যান এস এম বাহারুল ইসলাম। সে সময় চেয়ারম্যানের ওই সিদ্ধান্তকে এলাকাবাসী সাধুবাদ জানালেও অদৃশ্য কারণে তা বাস্তবায়ন হয়নি। তবে মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড লবণ পানি মুক্ত ঘোষণা করা হয় যার কার্যকর বাস্তবায়নের ফলে যেখানে ২০ বছর পর আমন মৌসুমে ২ হাজার বিঘা জমিতে বাম্পার ফলন হয়েছে। দ্বাদশ সংসদের প্রথম অধিবেশনে সংসদ সদস্য লবণ পানির চিংড়ি ঘের বন্ধের জন্য বক্তৃতা দেওয়ার পরে এলাকার মানুষ নতুন করে স্বপ্ন দেখছেন লবণ পানির চিংড়ি ঘেরের পরিবর্তে ধান চাষের। তবে পাউবো ২০১২ সালে পাইপ অপসারণের জন্য দাপ্তরিক নির্দেশনা জারি করে এবং ২০১৭ সালের ২৫ নভেম্বর লবণ পানির চিংড়ি ঘের বন্ধের জন্য চিঠি পাঠায় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। সে নির্দেশনাও বাস্তবায়িত হয়নি। যার কারণে স্থানীয় চিংড়ি ঘের মালিকরা অপরিকল্পিতভাবে বেড়িবাঁধ ছিদ্র করে পাইপ বসিয়ে নদীর পানি সরবরাহ করার ফলে ভাঙনের ঝুঁকি থেকেই যায়। সরকার কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করলেও কিছুদিন যেতে না যেতেই আবারও ভাঙন দেখা দেয়। পাউবো সূত্রে জানা গেছে, কয়রা উপজেলায় পাউবোর তিনটি পোল্ডারের ১২১ কিলোমিটার বাঁধের মধ্যে আমাদী ১৩-১৪/১ নং পোল্ডার, বানিয়াখালী ১৩-১৪/২ নং পোল্ডার ও আংটিহারা পওর শাখার আওতাধীন ১৪/১ নং পোল্ডারে অসংখ্য পাইপ বসানো রয়েছে। যে কারণে পাইপ বসানো স্থানগুলো ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে। বাঁধ কেটে বসানো পাইপ দিয়ে বার বার নদীর পানি ওঠানামা করায় ওই সব স্থানের বাঁধ সারাক্ষণ ভিজে থাকায় তা দুর্বল হয়ে ভাঙনের ঝুঁকি বাড়ে। নদীতে পানির চাপ বেশি হলে দুর্বল স্থানগুলো সহজেই ভেঙে যায়। কয়রা সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এস এম বাহারুল ইসলাম বলেন, বিগত বছর লবণ পানির চিংড়ি ঘের বন্ধ করার জন্য নাইনটি ও পাইপ অপসারণ করে মৎস্য ঘেরে লবণ পানি উত্তোলন বন্ধ করা হয়েছিল। অদৃশ্য কারণে তা বাস্তবায়ন হয়নি। পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী অশরাফুল আলম বলেন, বেড়িবাঁধ ছিদ্র করে বসানো পাইপ অপসারণের জন্য ঘের মালিকদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সংসদ সদস্য মো. রশীদুজ্জামান বলেন, 'চিংড়ি চাষ সম্পর্কে জাতীয় সংসদে আইন করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে আহ্বান জানিয়েছি। আমি কখনো চিংড়ি ঘেরের বিরুদ্ধে নই। পুষ্টি চাহিদা মেটাতে মৎস্য বা চিংড়ি আমাদের প্রয়োজন। কিন্তু সেটা কৃষি ফসল ও পরিবেশের ক্ষতি করে নয়। লবণ পানির জায়গা নদী-সাগরে সেখানেই থাকুক। জনবসতি ও ফসিল এলাকায় নয়।'