সোমবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

নাচোলে নজর কাড়ছে 'ইলামিত্র সংগ্রহশালা'

চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি
  ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
নাচোলে নজর কাড়ছে 'ইলামিত্র সংগ্রহশালা'

চাঁপাইনবাবগঞ্জে নাচোলে ইলামিত্র সংগ্রহশালা জেলা প্রশাসনের এক অনন্য উদ্যোগ। তেভাগা আন্দোলনের নেত্রীর ইতিহাস নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে এ সংগ্রহশালা নির্মাণ করা হয়েছে। উপজেলার রাওতাড়া গ্রামে ইলামিত্র মঠের পাশেই নির্মিত হয়েছে ইলামিত্র সংগ্রহশালার মাটির দ্বিতল ভবন।

বিপস্নবী এই নারীর ইতিহাস নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতেই জেলা প্রশাসক এ কে এম গালিভ খাঁনের নির্দেশনায় এমন মহৎ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে উপজেলা প্রশাসন। সংগ্রহশালাটি নির্মাণে এর ঐতিহ্যকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। মাটি দিয়েই তৈরি করা হয়েছে শিল্পমন্ডিত দৃষ্টিনন্দন দ্বিতল ভবনটি। ৮০০ বর্গফুট আয়তনের ভবনটির দোতলায় ওঠার জন্য সামনের বেলকনিতে কাঠের সিঁড়ি ব্যবহার করা হয়েছে। কাঠের সিঁড়ি যা দৃষ্টিনন্দনও বটে। সঙ্গে রাস্তা এইচবিবিকরণ বাউন্ডারি ওয়াল, সংগ্রহশালাটি আরও দৃষ্টিনন্দন করার জন্য বনায়ন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। ভবনটির কিছু দূরে আরেকটি মাটির ঘর নির্মাণ করা হয়েছে পর্যটকদের বিশ্রামের জন্য। সংগ্রহশালাটিতে তেভাগা আন্দোলন ও ইলামিত্র সম্পর্কিত বই, পত্র-পত্রিকা, দুর্লভ স্থিরচিত্র ছাড়াও জেলার ঐতিহ্যবাহী উপাদান স্থান পেয়েছে। উদ্বোধনের আগেই এই সংগ্রহশালা দেখতে দূর দূরান্ত থেকে ভিড় জমাচ্ছেন দর্শনার্থীরা।

এ বিষয়ে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সবুজ হাসান বলেন, বিপস্নবী নেত্রী ইলামিত্রের স্মৃতি সংরক্ষণে সংগ্রহশালাটি নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

সংগ্রহশালাটি দেখতে এরই মধ্যে দূর দূরান্ত থেকে ভিড় জমাচ্ছেন দর্শনার্থীরা। উদ্বোধনের পর এ সংগ্রহশালা সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। যাতে নতুন প্রজন্মের মানুষ এই নেত্রীকে নিয়ে জানতে পারেন।

২০২২ সালে ইলা মিত্রের মৃতু্যবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে গিয়ে একটি সংগ্রহশালার নির্মাণের উদ্যোগ নেন সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাইমেনা শারমীন। নির্মাণাধীন এ সংগ্রহশালা ইলিমিত্রের স্মৃতি সংরক্ষণে অনন্য ভূমিকা রাখবে বলেও মনে করেন সবুজ হাসান।

এ বিষয়ে নাচোল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিলুফা সরকার বলেন, জেলা প্রশাসক এ কে এম গালিভ খাঁন স্যারের নির্দেশনা ও তদারকিতে আমরা এ সংগ্রহশালার কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। বিপস্নবী নারী ইলামিত্রের স্মৃতি সংরক্ষণ ও নতুন প্রজন্মকে সংগ্রহশালাটি ইতিহাস সম্পর্কে ধারণা দেবে। তিনি আরও বলেন, অনেক কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আশা করছি, খুব শিগগির কাজ শেষে উদ্বোধন করা হবে।

জেলা প্রশাসক এ কে এম গালিভ খাঁন জানান, ২০২৩ সালে অনুষ্ঠিত জেলা প্রশাসক সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর ২৫ দফা নির্দেশনার ২২ ও ২৩ দফায় পর্যটন শিল্পের বিকাশ, রক্ষণাবেক্ষণ ও জেলার নিজস্ব ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি সংরক্ষণের উদ্যোগ গ্রহণের জন্য জেলা প্রশাসকদের প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা প্রদান করেছেন।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার নাচোল উপজেলায় সংঘটিত তেভাগা আন্দোলন (১৯৪৬-১৯৫০) এবং তেভাগা আন্দোলনের নেত্রী ইলামিত্রের স্মৃতিবিজড়িত স্থানগুলো রক্ষা ও স্মৃতিচিহ্নসমূহ সংরক্ষণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে ইলামিত্র ও তার স্বামী রমেন মিত্রের ভূমিকা ছিল প্রশংসনীয়। স্বাধীনতাযুদ্ধ চলাকালে তারা মহান মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত গড়ে তুলতে প্রচারণা চালিয়েছিলেন, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও শরণার্থীদের মানবিক সহায়তা প্রদান করেছেন। যার স্বীকৃতি হিসেবে ইলামিত্র ও তার স্বামী রমেন মিত্র মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের জন্য মরণোত্তর মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে