যমুনার চরাঞ্চলে গড়ে উঠেছে মহিষের বাথান

প্রকাশ | ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০

এম.এ জাফর লিটন, শাহজাদপুর (সিরাজগঞ্জ)
শাহজাদপুরের যমুনার ভাটদিঘুলিয়ার চরে মহিষের পাল -যাযাদি
সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের দুর্গম যমুনা নদীর চরে বিশাল এলাকায় গড়ে উঠেছে মহিষের বাথান। কৈজুরী ইউনিয়নের মোনাকোষা-ভাটদিঘুলিয়ার চরের তৃণভূমিতে রাখালেরা খোলা আকাশের নিচে সাড়ে তিনশ' মহিষের বাথানে মহিষ পালন করে হচ্ছেন স্বাবলম্বী। মহিষের বাথানের পাশেই নদীঘেঁষা বালুচরে চাষি ও রাখালেরা কয়েকটি ঝুপড়ি ঘর তুলেছেন। মহিষগুলো লালন-পালন করাই তাদের কাজ। তারা ঝুপড়ি ঘর তুলে সেখানে কোনো রকমে গাদাগাদি করে থাকছেন। মহিষের সঙ্গেই যেন তাদের ঘর-সংসার। মহিষ পালন ঘিরে চলছে তাদের জীবন-জীবিকা। সারেজমিন দেখা যায়, যমুনার বিশাল এলাকা নিয়ে অবস্থিত এই বাথানের দুই প্রান্তে নদী রয়েছে যা খামারিদের জন্য মহিষগুলোর পানি পান করা ছাড়াও গোসল করানোর সুবিধা পাচ্ছে। স্থানীয় মানকু শেখ জানান, কাকডাকা ভোর থেকে শুরু হয় মহিষ ও রাখালদের কর্মযজ্ঞ। মহিষের দুধ দোয়ানো, নৌকায় করে গ্রাহকদের কাছে দুধ পাঠানো, আর দুপুর পর্যন্ত মহিষগুলোকে মাঠে চড়ানো। এরপর মধ্যাহ্নভোজ। বিকালে আবার মহিষ চড়ানো। রাখালদের সঙ্গে মহাজনের নিয়োগকৃত ঘোষালরাও থাকেন। রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করেই চলছে এসব। চাষি, রাখালের শ্রমে মহিষ থেকে উৎপাদিত হচ্ছে দুধ। একটি মহিষ সকাল ও দুপুর মিলে ৭ থেকে ১০ কেজি পর্যন্ত দুধ দেয়। প্রতি কেজি দুধ ফ্যাট অনুযায়ী ৫৫ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি করা হয়। বগুড়ার গাবতলীর কালাইহাটা গ্রাম থেকে আসা মহিষের মালিক আনন্দ ঘোষ জানান, '৭ থেকে ৮ জন খামারির মহিষ একত্রিত করে বাথান করা হয়েছে। আমাদের এলাকায় ঘাস কম থাকায় এখানে এসেছি। এই বাথানে আমার ৩৩০টি মহিষ রয়েছে।' তিনি বলেন, 'বছরের আট মাস ম্যোষের সাতে (সাথে) যমুনার চরে কাটাই। এ্যাটিই খাই, এ্যাটিই ঘুমাই, হগ্‌গলের সাতে গল্পগুজব হরে আনন্দেই সময় কাটে।' যমুনা পাড়ের ১০নং কৈজুরী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোয়াজ্জেম হোসেন খোকন বলেন, প্রতি বছরই যমুনার বুকে জেগে ওঠা চরাঞ্চলে সবুজ ঘাস খাওয়ানোর জন্য পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন জেলা থেকে শত শত মহিষ নিয়ে আসে খামারিরা। চরের তৃণভূমিতে অস্থায়ী ঝাপুড়িঘর তুলে খোলা আকাশের নিচে চলে এই মহিষের লালন পালন। চারপাশে যমুনা নদীর অসংখ্য ক্যানেল আর সবুজ ঘাস থাকার কারণে খামার পরিচালনা সহজলভ্য হচ্ছে। বর্ষা মৌসুমে চরগুলোতে বন্যার পানি প্রবেশের আগেই তারা মহিষের বাথান গুটিয়ে নিজ নিজ এলাকায় ফিরে যান খামারিরা।