পাখির কিচিরমিচির ডাক আর ডানার ঝাপটায় ঘুম ভাঙে গ্রামবাংলার মানুষের। চিরচেনা সেই দৃশ্য এখন আর নেই। বন বাদাড় উজার আর ক্ষেতে কীটনাশক প্রয়োগের কারণে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি হারিয়ে যেতে বসেছে। তবে ব্যতিক্রমী দৃশ্য দেখা গেছে মেহেরপুরের গাংনীতে। ভোর থেকেই ব্যস্ত সড়কের মাঝে শালিকের কিচিরমিচির আওয়াজ। গাছ-গাছালি, বৈদু্যতিক খুঁটি, দোকানের ছাদ আর রাস্তায় ছোটাছুটি করছে অসংখ্য শালিক। স্থানীয় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ছাড়াও বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত দর্শনার্থী খাবার দিচ্ছে ওদের। পাখির সঙ্গে মানুষের মিতালির এ দৃশ্য নজর কেড়েছে সবার।
স্থানীয় ফল ও পেঁয়াজু বিক্রেতা রফিকুল ইসলাম জানান, বছর পাঁচেক আগে কয়েকটি শালিক পাখিকে খাবার দিতেন। এ খাবারের লোভে ক্রমশই পাখির সংখ্যা বাড়তে থাকে। বর্তমানে কয়েক হাজার শালিক সকালে খাবার খেয়ে বিচরণ করত আকাশে। স্থানীয় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা এ পাখির খাবার জোগান দেন। সারা দিন পেঁয়াজু ও ফল বিক্রির পর উচ্ছিষ্ট খাবার নষ্ট না করে জমিয়ে রাখেন। ভোরে পাখিরা এসে অপেক্ষা করে বিভিন্ন গাছপালা, বৈদু্যতিক তার ও ছাদের কার্নিসে। সকালে এসেই খাবার বিতরণ করেন।
উদর পূর্তি শেষে পাখিরা উড়ে চলে দিগদিগন্তে। পাখিদের খাবার খাওয়ানো দৃশ্য নজর কাড়ে পথচারীদের। স্থানীয় ব্যবসায়ী ছাড়াও অনেকেই আসেন পাখির এ নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখতে ও খাবার দিতে।
পেঁয়াজু বিক্রেতা রিপন হোসেন ও ব্যবসায়ী জিলস্নুর রহমান জানান, গাংনী বড়বাজারের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের পাখি সংরক্ষণে উদ্বুদ্ধ হয়ে কাঁচাবাজারের ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরাও মুড়ি, চানাচুর, বড়াসহ নানান খাবার দিচ্ছেন শালিকদের। খাবার দিয়ে পাখিদের কিচিরমিচির ডাক ও ডানার ঝাপটা উপভোগ করেন স্থানীয় অনেকে। কেউ পাখিদের তাড়া করে না বরং যে যেমনভাবে পারেন তাদের খাবার দেন। শুধু খাবার নয় পাখিদের নিরাপত্তা আর সংরক্ষেণের চেষ্টা করছেন ব্যবসায়ীরা।
পাখিপ্রেমী মাজেদুল হক মানিক জানান, এ অঞ্চলে বেশ কয়েক ধরনের শালিক রয়েছে। কাঠ শালিক, ভাত শালিক, গোবর শালিক ও গাং শালিক। কাঠ শালিক, ভাত শালিক ও গোবর শালিক বাসা বানায় বর্ষাকালে। খুঁজে নেয় গাছের কোনো গর্ত বা ফাঁকফোকর। আর শহরে কোনো বাসাবাড়ির ভেন্টিলেটর। জোড়া বেঁধে বা সদলবলে চলে এরা। বট, পাকুড়, ডুমুরের নরম ফল খায়। আর পছন্দ করে শিমুল, পলাশ ও অন্যান্য ফুল থেকে মধু চুষে খেতে। গাছের আর ফলের পোকামাকড়, এদের ডিম, শুককীট খুঁটে খুঁটে খায় এরা। গাছ না থাকায় পরিবেশ রক্ষাকারী এসব পাখি এখন অনেকটাই বিলুপ্ত। খাদ্যের সন্ধানে এরা এখন লোকালয়ে এসেছে। পাখি সংরক্ষণের জন্য অবশ্যই খাদ্য সরবরাহ জরুরি।