১৯ কোটি টাকা বিক্রির আশা

জৈন্তাপুরে তরমুজের বাম্পার ফলন

প্রকাশ | ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০

ইউসুফুর রহমান, জৈন্তাপুর (সিলেট)
সিলেটের জৈন্তাপুর বিস্তৃর্ণ মাঠজুড়ে তরমুজের আবাদ -যাযাদি
সীমান্ত জনপদ সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার উৎপাদিত বিভিন্ন শাকসবজি রপ্তানির পাশাপাশি প্রতি বছরের মতো চলিত বছর দেশের বিভিন্ন স্থানে তরমুজ রপ্তানি কাজ শুরু করা হয়েছে। জৈন্তাপুরে চলিত বছরে শীতকালীন বিভিন্ন শাকসবজি উৎপাদনের পাশাপাশি এবার তরমুজের বাম্পার ফলন হয়েছে। উপজেলার নিজপাট, জৈন্তাপুর, চারিকাটা ইউনিয়নে অন্তত ৬০ হেক্টর পতিত অনাবাদি জমিতে এবার তরমুজ চাষাবাদ করা হয়েছে। উপজেলা কৃষি অফিসের উৎসাহ-উদ্দীপনায় স্থানীয় কৃষকরা তরমুজ চাষে এগিয়ে এসেছেন। জৈন্তাপুর উপজেলার অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যাপকভাবে তরমুজ ফসল অবদান রাখছে। উপজেলার কয়েক হাজার পরিবার তরমুজ চাষাবাদ করে অর্থনৈতিকভাবে অনেকটা লাভ হয়েছেন। উপজেলা কৃৃষি অফিসের সঠিক তদারকিতে উপজেলার ৩টি ইউনিয়নের পতিত অনাবাদি জমিতে তরমুজ উৎপাদন বেশি হওয়ায় কৃষকরা এবার মহাখুশি। ইতোমধ্যে মাঠ থেকে সরাসরি তরমুজ বিক্রয় ও বাজারজাত প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পাইকাররা কৃষকদের মাঠ থেকে তরমুজ ক্রয় করে নিয়ে যাচ্ছেন। চলিত বছরে উপজেলার কেন্দ্রীয়, বাঁওড় হাওড়, বিরাই মারা, খারুবিল, ডুলটির পার, বিরাখাই ও আসামপাড়া হাওড়, নিজপাট ইউপির কামরাঙ্গীখেল, দিগারাইল, হর্নি বাইরাখেল, রুপচেং, ডৌডিক ইন্দারজু, লুৎমাইল, চারিকাটা ইউপির বালিদাড়া, থুবাং, লালাখাল, গৌরি, রামপ্রসাদ এলাকায় ব্যাপক জায়গাজুড়ে তরমুজ চাষাবাদ হয়েছে। উপজেলার জৈন্তাপুর ইউনিয়নের বিরাইমারা হওর, খারুবিল তরমুজ বাগান পরিদর্শনকালে স্থানীয় কৃষক আজিজুল হক, জমির উদ্দিন, ইয়াহিয়া ও আজির উদ্দিন জানান, তারা যৌথভাবে ৪ জন কৃষক সম্মিলিতভাবে ২২ বিঘা অনাবাদি জমি ৩ বছরের জন্য এক লাখ ২০ হাজার টাকা মূল্য দিয়ে লিজ নিয়ে তরমুজ চাষ করছেন। মেশিন লাগিয়ে জায়গার বিন্না-জঙ্গল পরিষ্কার করতে তাদের ৪২ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। ২২ বিঘা জমির ওপর ৬ হাজার তরমুজ গাছের চারা রোপণ করা হয়। বাজার থেকে বীজ ক্রয় করে গাছের পরিচর্যাসহ অন্তত ৫ লাখ টাকা তাদের খরচ হয়। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে মনিটরিং এবং কীটনাশক প্রদানসহ বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করা হয়েছে বলে জানান তারা। কৃষক আজির উদ্দিন জানান, চলিত মাসে ৫ হাজার পিস তরমুজ বিক্রয় করা হয়েছে ৭ লাখ ৫০ হাজার টাকায়। এখানে আরও অন্তত ১৩ হাজার ছোট-বড় তরমুজ বাগানে রয়েছে। ইতোমধ্যে প্রথম চালান বিক্রয় করা হয়েছে। ফেব্রম্নয়ারি মাসের শেষদিকে দ্বিতীয় চালান বিক্রয় করা হবে। কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, তরমুজসহ উপজেলার ৯ হাজার, ৪৯৫ হেক্টর জমিতে শীতকালীন নানা শাকসবজি উৎপাদন ও চাষাবাদ করা হয়েছে। তরমুজ চাষাবাদ করা হয়েছে ৬০ হেক্টর জায়গাজুড়ে। যার বাজার মূল্য অন্তত ১৮ কোটি টাকা হতে পারে বলে ধারনা করা হচ্ছে। জৈন্তাপুর ইউনিয়ন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন জানান, 'এই ইউনিয়নে ১৫ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষাবাদ করা হয়েছে। তিনি বলেন, পতিত জমিতে জঙ্গল পরিষ্কার করে কৃৃষকরা তরমুজ চাষে এগিয়ে এসেছেন। আমরা প্রতিনিয়ত তাদের বাগানে পরামর্শ ও মনিটরিংয়ের কাজ করে যাচ্ছি।' উপজেলা কৃষি অফিসার শামীমা আক্তার বলেন, চলিত বছরে উপজেলায় অতিরিক্ত ৫শ' হেক্টর পতিত অনাবাদি জমিতে শীতকালীন অন্য শাকসবজি উৎপাদনের পাশাপাশি ৬০ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষাবাদ করা হয়েছে। তিনি আরও জানান, পরিবেশ ও আবহাওয়া ভালো থাকায় এ বছর তরমুজ ফলন ভালো হওয়ায় কৃষকরা অনেক খুশি হয়েছেন। তরমুজ উৎপাদনে অর্থনৈতিকভাবে কৃষকরা অনেক লাভবান হচ্ছেন। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে সরকারি বরাদ্দের সব রকম সুযোগ-সুবিধা কৃষকদের প্রদান করা হচ্ছে। জৈন্তাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফখরুল ইসলাম জানান, জৈন্তাপুর ইউনিয়নে শীতকালীন নানা শাকসবজি চাষাবাদ ও উৎপাদন হয়ে থাকে। এ বছর তরমুজ ফসল উৎপাদন অনেকটা ভালো হয়েছে। সরকারিভাবে কৃষকদের পানির সেচ সুবিধা প্রদান করা হলে শীতকালীন রবি মৌসুমে তরমুজ শাকসবজিসহ অন্য পণ্য উৎপাদন ও চাষাবাদে কৃষকরা আরও আগ্রহী হয়ে উঠবেন।