জমি জায়গা বিরোধ

তেঁতুলিয়ায় ১৫শ' কোটি টাকার বিদু্যৎ প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতি

প্রকাশ | ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০

তেঁতুলিয়া (পঞ্চগড়) প্রতিনিধি
পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় জমি সংক্রান্ত জটিলতায় বন্ধের পথে ৫০ মেগাওয়াট বিদু্যৎ উৎপাদন প্রকল্প -যাযাদি
পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার দেবনগর ইউনিয়নে জমি জায়গা নিয়ে বিরোধের জের ধরে ৫০ মেগাওয়াট বিদু্যৎ উৎপাদনের একটি প্রকল্পের কাজ প্রায় বন্ধ হওয়ার পথে। এ ঘটনায় ওই এলাকায় উত্তেজনা পরিস্থিতি বিরাজ করছে। ২০১৭ সালে সোলার পাওয়ার প্যানেলের মাধ্যমে বিদু্যৎ উৎপন্ন করে জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করার জন্য এই প্রকল্পের কাজে হাত দেয় ল্যান্ডকো নামের একটি বেসরকারি কোম্পানি। প্রশাসন ও কোম্পানি কর্তৃপক্ষ এবং স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, স্থানীয় অধিবাসীরা দুই পক্ষে বিভক্ত হয়ে কোম্পানির সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে পড়েছে। এক পক্ষ সরাসরি কোম্পানির পক্ষ নিয়ে পাওয়ার পস্নান্ট স্থাপনের কাজ করছে। অন্যপক্ষ জমি জায়গার বিরোধে পাওয়ার পস্নান্ট বন্ধের দাবি তুলেছে। কোম্পানি কর্তৃপক্ষ জানায়, উপজেলার শেখগজ এলাকায় পাথর উত্তোলনের পর পতিত জমিতে ১৫শ' কোটি টাকা বিনিয়োগ করে সোলার প্যানেলের মাধ্যমে বিদু্যৎ উৎপন্ন করার পরিকল্পনা করে ল্যান্ডকো নামের একটি কোম্পানি। এ জন্য তারা জমি ক্রয় শুরু করে। স্থানীয় জমি বন্দোবস্তকারীদের মাধ্যমে দুই বছরের মধ্যে প্রায় ২৭৬ একর জমি কেনে তারা। পাওয়ার পস্নান্টের জন্য যন্ত্রপাতি স্থাপনও শুরু হয়। কিন্তু কাগজে-কলমে ২৭৬ একর জমি কিনলেও কোম্পানিটি দখলে পায় ৯০ একর। বাকি ১৮৬ একর জমি দখলে নিতে গেলেই স্থানীয়দের সঙ্গে বিরোধ সৃষ্টি হয়। এ বিরোধে যাদের কাছে জমি কেনা হয়েছে, তারাও মারধর করতে আসে ও নানারকম ষড়যন্ত্র করছে। জানা গেছে, গত ৫ ফেব্রম্নয়ারি কোম্পানি কর্তৃপক্ষ ক্রয়কৃত জমি দখল করতে গেলে স্থানীয় জমির মালিকদের সঙ্গে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। সংঘর্ষের আশংকায় পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। স্থানীয়রা বলছেন কোম্পানি অবিক্রিত আবাদি জমিগুলোর ফসল নষ্ট করে দখল করতে আসে। তাই এই বিরোধের সৃষ্টি। তারা আরও জানান, স্থানীয় জমি বন্দোবস্তকারীরা জমি ক্রয়ের সময় কোম্পানি এবং স্থানীয় জমির মালিকদের সঙ্গে প্রতারণা করে। তারা প্রকৃত মালিকদের কাছে জমি না কিনে ভুয়া জমির মালিক সাজিয়ে তাদের কাছে জমি কিনেছে। বিরোধীয় জমির প্রকৃত মালিকরা কেউ কেউ জমি বিক্রি করলেও সুবিধামতো কোম্পানিকে বুঝিয়ে দিতে চায়। কিন্তু কোম্পানি জোর করে তাদের ইচ্ছামতো জমি দখল করছে। ল্যান্ডকো কোম্পানির স্থানীয় প্রতিনিধি জহিরুল ইসলাম জানান, 'জোর করে জমি দখলের কথাটি ঠিক নয়। আমরা ২৭৬ একর জমি কিনেছি। কাগজে-কলমে তাই আছে। সেই জমি তো আমাদের পেতে হবে। স্থানীয় বিক্রেতারা অনেকে ২ থেকে ৩ বার জমি বিক্রি করে আবার কোম্পানির কাছ থেকে টাকা নিয়ে কোম্পানির কাছেও জমি বিক্রি করেছেন। অনেকে জাল দলিল, জাল খতিয়ান দেখিয়ে কোম্পানির কাছে জমি বিক্রির কথা বলে লাখ লাখ টাকা নিয়েছেন। আমরা তাদের কাছ থেকে সেই জমিগুলো চেয়েছি মাত্র।' তবে স্থানীয় স্কুল শিক্ষক মিজানুর রহমান জানান, 'কোম্পানির কাছে আমার পরিবারও জমি বিক্রি করেছে। তারা যতটুকু কিনেছে আমরা ততটুকু জমি দিয়েছি। এখন আরও কিছু ওয়ারিশান দলিল দেখিয়ে আমাদের তিন ফসলি জমি দখল করতে আসছে। শুধু আমি নই, এ রকম অনেক লোকের জমি দখল করতে আসে। বর্তমানে আমরা ভীত সন্ত্রস্ত অবস্থায় আছি। আমরা চাই কোম্পানি আলোচনায় বসুক।' ইউএনও ফজলে রাব্বি বলেন, 'আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। স্থানীয় অধিবাসী ও কোম্পানি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি। এ ব্যাপারে উপজেলা ভূমি কর্মকর্তাকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। কমিটি কাজ করছে।'