দুর্ভোগে বিচারক-আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীরা

আট বছরেও শুরু হয়নি ফেনী চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ভবনের কাজ

প্রকাশ | ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০

ফেনী প্রতিনিধি
ফেনী চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ভবনের নির্মাণ কাজ গত আট বছরেও শুরু করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। এজলাস সংকট দূর করতে ও মামলার জট কমাতে দীর্ঘ একযুগ আগে উদ্যোগ গ্রহণ করা হয় ফেনীর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবন নির্মাণের। এরই ধারাবাহিকতায় ৮ বছর পূর্বে ভূমি অধিগ্রহণ করা হলেও অদৃশ্য কারণে থমকে আছে তার বাস্তবায়ন। কবে নাগাদ এ আদালত ভবনটির নির্মাণ কাজ শুরু হবে সে ব্যাপারে কিছুই বলতে পারছে না জেলার সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল কোনো সূত্র। ফলে নানাভাবে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন বিচারপ্রার্থীদের পাশাপাশি জেলার আইনজীবীরাও। হিমশিম খেতে হচ্ছে জুডিশিয়াল আদালতের ম্যাজিস্ট্রেটদেরও। সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্র জানা যায়, উচ্চ আদালতের রায় অনুযায়ী দেশের নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগ পৃথক হয় ২০০৭ সালের ১ নভেম্বর। এরপর ২০১২ সালে শুরু হয় জেলা ও দায়রা জজ আদালত ভবন সংলগ্ন স্থানে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবন নির্মাণের জন্য পৌনে দুই একর জায়গা অধিগ্রহণ কার্যক্রম। তারপর ২০১৬ সালের জুন মাসে জমিমালিকদের বুঝিয়ে দেওয়া হয় অধিগ্রহণের টাকা। ২ লাখ ২৮ হাজার বর্গফুটের ১৩ তলাবিশিষ্ট চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ভবন নির্মাণের জন্য ২০২০ সালের ২৮ অক্টোবর গণপূর্ত অধিদপ্তর থেকে পাঠানো হয় ৮৭ কোটি টাকার প্রস্তাবনা। অথচ, দীর্ঘ ৮ বছরেও ভবনটি নির্মাণ কাজ শুরু না হওয়ায় এজলাস সংকটে মামলার কার্যক্রম চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে এখানকার ম্যাজিস্ট্রেটদের। নানা দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীসহ সংশ্লিষ্টদের। সরেজমিনে জানা যায়, ফেনীর জুডিশিয়াল বিভাগে ৯জন বিচারক রয়েছেন। কিন্তু নিজস্ব ভবন না থাকায় তাদের বিচারকার্য পরিচালনার জন্য জেলা জজ আদালত ভবনের তৃতীয় তলায় চারটি ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের নিচতলায় তিনটি এজলাস বরাদ্দ দেওয়া হয়। এর মধ্যে চিফ ও অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের এজলাস ছাড়া বাকি ৫টি এজলাসে অন্য ৭ জন ম্যাজিস্ট্রেট বেঞ্চ সমন্বয় করে পর্যায়ক্রমে বিচারকাজ পরিচালনা করে যাচ্ছেন। এতে করে একজন বিচারক কার্যক্রম শেষ করা পর্যন্ত আরেকজনকে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষমাণ থাকতে হয় প্রতিনিয়ত। সকালে আসা বিচারপ্রার্থীরা কোনো কোনো দিন শেষ বিকাল পর্যন্তও আদালতের বারান্দায় দাঁড়িয়ে থেকে অবর্ণনীয় দুর্ভোগের শিকার হন। হিমশিমে পড়তে হচ্ছে বিচারক ও আইনজীবীদেরও। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ফেনীর সিনিয়র আইনজীবী রবিউল হক ও জাহাঙ্গীর আলম নান্টু জানান, 'আমাদের জেলায় চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ভবন না থাকায় আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীদের এক ভবন থেকে অন্য ভবনে ছোটাছুটি করতে হয়। বিশেষ করে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের নিচ তলায় তিনজন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের এজলাস থাকায় আদালত ভবন থেকে সেখানে দৌড়ে যেতে হয় আইনজীবী ও বিচরপ্রার্থীদের। এতে নানা দুর্ভোগের শিকার হতে হয় সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে। তবে, আপাতত জেলা ও দায়রা জজ ভবনের পশ্চিম পাশের ভবনটি তিনতলা করলেও হয়রানি কিছুটা কমে আসবে। জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি আবদুস সাত্তার জানান, ফেনীর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবনটির নির্মাণ কাজ শুরু হবে- হচ্ছে বলে প্রকল্পটি দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে আছে। এতে দীর্ঘদিন ধরে বিচারক ও আইনজীবীসহ বিচারপ্রার্থীদের নানা ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হাফেজ আহম্মদ জানান, ফেনীর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের এজলাস সংকটে মামলা-মোকদ্দমা পরিচালনা করতে নানা ভোগান্তি পোহাচ্ছেন তারা। অনেক ক্ষেত্রে সকালের মামলা আদালতে উপস্থাপন হতে সময় লেগে যায় বিকাল পর্যন্ত। এজন্য ভবনটির নির্মাণ কাজ দ্রম্নত শুরুর দাবি জানিয়েছেন তিনিও। এ প্রসঙ্গে ফেনীর গণপূর্ত বিভাগের প্রকৌশলী কামরুল হাসান জানান, জেলার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ভবনটি নির্মাণের প্রস্তাবনা পূর্ত সার্কেলে পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি ২০২২ সালে থেকেই ডিপিপি প্রণয়ন পর্যায়ে রয়েছে। ফেনীর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. আতাউল হক বলেন, দেশের বেশ কিছু জেলায় প্রথম পর্যায়ের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবন নির্মিত হয়ে গেছে। ভূমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত জটিলতার কারণে ফেনীর ভবনটি দ্বিতীয় ধাপে নির্মিত হবে। তবে আশারবাণী হচ্ছে গত অক্টোবরের শেষের দিকে এ সংক্রান্ত একটি পর্যবেক্ষণ টিম ফেনীতে এসে ভবনটির জন্য নির্ধারিত জয়গা পরিদর্শন করে গেছেন। তখন তারা জেলা জাজশিপের প্রধান হিসেবে ফেনীর সিনিয়র জেলা ও দায়রা আবু সালেহ মোহাম্মদ রুহুল ইমরান এবং ভবনের প্রধান হিসেবে আমার সঙ্গে কথা বলে গেছেন। এ সময় তারা জানিয়েছিলেন, আসছে জুন-জুলাইয়ের মধ্যে ভবনটি নির্মাণ কাজ শুরু এবং তার পরবর্তী তিন বছরের মধ্যে শেষ হবে।