সরকারের নিয়ম-নীতি উপেক্ষা করে লাইসেন্স ছাড়াই প্রশাসনের নাকের ডগায় নেত্রকোনার বিভিন্ন এলাকায় ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠেছে অবৈধ স'মিল (করাত কল)। লাইসেন্স ছাড়াই যত্রতত্র অবৈধ স'মিল গড়ে উঠায় একদিকে যেমন পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে, অন্যদিকে সরকার মোটা অঙ্কের রাজস্ব আয় বঞ্চিত হচ্ছে।
অভিযোগ রয়েছে, বন বিভাগের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী মিল মালিকদের কাছ থেকে বাৎসরিক উৎকোচ আদায় করে। এতে করে লাভবান হন ওই কর্মকর্তা-কর্মচারী ও মিল মালিকরা। অন্যদিকে সরকারের রাজস্ব তহবিলের খাতা শূন্যই থেকে যায়।
নেত্রকোনা বন বিভাগ অফিস সূত্রে জানা গেছে, জেলার ১০টি উপজেলার আনাচে কানাচে মিলিয়ে ৩২৮টি স'মিল রয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ২১টি মিলের লাইসেন্স আছে। তবে এদের অনেকেই নিয়মিতভাবে লাইসেন্স নবায়ন করছেন না। অভিযোগ রয়েছে, এসব মিলের ফরিয়া দালালরা গ্রামাঞ্চলের সাধারণ মানুষকে সব ধরনের গাছ বিক্রি করতে প্রলুব্ধ করছে। অনেক মিলে রাতের আঁধারে নিষিদ্ধ কাঠ ও বন বিভাগের কাঠ চেড়াই করা হয়। এতে করে একদিকে বৃক্ষ নিধন হচ্ছে, অন্যদিকে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বন বিভাগের এক কর্মচারী জানান, একটি স'মিলের লাইসেন্স করতে বেশ কয়েকটি কাগজপত্র এবং ২ হাজার ৩শ' টাকার প্রয়োজন হয়। বাস্তবে লাইসেন্স করতে আসা স'মিল মালিকদের সাত পাঁচ বুঝিয়ে দিনের পর দিন হয়রানি ও সেই টাকার ৩-৪ গুণ বেশি টাকা নেওয়ার কারণে স'মিল মালিকরা লাইসেন্স করতে আগ্রহী হন না। বন কর্তারা 'টু-পাইস' ধান্দা করে জনবল সংকট দেখিয়ে মিল তদারকি যুগের পর যুগ বন্ধ করে রেখেছেন।
এ ব্যাপারে নেত্রকোনা বন বিভাগের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুর রফিক জানান, মিল মালিকদের একাধিকবার নোটিশ দেওয়া হয়েছে। অজ্ঞাত কারণে তারা লাইসেন্স করছেন না। এ বিষয়ে তিনি কার্যকরী মোবাইল কোর্ট পরিচালনার দাবি জানান। তিনি মনে করেন, অবৈধ মিল মালিকদের বড় ধরনের জরিমানা বা মিল সিলগালা করলে তারা লাইসেন্স করতে বাধ্য হতেন। সরকারের রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পাবে।
সরেজমিনে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে একাধিক মিল মালিকের কাছে প্রশ্ন করা হয়েছিল স'মিলের লাইসেন্স কেন করছেন না এ ব্যাপারে তারা কোনো জবাব দিতে রাজি হননি। শুধু এটুকু জানান, লাইসেন্স করতে গেলে ব্যাপক হয়রানির শিকার হতে হয়। প্রতিটি স'মিল সম্পর্কে বন বিভাগ অবগত আছেন।
এ ব্যাপারে বন বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক এ এফ জি মোস্তফা জনবল সংকটের বিষয়টি স্বীকার করে জানান, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে। তারা সব বিষয়ে দ্রম্নত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি জানান, প্রতিটি স'মিল মালিককে লাইসেন্স করার জন্য নোটিশ করা হয়েছে। লাইসেন্স না করলে পরবর্তীতে এসব স'মিল মালিকদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এরই প্রেক্ষিতে নেত্রকোনা জেলায় ৭৩ জন স'মিল মালিক লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেছেন। এগুলো সরেজমিনে পরিদর্শন করে প্রতিবেদন তৈরি করার পর জেলা প্রশাসকের অফিসে সভা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
তিনি মিল মালিকদের কাছ থেকে বন বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উৎকোচ নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, এসব মিথ্যা।
ময়মনসিংহ বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আ ন ম আব্দুল ওয়াদুদ জানান, 'লাইসেন্স করানোর জন্য আমরা মিল মালিকদের বিভিন্ন সময় চাপ সৃষ্টি করেছি, কিন্তু মিল মালিকরা নানা ধরনের টালবাহানা ও রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে চলেছেন। অবৈধ স'মিল মালিকদের বিরুদ্ধে অভিযান বা মোবাইল কোর্ট পরিচালনার জন্য জেলা প্রশাসনের কাছে বারবার আবেদন করে আসছি। অচিরেই জেলার বিভিন্ন স্থানে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার মাধ্যমে অবৈধ স'মিল মালিকদের লাইসেন্স করাতে বাধ্য করা হবে।'