দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে ফিশিং বোটে দুর্ধর্ষ গণডাকাতির চেষ্টাকালে বিপুল পরিমাণ আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদসহ ৩০ জলদসু্যকে আটক করেছের্ যাব-৭। এ সময় জব্দ করা হয়েছে গণডাকাতির কাজে ব্যবহৃত দু'টি ট্রলার।
সোমবার ভোরে বঙ্গোপসাগরে অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়। বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেনর্ যাব-৭ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. মাহবুব আলম।
আটকরা হলেন- করিম (৩৩), মো. রুবেল (৩৩), মো. জফুর (৩৫), শফি আলম (৪০), আব্দুর রহিম (২৫), মো. শামীম (২১), মো. ইউসুফ (২৯), শাজাহান বেগম (৩৭), মো. সাহাব উদ্দিন (৩৫), মো. শওকত (৩৭), মো. ইসমাইল (২৬), দেলোয়ার ইসলাম (৪২), নুর মোহাম্মদ (১৭), আব্দুর রহিম সিকদার (৩৪), মো. মফিজুর রহমান (৩০), ফজল হক (৪০), মো. গিয়াস উদ্দিন (২৬), মো. কাছেদ (১৯), মো. আকিদ খান (৩৭), দিদারুল ইসলাম (৩৩), নাইম (১৯), হারুন (৪৪), ইয়াছিন (২৯), খলিলুর রহমান (২৫), ইকবাল হোসেন (২৪), শাহেদ (২২), হোসেন (২৭), আলী হোসেন (২৪), আব্দুল মান্নান (৪০) এবং মো. সোলায়মান (৩৮)।
র?্যাব-৭ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. মাহবুব আলম বলেন, 'সম্প্রতি বঙ্গোপসাগরের গভীরে ডাকাতির পর অনেক জেলেদের হত্যা করেছিল জলদসু্যরা। সেসময় আমরা অনেক জলদসু্যকে গ্রেপ্তার করেছিলাম। কিন্তু আমরা নজরদারি অব্যাহত রেখেছিলাম। আমরা জানতে পেরেছি, চট্টগ্রামের পতেঙ্গা এলাকা থেকে ৩০ থেকে ৪০ জনের একটি গ্রম্নপ গণডাকাতির প্রস্তুতি নিচ্ছে। সবশেষ রোববার জানতে পারি ডাকাত দলটি রাত ১১টার দিকে গণডাকাতির উদ্দেশে ঘাট এলাকা ত্যাগ করে। পরের্ যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা দল এবং আমাদের একটি আভিযানিক দল ডাকাতদের ট্রলারটি শনাক্ত করি। এরপর তাদের আমরা আটক করি ও তাদের কাছে থাকা দু'টি ট্রলার থেকে আটটি দেশীয় আগ্ন্নেয়াস্ত্র এবং পাঁচটি কার্তুজসহ ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত বিপুল পরিমাণ সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়েছে।'
র্
যাব জানিয়েছে, গ্রেপ্তার শাহেদ মাঝি প্রথম গ্রম্নপের দলনেতা। তিনি কুতুবদিয়া এলাকার বাসিন্দা। তার দলের কাজ ছিল ডাকাতি করার জন্য অস্ত্র, বোট, জাল এবং আনুষঙ্গিক যেসব সরঞ্জামাদি লাগত সেগুলো সরবরাহ করা। তার দলে কাজ করত ৯ জন।
গ্রেপ্তার আরেক আসামি ইউসুফ মাঝি ছিল দ্বিতীয় গ্রম্নপের নেতা। তিনিই ডাকাতির মূল পরিকল্পনাকারী। প্রথমে ডাকাতির জন্য প্রয়োজনীয় জনবল নির্বাচন করত। ডাকাতির স্থান নির্বাচন করে নিজে সশরীরে হাজির থেকে ডাকাতির করত। ইউসুফ মাঝির দলে ১১ জন ডাকাত সদস্য ছিল।
গ্রেপ্তার করিম মাঝি ছিল তৃতীয় ডাকাত গ্রম্নপের নেতা। তার কাজ ছিল ডাকাতির পরে লুট করা বোট, মাছ, জাল এবং অন্যান্য সরঞ্জামাদি সংগ্রহ করে সুবিধামত বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করা এবং সেই টাকা গ্রম্নপের সব সদস্যকে সমানভাবে বণ্টন করা। তার দলে ১০ জন ডাকাত সদস্য ছিল। ডাকাত সর্দার ইউসুফ মাঝি এবং করমি মাঝির নিজস্ব বোট ও কোম্পানি রয়েছে। যা দিয়ে তারা মাঝির ছদ্মবেশে সমুদ্রে দসু্যতা করত।
এদিকে সোমবার দুপুরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনের্ যাব আরও জানায়, প্রায় ৩৫ থেকে ৪০ জনের তিনটি সশস্ত্র ডাকাত চক্র (ভোলা, বরিশাল, কুতুবদিয়া এবং আনোয়ারা এলাকায়) একত্রিত হয়ে সাগরে বড় পরিসরে দসু্যতার পরিকল্পনা করছে। চক্রটির পরবর্তী ১০ থেকে ১২ দিনের মধ্যে প্রায় ১৫ থেকে ২০টি ট্রলারে ডাকাতি করার পরিকল্পনা ছিল। ডাকাতি শেষে লুটপাট করা মাছ ও অন্যান্য সরঞ্জামাদি ভোলা ও বরিশাল অঞ্চলের দিকে নিয়ে বিক্রয় করা হতো। পরবর্তী সময়ে লভ্যাংশ আনোয়ারা-কুতুবদিয়া এলাকার জলদসু্যদের কাছে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে পৌঁছে দেওয়া হতো। এই ডাকাত দল মূলত তিনটি পর্বে ভাগ হয়ে ডাকাতি করত।