দূর থেকে দেখলে ভবনটিকে পরিত্যক্ত বলে ভুল করবেন যে কেউ। কেননা ভবনটিতে জানালায় কাঠের চৌকাঠ লাগানো থাকলেও অস্তিত্ব নেই পালস্না এবং রড দিয়ে তৈরি গ্রিলের। দেয়ালের খসে পড়া পলেস্তারা বেয়ে শ্রেণি কক্ষে ঢুকেছে লতাপাতা। ঝড়ের কবলে পড়া টিনশেড ভবনটির বারান্দার একাংশ রয়েছে উন্মুক্ত। যেখান দিয়ে যে কেউ প্রবেশ করতে পারে বিদ্যালয়ে। বিশুদ্ধ খাবার পানির টিউবওয়েলটিও ব্যবহারের অনুপোযোগী পড়ে রয়েছে। সীমানা প্রাচীর না থাকায় শিক্ষার্থীদের ব্যবহারের একটি মাত্র শৌচাগারটি হয়েছে সার্বজনীন। এরই মধ্যে শিশু শ্রেণিতে ৪, প্রথম শ্রেণিতে ৩ এবং দ্বিতীয় শ্রেণিতে ৩ জনসহ মোট ১০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে ঈশ্বরদী পৌর শহরের প্রাণকেন্দ্রের একটি বে-সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
সরেজমিনে দেখা যায়, ঈশ্বরদী পৌরসভার ৭-নং ওয়ার্ডের অন্তর্গত সবচেয়ে ঘন বসতিপূর্ণ এলাকা ঈশ্বরদী আমবাগান পুলিশ ফাঁড়ি সংলগ্ন বিদ্যালয়টিতে ১৭ বছর ধরে বিনা বেতনে শিক্ষকতা করছেন ৪ জন শিক্ষিকা। ১৯৯৫ সালে নির্মিত হয়েছে ঈশ্বরদী হাউজিং এস্টেট বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। বিদ্যালয়টিতে শ্রেণি কক্ষে শিক্ষার্থীদের বসার জন্য নেই কোনো ব্রেঞ্চ, শিক্ষকদের জন্য নেই চেয়ার ও টেবিল। বৈদু্যতিক তারের সামান্য অংশ ঘরের আড়ার সঙ্গে ঝুলন্ত থাকলেও অস্তিত্ব নেই বৈদু্যতিক পাখা আর লাইটের। মূল ভবনের বারান্দার টিনের একাংশ উধাও হয়ে গেছে। বিদ্যালয়ের পরিচয়পত্র বহনকারী সাইন বোর্ডটিও পড়ে আছে মুখ থুবড়ে। তারই মধ্যে একটি শ্রেণি কক্ষে দুইটি বেঞ্চে বসেই পাঠদান করছেন শিক্ষিকারা। শিক্ষার্থী সংখ্যা অতি নগন্য হওয়ায় এভাবেই চলে এখানকার পাঠ দান বলে জানায় শিক্ষার্থীরা।
প্রাথমিক শিক্ষার যৌবনকালে এই বিদ্যালয়ের এমন বেহাল অবস্থার কথা জানতে চাইলে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা শামসুন্নাহার যায়যায়দিনকে বলেন, ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা হলেও এই এলাকার জনগণের শিক্ষার প্রতি চাহিদা তুলনামূলকভাবে কম। তাছাড়া বস্তি এলাকা হওয়ায় প্রতিনিয়ত নতুন মানুষের আনাগোনা। এ কারণে এখানে চোরের উৎপাত বেশি। করোনার সময় বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় ভবনের ভেন্টিলেটর ভেঙে প্রবেশ করে শ্রেণি কক্ষের ফ্যান, লাইট, বৈদু্যতিক তারসহ ছোটখাটো প্রায়োজনীয় আসবাবপত্র নিয়ে গেছে চোরের দল। এরা রিফুজি হওয়ায় এদের বিরুদ্ধে জোর করে কিছু বলতেও ভয় পান স্থানীয়রা। তাদের অত্যাচারেই প্রতিষ্ঠিত এই বিদ্যালয়টি আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। তবে সরকারিভাবে সহযোগিতা পেলে আবারও উজ্জীবিত হয়ে উঠতে পারে বিদ্যালয়টি সে প্রত্যাশাও ব্যক্ত করেন প্রধান শিক্ষিকা শামসুন্নাহার।
তিনি বলেন, 'আমরা প্রায় ১৭ বছর বিনা পারিশ্রমিকে নানা কষ্ট সহ্য করে এখানে শিক্ষকতা করছি একটি আশায়। সরকার আমাদের প্রতিষ্ঠানটি তাদের তালিকাভুক্ত করলে আমাদের এই পরিশ্রমের মর্যাদা পাব।'
জানতে চাইলে ঈশ্বরদী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান যায়যায়দিনকে বলেন, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিয়ে সরকার আপাতত ভাবছেন না। কেননা সরকার ইতোমধ্যে আর কোনো বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে সরকারি অনুমোদন দেবে না মর্মে পত্র পাঠানো হয়েছে। তবে তারা সরকারি পাঠ্যপুস্তক পাবে।