সুখ নামে সোনার হরিণ ধরতে সুদূর মালেশিয়ায় গমন করেন মেহেরপুরের গাংনীর কাজিপুরের বাপ্পি রানা। স্থানীয় আদম ব্যবসায়ী মাজেদ মাস্টারের প্রলোভনে পড়ে ভিটেমাটি বিক্রি করে ও সমিতি থেকে চড়াসুদে ঋণ নিয়ে সবটুকু তুলে দেন তার হাতে। গেল তিন মাস মালেশিয়াতে গেলেও আজো কোনো কাজ মেলেনি। তাকে মালেশিয়ার সেরে ক্যাম্প বাগান নামক স্থানে একটি কক্ষে আটকে রাখা হয়।
শুধু বাপ্পি রানা নয়, তার মতো একই গ্রামের জুলহাসুর রহমান, তরিকুল ইসলাম মিলন রজনসহ ৭৪ জনকে সেরে ক্যাম্প বাগান নামক স্থানে, চেরাসে ১০৪ ও সালাক সালাকা শহরে ৬০সহ ২৩৮ জনকে আটকে রাখা হয়েছে। তাদের মূল কোম্পানির নামে কাগজপত্র তৈরি করলেও কোনো কাজ দেওয়া হয়নি।
সরেজমিন কাজিপুর হাড়াভাঙ্গা ও সাহেবনগরে গিয়ে জানা গেছে, শরিফুল ইসলাম নাড়া মেম্বর, আমিনুল ইসলাম শাহীন, হাফিজ কেরানী, মাসুদ, লিটন, হাসান আলী দপ্তরি ও মুনসুর আলীর সমন্বয়ে গঠিত চক্রটি ঢাকার বনানীতে অবস্থিত মুসা অ্যান্টারপ্রাইজ স্বত্বাধিকারী সাহেবনগরের আব্দুল আওয়ালের মাধ্যমে মালেশিয়াতে লোক পাঠায়। এরা মূল কোম্পানিতে না পাঠিয়ে তিনটি ক্যাম্পে আটকে রাখে। এর আগে তাদের পাসপোর্টসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিজেদের আয়ত্তে নেয়। গেল তিন মাসে তাদের দুই-তিনদিন পর পর খাবার ও পানি দেওয়া হয়। অত্যন্ত নিম্নমানের খাবার খেয়ে অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। দালালের মাধ্যমে মালেশিয়ায় গিয়ে কাজ না পেয়ে প্রতারনার স্বীকার হয়েছেন সবাই। দালালরা মোটা অংকের টাকা বেতনের প্রলোভন দিয়ে প্রতি জনের কাছ থেকে ৫ লাখ টাকা করে হাতিয়ে নেয়।
'আমরা মালেশিয়াতে না খেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছি। খাবার ও পানি সংকট। চারমাস কোনো কাজ পাইনি। প্রধানমন্ত্রী আমাদের দেশে ফেরার ব্যবস্থা করুন'- এমনি ভিডিও বার্তায় সোস্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে আকুতি জানান মালেশিয়ায় গমনকারী নিমস্বরণপাড়ার রশিদুল ইসলাম ও বাপ্পি রানা। তারা দুজনই মজিদ মাস্টারের মাধ্যমে মালেশিয়া গমন করে প্রতারিত হয়েছেন।
প্রতারণার শিকার রুবেলের স্ত্রী রাহেলা খাতুন জানান, ভিটেমাটি বিক্রি করা ছাড়াও বিভিন্নজনের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে বিদেশ গেছে রুবেল। গেল তিন মাসে কোনো কাজ পায়নি। একটি টাকাও দেশে পাঠাতে পারেনি। খাবার খরচের জন্য প্রতি মাসেই টাকা পাঠাতে হয় তার কাছে। একদিকে সংসারের কষ্ট, অন্যদিকে দেনাদারদের চাপ। সব মিলিয়ে দিশেহারা। এদিকে মুসা অ্যান্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী আব্দুল আওয়াল নিজেকে নির্দোষ দাবি করে জানান, মূল কোম্পানির জন্য এদের রিক্রুট করলেও চায়না কোম্পানির জন্য যুবকদের মালেশিয়া আনা হয়। এদের অনেককে কাজ দেওয়া হয়েছে। কিছুসংখ্যক ছেলে কাজে না গিয়ে নানাভাবে অন্যদের প্রভাবিত করায় তার অধীন ৮০ জন একটি ব্যারাকে রয়েছে। তবে নিয়মিত খাবার দেওয়া হচ্ছে।
এদিকে আটকে থাকা যুবকদের ফিরিয়ে আনার জোর প্রচেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার। তিনি জানান, ভুক্তভোগী পরিবার যদি আইনের আশ্রয় নেয় তাহলে সর্বাত্মক চেষ্টা করা হবে।