সোমবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে ওরা প্রতিদিন নিজেই নৌকা চালিয়ে যায় স্কুলে!

কাপ্তাই (রাঙামাটি) প্রতিনিধি
  ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে ওরা প্রতিদিন নিজেই নৌকা চালিয়ে যায় স্কুলে!

রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলার ৩নং চিৎমরম ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের দুর্গম কলাবুনিয়া মারমা পাড়ার মেয়ে পূর্ণিমা মারমা ও মাসিনু মারমা। তারা কাপ্তাই বিদু্যৎ উৎপাদন এলাকায় অবস্থিত শহীদ শামসুদ্দিন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত। একই পাড়ার মেয়ে সুইক্রাপ্রু মারমা এই বিদ্যালয়ে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে। আর হ্লাক্রইচিং মারমা ও উক্রাক্রো মারমা এই বিদ্যালয়ে পড়ে নবম শ্রেণিতে।

তবে তাদের স্কুলের আসার পথটা মোটেই সহজ নয়। কারণ এই কলাবুনিয়া পাড়া হতে প্রথমে কর্ণফুলি নদী পার হয়ে কাপ্তাই চৌধুরী ছড়া ফরেস্ট ঘাট নেমে অতপর প্রায় ১ কি.মি. সড়ক পথ হেঁটে তবেই স্কুলে পৌঁছাতে হয়। এই সড়ক পথে স্কুলে যেতে তাদের সহজতর হলেও সবচেয়ে কষ্টকর হয় নৌপথ। এই পাড়ায় কোনো প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক না থাকায় স্কুল পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা কাপ্তাইয়ের আশেপাশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়ালেখা করে। তারা নিজেরা বৈঠা হাতে নৌকা চালিয়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে এই কর্ণফুলী নদী পাড় হয়ে এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যায়।

সোমবার সকাল ৯টায় কাপ্তাই বিদু্যৎ এলাকার চৌধুরীছড়া ফরেস্ট ঘাট এলাকা গিয়ে দেখা যায়, স্কুলের ড্রেস পরিহিত শিক্ষার্থীরা নিজেরা বৈঠা হাতে নৌকা চালিয়ে এই ঘাটে ভিড়ছে। এ সময় পূর্ণিমা মারমা ও মাসিনু মারমা নামে দুই শিক্ষার্থী জানায়, 'আমরা কাপ্তাই শহীদ শামসুদ্দিন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণিতে পড়ি। প্রতিদিন সকাল সাড়ে ৮টায় কলাবুনিয়া পাড়া হতে বের হই। এরপর ছোট নৌকা করে নিজে বৈঠা টেনে আধা ঘণ্টা নৌপথ পাড়ি দিয়ে এবং ১ কি.মি. সড়কপথে স্কুলে আসি। বর্ষায় যেদিন অতিবৃষ্টি হয়, সেদিন আমাদের পাড়ার কেউ স্কুলে আসতে পারে না। কারণ ছাদ ছাড়া নৌকায় আমরা ভিজে যাই। আবার শুষ্ক মৌসুমে আরও একটা সমস্যা হয়, সেটা হলো এই নদীর মাঝখানে পানি শুকিয়ে চর জেগে ওঠে। তাই আমরা স্কুলে আসতে পারি না, ফলে আমাদের পড়ালেখার ব্যাঘাত ঘটে।'

এ সময় শিক্ষার্থী হ্লাক্রইচিং মারমা ও উক্রাক্রো মারমা জানায়, যখন নদীতে জোয়ার থাকে, তখন নৌকা চালাতে সহজ হয়। আবার ভাটা পড়ে গেলে নদীর কিনারে এসে অপেক্ষা করি কখন জোয়ার আসবে।

তারা সবাই একটি ছাদওয়ালা বোটের জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং প্রশাসনের প্রতি সু-দৃষ্টি কামনা করে। সেই সঙ্গে কর্ণফুলী নদী যাতে ড্রেজিং করে নব্য সংকট দূর হয় সেই দাবিও জানায়।

৩নং চিৎমরম ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের কলাবুনিয়া পাড়ার ইউপি সদস্য অংখেস মারমা বলেন, 'আমাদের এই পাড়ায় কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নেই। ছেলেমেয়েরা চিৎমরম এবং কাপ্তাই ইউনিয়নের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করে। একমাত্র নৌপথ দিয়ে ছোট নৌকা করে তারা কাপ্তাই ইউনিয়নের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়তে যায়। তবে কর্ণফুলী নদীতে নিজেরাই বৈঠা বেয়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে আসা-যাওয়া করে। তাদের জন্য বড় বোট থাকলে সবাই একসঙ্গে স্কুলে যেতে পারত।

কাপ্তাই শহীদ শামসুদ্দিন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. হানিফ এবং কাপ্তাই উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাহাবুব হাসান বাবু বলেন, 'এই কলাবুনিয়া পাড়া হতে অনেক শিক্ষার্থী আমাদের বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে। যেদিন প্রাকৃতিক দুর্যোগ হয়, সেদিন তারা স্কুল আসতে পারে না। কারণ কর্ণফুলী নদী পাড় হয়ে তাদের স্কুলে আসা সত্যিই দুরূহ ব্যাপার।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে