তিতাসে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের বই বাঁধাই উৎসব
প্রকাশ | ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
তিতাস (কুমিলস্না) প্রতিনিধি
কুমিলস্না তিতাসের মজিদপুর পশ্চিম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের বই বাঁধাই উৎসব চলছে। প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ১৫৪ জন শিক্ষার্থীর পাঠ্যবই বিনামূল্যে বাঁধাই করে দিচ্ছেন শিক্ষকরা। ব্যতিক্রমধর্মী এ আয়োজন শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও সচেতন মহলে প্রশংসার স্থান করে নিয়েছে।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তানজিনা আক্তার ও সহকারী শিক্ষক রণজিৎ দেবনাথ স্কুল ভবনের বারান্দায় টিফিন টাইমে বই বাঁধাই কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। পাশে ৪ জন চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী দাঁড়ানো। মূলত দাঁড়িয়ে থাকা শিক্ষার্থীদের বই বাঁধাই করে দিচ্ছেন শিক্ষকরা। বইয়ের দুই পাশে শক্ত মলাট (ওষুধ কোম্পানির লিটারেচার) দিয়ে সমান মাপে কেটে দিচ্ছেন প্রধান শিক্ষক। সহকারী শিক্ষক হাতুড়ি দিয়ে তারকাঁটার সাহায্যে বইয়ে তিনটি ছিদ্র করে, তাতে সুঁই সুতা দিয়ে বেঁধে নিচ্ছেন। পরে তিনি রেকসিনের কসটেপ দিয়ে সুতাকে ঢেকে দিচ্ছেন। আর সেই বই যখন শিক্ষার্থীর হাতে তুলে দেওয়া হয়, তখন শিশুরা আনন্দে ক্লাসে চলে যায়।
শিক্ষার্থী নিয়ে স্কুলে আসা সাহাবৃদ্ধি গ্রামের প্রমিতা রাণী দাস বলেন, 'আমার দুই ছেলেমেয়ে এ স্কুলে পড়ে। শিক্ষকরা তাদের বই সুন্দর করে বাঁধাই করে দিয়েছেন। ভেবেছিলাম বইগুলো এক বছর যাবে না, তবে বাঁধাই করার কারণে তা আর নষ্ট হবে না।'
সহকারী শিক্ষক রণজিৎ দেবনাথ জানান, 'বিভিন্ন ফার্মেসি থেকে আমাদের চাহিদামতো লিটারেচার (ওষুধ কোম্পানির শক্ত মলাট) সংগ্রহ করে নিয়েছি। স্কুল তহবিল থেকে বাকি সরঞ্জামগুলো কেনা হয়েছে। তেমন একটা খরচ হয় না, শুধু আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করলে বইগুলো টেকসই রাখা যাবে। কাজটি ধারাবাহিকভাবে করছি, যা আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে শেষ হবে।'
প্রধান শিক্ষক তানজিনা আক্তার বলেন, অনেক অভিভাবক তাদের শিশুদের বই মলাট দিয়ে স্টপলার করে দেন, যা কিছুদিন পর ছিঁড়ে যায়। অনেক শিশু বছরের শেষ পর্যন্ত বই রাখতে পারে না। তাই আমরা ঠিক করলাম বইটি মলাট না করে বাঁধাই করে দেব। যাতে বইটি সারাবছর টেকসই থাকে। গত বছর থেকে ধারাবাহিকভাবে এই উৎসবটা করছি। এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে কোন টাকা নেওয়া হয় না। বরং শিক্ষকরা উৎসাহ নিয়েই এ কাজটি করে যাচ্ছেন।'
বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি জোবায়দা আক্তার জানান, 'প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বাবা-মারা এতটা সচেতন না। ওদের বইগুলো অনেক সময় ছিঁড়ে যায়, নষ্ট হয়ে যায়, বছর শেষে পড়তে একটু সমস্যা হয়। সেই চিন্তা থেকে আমার প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকমন্ডলী বিনামূল্যে বই বাঁধাই উৎসবের আয়োজন করেন।'
উপজেলা শিক্ষা অফিসার লায়লা পারভীন বানু বলেন, 'মজিদপুর পশ্চিম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের উদ্যোগটি অবশ্যয় প্রশংসনীয়। শিক্ষকদের সঙ্গে আলাপ করে এই বই বাঁধাই উৎসব প্রতিটি বিদ্যালয়ে চালু করা যায় কিনা চেষ্টা করব।'