আবর্জনায় ভরা 'বাসিয়া নদী' লাইফ সাপোর্টে!

প্রকাশ | ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০

বিশ্বনাথ (সিলেট) প্রতিনিধি
সিলেটের বিশ্বনাথে ময়লা-আবর্জনায় অস্তিত্ব সংকটে থাকা 'বাসিয়া নদী' -যাযাদি
সিলেটের বিশ্বনাথে এক সময়ের খরস্রোতা 'বাসিয়া নদী' বিলীন হওয়ার পথে। অবৈধ দখল এবং আবর্জনার স্তূপে তৃষ্ণার্ত বাসিয়া যেন 'লাইফ সার্পোটে' রয়েছে। আবর্জনা ফেলে নদী ভরাট করায় স্বাস্থ্যঝুঁঁকির পাশাপাশি পানি সংকটে চাষাবাদে বিপাকে পড়ছেন কৃষকরা। এক সময় বাসিয়া নদী দিয়ে নৌকা, বড় বড় লঞ্চ আর স্টিমারে পণ্য পরিবহণ করা হতো। ৫৬ কিলোমিটার দীর্ঘ ও ২০০ মিটার (৬০০ফুট) প্রস্থ ছিল নদীটি। এখন নৌকা-লঞ্চ তো নেই-ই শুকনো মৌসুমে একটু পানিও থাকে না নদীতে। সুরমা নদী তীরবর্তী মাসুকগঞ্জ বাজার থেকে বাসিয়া নদী উৎপত্তি হয়ে জালালাবাদ-দক্ষিণ সুরমা-বিশ্বনাথ-ওসমানীনগর-জগন্নাথপুরের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করে রাণীগঞ্জের স্বাধীন বাজার নামক স্থানে কুশিয়ারা নদীতে মিলিত হয়েছে। এ পাঁচটি উপজেলাবাসীর একমাত্র পানি নিষ্কাশনের মাধ্যম হচ্ছে এই নদী। বেশ কয়েক বছর ধরে সিলেটের জালালাবাদ থানার মাসুকগঞ্জ বাজারে বাসিয়া নদীর উৎসমুখ বন্ধ করায় এবং বিশ্বনাথসহ বিভিন্ন এলাকায় নদীর দুই তীর অবৈধভাবে দখল ও ভরাট করায় শুকনো মৌসুমে সুরমা নদী থেকে পানি প্রবেশ করতে পারে না। ফলে নদীটি একটি মরা খাল বা ড্রেনে পরিণত হয়েছে। বাসিয়া নদী ছাড়াও রয়েছে মাকুন্দা, বিশ্বনাথ-রামপাশা খাল পুন:খনন এবং বিশ্বনাথ বাসিয়া নদীর দুই তীরের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করতে এবং নদী রক্ষায় বিভিন্ন সংগঠন সামাজিক আন্দোলনের মাধ্যমে দাবি করে যাচ্ছে। এগুলো প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমানের হস্তক্ষেপে বাস্তবায়ন করার দাবি জানান বিশ্বনাথবাসী। উপজেলা ভূমি অফিস জানায়, বিশ্বনাথে বাসিয়া নদীর দুই তীরে গড়ে ওঠা বিভিন্ন স্থাপনা উচ্ছেদ করতে জেলা প্রশাসকের কাছে ১৮৭ জনের নামে মামলা চলমান রয়েছে (মামলা নং০৪/২০১৭)। কিন্তু প্রায় ৭ বছর অতিবাহিত হলেও এখনও সেই অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়নি। এই মামলার বিরুদ্ধে দখলকারীরা হাইকোর্টে দুটি রিট আবেদন করেছেন (রিট মামলা নং- ৯১৩৫/২০১৭ ও ৫৩৪০/২০১৭ চলমান)। বিশ্বনাথ বাজারের আবুল হাসানসহ কয়েকজন ব্যবসায়ী বলছেন, ময়লা ফেলার জন্য নির্ধারিত স্থান না থাকায় বাধ্য হয়ে নদীতে ফেলছেন তারা। মেয়র ময়লা ফেলার একটি ডাস্টবিন রাখলেও সেটি ছোট থাকায় ময়লায় ভরে যায়। ব্যবসায়ীদের ময়লা ফেলার একটি জায়গা দেওয়ার দাবি জানান ব্যবসায়ীরা। 'বাচাও বাসিয়া ঐক্য পরিষদের' আহ্বায়ক ফজল খান জানান, বাসিয়া নদী রক্ষা করতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করছেন তারা। পৌর মেয়রকে অবৈধ স্থাপনার তালিকাসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এখনও কোনো কাজ হয়নি। বিশ্বনাথ ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য শেখ ফজর রহমান বলেন, উপজেলাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি বিশ্বনাথ পৌরসভার প্রাণকেন্দ্র বাসিয়া নদীর দুই তীরে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে নদীর নাব্য ফিরিয়ে আনা। নাব্য ফিরে না এলে পরিবেশ তথা মানুষের জীবন হুমকির মুখে পড়বে। প্রবীণ সাংবাদিক আব্দুল আহাদ বলেন, বিশ্বনাথবাসী সুন্দর পরিবেশে বাঁচার তাগিদেই বাসিয়া নদীর সব অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করে এ অঞ্চলের কৃষি ও মৎস্য সম্পদ রক্ষার জন্য বাসিয়া নদীর নাব্য ফিরিয়ে আনার কোনো বিকল্প নেই। বিশ্বনাথ উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. দিলোয়ার হোসেন সুমন বলেন, বাসিয়া নদী এখন মহামারি অবস্থায় আছে। এ নদীর ময়লা-আজর্বনা থেকে মানুষের মধ্যে হাঁপানি-শ্বাসকষ্ট, চর্মরোগসহ বিভিন্ন ধরনের রোগজীবাণু ছড়াতে পারে। ভবিষ্যতে স্কিন ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ারও ঝুঁকি বেশি। বিশ্বনাথ পৌর মেয়র মুহিবুর রহমান বলেন, ময়লা আবর্জনা ফেলতে স্থায়ীভাবে কোন ব্যবস্থা করা যাচ্ছে না। ময়লা ফেলার জন্য ছোট, বড়, মাঝারী সাইজের ডাস্টবিন দিয়েছি। ব্যবসায়ীরা চাইলে আরও দেব। আগামী মাস থেকে ব্যবসায়ীদের উপর জরিমানা শুরু হবে। তখন হয়ত নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে। হাইকোর্টে রিট মামলা শেষ না হওয়া পর্যন্ত অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করা যাচ্ছে না। মামলা শেষ হলেই উচ্ছেদ অভিযান শুরু হবে। উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সম্রাট হোসেন বলেন, বাসিয়ার নদীর দুইতীরে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ মামলা রয়েছে। কিন্তু দখলকারীরা হাইকোর্টে রিট মামলা করায় অভিযান স্থগিত রয়েছে। তবে রিট মামলার শেষে সিদ্ধান্তানুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী এমপি বলেন, 'সরকারের বড় একটি উদ্যোগ হচ্ছে নদীর উদ্ধার করা। নদী রক্ষায় আমরা সর্ব্বোচ্চ চেষ্টা করছি। ইতিমধ্যে নদী খনন করতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) প্রকৌশলীর সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। অবৈধ দখল উচ্ছেদ করতে হবে এবং জলবায়ুর ভারসাম্য রক্ষায় দেশের নদী-খাল উদ্ধার করতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ রয়েছে।'