সোমবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

কৃষকদের মধ্যে আশা জাগাচ্ছে রঙিন ফুলকপি-বাঁধাকপি

স্বদেশ ডেস্ক
  ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
পাবনার ঈশ্বরদী ও ময়মনসিংহের গৌরীপুরে রঙিন ফুলকপি ও বাঁধাকপি হাতে কৃষক -যাযাদি

পাবনার ঈশ্বরদী, দিনাজপুরের ফুলবাড়ী ও ময়মনসিংহের গৌরীপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় কৃষকদের মধ্যে আশা জাগাচ্ছে রঙিন ফুলকপি ও বাঁধাকপি। নতুন এসব সবজিতে ক্রেতার চাহিদা বেশি হওয়ায় ও দাম ভালো পাওয়ায় তা চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন কৃষকরা। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে বিস্তারিত-

ঈশ্বরদী (পাবনা) প্রতিনিধি জানান, সাদা নয়, হলুদ আর বেগুনি ফুলে রঙিন হয়েছে কৃষকের ক্ষেত। হলুদ বা কেরটিনা, বেগুনি বা ভেলেনটিনা এই দুই জাতের রঙিন ফুলকপি চাষ করে আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন ঈশ্বরদীর কৃষক শফিকুল ইসলাম। উপজেলায় তিনিই প্রথম এই রঙিন জাতের ফুলকপি চাষ করায় প্রতিদিন তার জমিতে উৎসুক জনতা ভিড় করছে। জমি থেকেই কেউ কেউ কিনছেন শখের এই সুস্বাদু রঙিন ফুলকপি।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার সলিমপুর ইউনিয়নের চরমিরকামারী মাথালপাড়া গ্রামের আ. সাত্তারের ছেলে কৃষক শফিকুল ইসলাম নতুন জাতের রঙিন ফুলকপি চাষ করে তাক লাগিয়েছেন।

জানতে চাইলে কৃষক শফিকুল ইসলাম যায়যায়দিনকে বলেন, 'রঙিন ফুল কপির কথা আমি লোক মুখে শুনেছিলাম। এরপর সামান্য জমিতে চাষ করার উদ্যোগ নেই। কিন্তু রঙিন ফুলকপির বীজ দুষ্প্রাপ্য ও অনেক মূল্য হওয়ায় উপজেলা কৃষি অফিসের সহযোগিতা চাই। কিন্তু সেখান থেকে কোনো সাহায্য না পেয়ে রঙিন ফুলকপির চাষের স্বপ্ন যখন শেষ ঠিক তখনই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে এগিয়ে আসে বে-সরকারি প্রতিষ্ঠান জাগরণী চক্র ফাউন্ডেশন, দাশুড়িয়া শাখা। তাদের সহযোগিতায় ১০ কাঠা জমিতে বেগুনি ও হলুদ রঙিন জাতের ফুলকপির চাষ করি। ফলনও বেশ ভালো হয়েছে। চাহিদার তুলনায় দামও ভালো পেয়েছি। খেতে সু-স্বাদু হওয়ায় অনেকেই ক্ষেত থেকেই সংগ্রহ করছেন উচ্চ মূল্যে। কেউ সংগ্রহ করছেন শখের বসে। সব মিলিয়ে বেশ ভালো আয় করেছি এই রঙিন ফুলকপিতে।

ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কৃষি কর্মকর্তা মিতা রানী সরকার বলেন, আমাদের মাধ্যমে কোন কৃষককে রঙিন কপি চাষে সহযোগিতা করা হয়নি। তবে আমরা জানতে পেরেছি উপজেলায় বেসরকারি সংস্থা জাগরণী ফাউন্ডেশন কিছু কৃষককে সহযোগিতা করেছে।

ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) প্রতিনিধি জানান, দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলায় বেগুনি রংয়ের রঙিন জাতের বাঁধাকপি প্রথমবারের মতো চাষ করে সাড়া ফেলেছেন উপজেলার মিলন রানা নামে এক কৃষক।

দিনাজপুর অঞ্চলে টেকসই উন্নয়ন প্রকল্পের অধীনে উপজেলার কৃষি অধিদপ্তরের সার্বিক তত্ত্বাবধানে প্রথমবারের মতো খয়েরবাড়ী ইউনিয়নের খয়েরবাড়ী ডাঙ্গা গ্রামের কৃষক মিলন রানা ২০ শতাংশ জমিতে পরীক্ষামূলক রঙিন জাতের বাঁধাকপি রুবি-কিং চাষ করেন। প্রথমবারের চাষেই ব্যাপক সাফল্য আসায় অন্য কৃষকদের মাঝে ব্যাপক আগ্রহ সৃষ্টি করেছে।

এ কপি চাষে দ্বিগুণের বেশি লাভ আশা করছেন কৃষক মিলন রানা। তিনি বলেন, সাধারণ বাঁধা কপির তুলনায় রঙিন জাতের এ কপি বাজারে দাম ও চাহিদা বেশি।

কৃষক মিলন রানা বলেন, উপজেলা কৃষি অফিসের পরমার্শ ও সহায়তায় তিনি ২০ শতক জমিতে এ কপি চাষ করেন। কৃষি অফিসের সরবরাহকৃত ৭৫০টি চারা, জৈব বালাই নাশক, কেঁচো সার, ফেরোফিন ফাঁদ ও জৈব স্প্রের মাধ্যমে সম্পূণ অর্গানিক পদ্ধতিতে এই রঙ্গিন কপি চাষ করা হয়েছে। এই বাঁধাকপিগুলো ৮০-৯০ দিনের মধ্যে পরিপক্ব হয়ে বিক্রির উপযোগী হয়ে ওঠে। এ কপি দেখতে যেমন রঙিন, সুন্দর ও স্বাদে হালকা মিষ্টি। সালাত হিসেবেও খাওয়া যায়। তিনি সবেমাত্র কাঁটতে শুরু করেছেন। বাজারে ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে এ কপি বিক্রি হচ্ছে।

উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ রুম্মান আক্তার বলেন, 'দিনাজপুর অঞ্চলে টেকসই উন্নয়ন প্রকল্পের অধীনে' প্রথমবারের মতো এ বছর উপজেলায় পরীক্ষামূলক একজন কৃষকের ২০ শতাংশ জমিতে রঙিন জাতের বাঁধাকপি রুবি-কিং চাষ করা হয়েছে এ কপিতে সাফল্য আসায় আগামীতে এ জাতের কপির চাষ বৃদ্ধি করা হবে।

কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ রুম্মান আক্তার কৃষকের কপি ক্ষেত পরিদর্শন করে ফলন ভালো হয়েছে বলে জানান।

গৌরীপুর (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি জানান, বিষমুক্ত রঙিন ফুলকপি-বাঁধাকপি আর ব্যতিক্রমী ফুল উৎপাদন করেছেন মডেল কৃষক মো. শহিদুলস্নাহ (৪৮)। ধানের চেয়ে সবজি উৎপাদনে লাভ ১০গুণ। উৎপাদন খরচ এক হলেও রঙিন সবজিতে লাভ হয় দ্বিগুণ। স্বল্প সময়ে অধিক ফলন ও পরিত্যক্ত জমির শতভাগ ব্যবহার, একই জমিতে একাধিক ফসল উৎপাদন করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তিনি। তার ফসলি জমি দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে আগ্রহী কৃষকরাও ছুটে আসছেন। তিনি ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার ডৌহাখলা ইউনিয়নের তাঁতকুড়া গ্রামের আবুল হাসিমের ছেলে।

গবেষণায় বলছে, রঙিন সবজিতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে, যা ক্যান্সারের সেল বৃদ্ধিতে বাধাগ্রস্ত করে। ফলে রঙিন ফসলের রয়েছে বাজারে ব্যাপক চাহিদা ও মূল্য দ্বিগুণ।

কৃষক শহিদুলস্নাহ জানান, এ বছর ২৫ শতক জমিতে সাদা রঙের ফুলকপি, ২০ শতক জমিতে রঙিন ফুলকপি ও ১৫ শতক জমিতে রঙিন বাঁধাকপি চাষ করেছেন। সাদা রঙের ফুলকপি ও রঙিন ফুলকপির উৎপাদন খরচ একই। বাজারে সাদা ফুলকপি ৩০-৪০ টাকা দরে বিক্রি হয়। আর রঙিন ফুলকপি বিক্রি হয় ৬০ টাকা থেকে ৮০ টাকায়। রঙিন ফসলে দ্বিগুণ লাভ। এ জমিতে ধান উৎপাদন করলে যে লাভ হতো শাকসবজি আবাদ করে তার চেয়ে ১০ গুণ বেশি লাভ হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, ফসল উৎপাদনে ক্ষতিকর বিষ কখনও ব্যবহার করি না। জৈব বালাইনাশক ও প্রাকৃতিক বালাইনাশক ব্যবহার করলে নিরাপদ খাদ্য উৎপদান করে এতে জীবনও নিরাপদ থাকে।

এ প্রসঙ্গে উপজেলা উপসহকারী কৃষি অফিসার সুমন চন্দ্র সরকার জানান, মো. শহিদুলস্নাহ হলেন নুতন ভ্যারাইটিজ কৃষক। নতুন কোনো ফসলের খবর পেলেই তিনি সেটা চাষ করে থাকেন। সেই ধারাবাহিকতায় এ উপজেলায় প্রথম লাল বাঁধা কপি, রঙিন ফুলকপি ও ফুল চাষ করেছেন।

উপজেলা কৃষি অফিসার নিলুফার ইয়াসমিন জলি জানান, রঙিন ধরনের ধান-শাকসবজির প্রতি কৃষক শহিদুলস্নাহ'র আগ্রহ অনেক বেশি। সে জন্য তিনি প্রথমদিকে রঙিন ফুল ও বাঁধা কপি'র চাষ করে অধিক লাভবান হয়েছেন। আমরা চাই সব কৃষকের মাঝে তথ্য-প্রযুক্তির নতুনত্ব পৌঁছে দিতে। সেই লক্ষ্যে কাজ করছি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে