শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১

মাতামুহুরী নদীর ২২০০ মিটার প্রতিরক্ষা বাঁধ হওয়ায় স্বস্তি

বন্যা পরবর্তী ভাঙন থেকে রক্ষা
চকরিয়া (কক্সবাজার) প্রতিনিধি
  ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
কক্সবাজারের চকরিয়ায় মাতামুহুরী নদী তীরের ২২০০ মিটারজুড়ে নির্মাণ করা বাঁধ -যাযাদি

কক্সবাজারের চকরিয়ার মাতামুহুরী নদী তীরের ২২০০ মিটারজুড়ে পাউবো কর্তৃক সফল প্রতিরক্ষা বাঁধ নির্মাণ কাজ বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এর ফলে তীরবর্তী দুই ইউনিয়ন লক্ষ্যারচর ও কৈয়ারবিল ইউনিয়নের হাজারো পরিবারের নির্বিঘ্নে বসবাস, শত শত একর ফসলি জমির আবাদ নিয়ে দূর হয়েছে শত বছরের দুঃখ। এবারের বন্যা এবং পরবর্তী সময়ে রক্ষা পেয়েছে ইউনিয়ন দুইটির বিশাল অংশ। রক্ষা পেয়েছে শত শত একর জমির ফসলও।

দুই ইউনিয়নের ভুক্তভোগীরা জানান, নদী তীরের এই দুই ইউনিয়নের প্রায় দুই কিলোমিটার প্রতিনিয়ত ভাঙনের কবলে পড়ে নিঃস্ব হচ্ছিল একের পর এক পরিবার। প্রতিবছর বন্যার তান্ডবের পর ভয়াবহ ভাঙনের কবলে পড়ে আর যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেজন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) মাতামুহুরী নদীর তীর সংরক্ষণে একটি টেকসই প্রকল্প হাতে নেয়। অবশেষে টেকসইভাবে সেই প্রকল্প বাস্তবায়ন হওয়ায় এবারের বন্যায় দুই ইউনিয়নের প্রায় দুই কিলোমিটার জুড়ে তেমন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি বললেই চলে। এতে নদী তীরে বসবাসকারী হাজারো পরিবার, তৎসংলগ্ন শত শত একর জমির ফসলও রক্ষা পাওয়ায় মানুষগুলো বেশ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন।

পাউবোর বান্দরবানের নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্র জানায়- পার্বত্য অববাহিকার মাতামুহুরী নদীতে প্রতিবছর বর্ষায় উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে ভয়াবহ বন্যা দেখা দেয় চকরিয়ায়। এমনকি বন্যা পরবর্তী ভয়াবহ ভাঙনের কবলে পড়ে প্রতিনিয়ত নদীগর্ভে তলিয়ে যায় বসতবাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় স্থাপনাসহ ফসলি জমিও। এই অবস্থায় ভাঙনের কবল থেকে মাতামুহুরী নদীর দুই তীরের উপজেলার লক্ষ্যারচর ও কৈয়ারবিল ইউনিয়নের দুই কিলোমিটার এলাকা টেকসইভাবে তীর সংরক্ষণে পরিকল্পিতভাবে প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়।

পাউবো জানায়- চারটি প্যাকেজে ভাগ করে ২২০০ মিটার দীর্ঘ এই প্রতিরক্ষা কাজের বাস্তবায়ন শুরু হয় ২০২২ সালের ২৪ জুন থেকে। একবছরের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়া দুই প্যাকেজের কাজ বাস্তবায়নে গত বছরের আগস্ট পর্যন্ত কাজ চালায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এই কাজ বাস্তবায়নে নিয়োগ করা হয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স জামান ব্রাদার্স, মেসার্স ইসমাইল হোসেন, মেসার্স চকরিয়া ডেভেলপমেন্ট সোসাইটিকে।

৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে সফল বাস্তবায়ন হওয়া এই কাজের ফলে এবারের বন্যায় রক্ষা পেয়েছে প্রায় ৫০০ হেক্টর জায়গার ফসলি জমি, ঘরবাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় স্থাপনাসহ সরকারি-বেসরকারি নানা স্থাপনা।

কাজ বাস্তবায়নকারী একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার বলেন, 'ছোট থেকে নদী তীরেই বড় হয়েছি। প্রতিবছর বন্যায় কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়েছেন এখানকার মানুষ তা অনুধাবন করেছি। তাই নদী তীরের এই প্রতিরক্ষা কাজ যাতে টেকসইভাবে বাস্তবায়ন করা যায়, সেজন্য খুব সচেষ্ট ছিলাম।'

কৈয়ারবিল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মক্কী ইকবাল হোসেনসহ দুই ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধিরা বলেন, এই প্রতিরক্ষা কাজ খুবই দরকার ছিল। কারণ প্রতিবছর বন্যায় মানুষের ঘরবাড়িসহ বিভিন্ন স্থাপনা নদীগর্ভে তলিয়ে গিয়েছিল।

প্রতিরক্ষা বাঁধের কাজের তদারকের দায়িত্বে থাকা পাউবোর উপ-সহকারী প্রকৌশলী নিকু জ্যোতি চাকমা বলেন, 'মাতামুহুরী নদী তীরের এই প্রতিরক্ষা বাঁধের কাজটি যাতে নকশা ও সিডিউল অনুযায়ী সম্পন্ন হয় সেজন্য সার্বক্ষণিক নজরদারি ছিল।'

এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ড বান্দরবানের নির্বাহী প্রকৌশলী অরূপ চক্রবর্তী বলেন, 'সরকারি টাকার যাতে অপচয় না হয় সেজন্য মাতামুহুরী নদী তীরের এই প্রতিরক্ষা বাঁধের কাজ শতভাগ টেকইসভাবে বাস্তবায়ন করা হয়। কাজ শেষ হওয়ার পর পাউবো'র সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন প্রকৌশলীরা এসে সরেজমিন পরিদর্শন করেন। এরপর ঠিকাদারের অনুকূলে বিল ছাড় করা হয়।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে