বোরহানউদ্দিন উপজেলার গঙ্গাপুর ইউনিয়নে এলজিইিডি'র বাস্তবায়নাধীন এক কোটি ৪৩ লাখ ৩০ হাজার ৫৮৪ টাকা ব্যয়ে মৌলভীর হাঁট টু গঙ্গাপুর ইউনিয়ন পরিষদ পর্যন্ত সড়ক পুনর্বাসন কাজের প্যালাসাইডিং (প্রতিরোধ দেয়াল) কাজে নয়-ছয়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ নিয়ে এলাকায় ক্ষোভ বিরাজ করছে। গত ৯ জানুয়ারি ওই কাজের ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে উপজেলা প্রকৌশলী মাইদুল ইসলাম সংবাদকর্মীদের বলেন, কিছুটা ছাড় দেওয়া না হলে ঠিকাদাররা ওই কাজ ফেলে চলে যাবে; রাস্তাই করানো যাবে না। পাশাপাশি তিনি বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখবেন বলেও জানান।
ধারিয়া গ্রামের মো. কামাল, কাঞ্চন খান, নুরুল ইসলাম ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, 'পাথরের বদলে আমরা সিমেন্টের খোয়া আনতে দেখেছি। আশপাশে বাড়ি হওয়ায় কী দিয়ে কাজ করে সবই আমরা দেখছি। মাটি হতে বেইজে কোনো সিসি ঢালাই দেয়নি।'
আজিজল আলী মাতাব্বর, শাহজাহান মুন্সি দুটি স্পটে প্রতিরোধ দেয়াল দেখিয়ে বলেন, 'পুকুরের ভাঙনের স্থানে না দেওয়ায় এ প্রতিরোধ দেয়াল কোনো কাজেই আসবে না। আমরা সামনের দুটি স্থানের পুকুরের ভাঙনে দেবে যাওয়া সড়কের পাশে প্রতিরোধ দেয়াল করার অনুরোধ করলে ঠিকাদার কাজ ফেলে চলে যাবেন বলে চেঁচিয়ে ওঠেন।' তারা আরও জানান, এ সড়কটি আসলে তেঁতুলিয়া নদীর বেড়িবাঁধ। বর্ষায় জলোচ্ছ্বাস হলে কাজ যদি টেকসই না হয় তাহলে প্রকল্পের কাজে সুফল আসবে না।
গত ১০ জানুয়ারি একই রকম অভিযোগ পেয়ে গণমাধ্যমকর্মীরা উপজেলা প্রকৌশলীর দপ্তরে যান। তার কাছে ওই কাজের প্রাক্কলন (ইস্টিমেট) ও কার্যাদেশ চাইলে তথ্য অধিকার আইনে নির্দিষ্ট ফরমে আবেদন করতে বলেন। গত ১১ জানুয়ারি আবেদন করলে ১৮ জানুয়ারি তিনি আবেদিত নথি সরবরাহ করেন। গত জাতীয় নির্বাচনের পর কিছুদিন বন্ধ থাকার পর ওই কাজ শুরু হলে কোন উনিশ-বিশ হয়নি। গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর ওই ঠিকাদার ওই নির্মাণ কাজের জন্য পাথরের পরিবর্তে ভবন ভাঙ্গা কংক্রিট আনেন। পাথরের সাইজের আকারে কেটে সাইট এলাকায় স্তূপ করেন। বিষয়টি জানাজানি হলে সাইটের দায়িত্বরত উপ-সহকারী প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম এসে ভাঙ্গা কংক্রিট সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দেন।
বোরহানউদ্দিন উপজেলার গঙ্গাপুর ইউনিয়নের মৌলভীর হাঁট-গঙ্গাপুর ইউনিয়ন পরিষদ পর্যন্ত সড়ক পুনর্বাসন কাজের কার্যাদেশ পায় মেসার্স বিসমিলস্নাহ ট্রেডার্স। এক কোটি ৪৩ লাখ ৩০ হাজার ৫৮৪ টাকার সড়ক পুনর্বাসন কাজের মধ্যে সড়কের পাশে ২৬৬ মিটার প্যালাসাইডিং কাজের ব্যয় ধরা হয়েছে ২৩ লাখ ৮৯ হাজার ৮৩০ টাকা। পালাসাইডিং কাজের গঙ্গাপুর ইউনিয়ন পরিষদের সামনের সড়ক দিয়ে বেড়িবাঁধ কাম সংযোগ সড়কের তসলিম মাস্টারের বাড়ির পুকুর থেকে ফখরুল মৌলভীর বাড়ির পুকুর হয়ে শরীফ বাড়ির পুকুর পর্যন্ত পালাসাইডিং কাজ হয়েছে অনুমোদিত প্রাক্কলনকে পকেটে পুরে।
দুই দফায় সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, পুকুর পাড়ে শ্রমিকরা সদ্য নির্মাণ করা ১০ ইঞ্চি ব্রিক ওয়াল বরাবর ৯ ফুট দৈর্ঘ্যের আরসিসি খুঁটি পুঁতছেন। প্রাক্কলন অনুযায়ী ব্রিক ওয়ালের নিচে বেইজে ৩ ইঞ্চি সিসি ঢালাই দেওয়ার কথা থাকলেও এক ইঞ্চিও দেওয়া হয়নি। সরাসরি ব্রিক ওয়াল করা হয়েছে। কর্মরত শ্রমিকদের প্রধান জসিম জানান, 'নিচে সিসি ঢালাই দেইনি, ঠিকাদার যেমন কইছে আমরা হেইভাবেই কাজ করতেছি।' অন্যদিকে ওই ৩ ইঞ্চি সিসি ঢালাই হতে এক মিটার(৩ দশমিক ৪ ইঞ্চি) দৈর্ঘ্যের প্রথম অর্ধেক ১৫ ইঞ্চি ও শেষ ভাগে ১০ ইঞ্চি ব্রিক ওয়ালের প্রাক্কলন থাকলেও পুরো ওয়াল করা হয়েছে ১০ ইঞ্চি। যেখানে ওয়ালের উচ্চতা থাকার কথা ৩ দশমিক ৭ ইঞ্চি সেখানে উচ্চতা পাওয়া যায় মাত্র ২ ইঞ্চি।
প্রাক্কলন অনুযায়ী ৮ ইঞ্চি বাই ৬ ইঞ্চি পাথরের সিসি ক্যাপিং বিম দেওয়ার কথা। সেখানে দেওয়া হয়েছে সাড়ে ৬ বাই ৬ ইঞ্চি। এছাড়া সিমেন্ট, বালুর অনুপাত ঠিকমতো না দেওয়াসহ কিউরিং না করায় হাত দিয়ে ঘষা দিলেই বীমের থেকে বালু খসে পড়তে দেখা গেছে।
এ ব্যাপারে দায়িত্বরত উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, গত বছরের ১৪ নভেম্বর ঠিকাদারকে ত্রম্নটি সংশোধনের জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কাজ হয়েছে ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারির মধ্যে। মেসার্স বিসমিলস্নাহ ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী আকতার হোসেন কবির জানান, ওই কাজ তিনি ভোলা সদরের মো. ইব্রাহিমের কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন। অনিয়মের বিষয়ে তিনি কোনো চিঠি পাননি।
কাজের ক্রেতা মো. ইব্রাহিম অনিয়মের বিষয় স্বীকার করে জানান, যে যে স্থানে কাজ সঠিক হয়নি- তা মেরামত করে দেবেন।
গঙ্গাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রেজাউল করিম রিয়াজ জানান, স্থানীয়রা অনিয়মের বিষয়টি জানালে তিনি সরেজমিন গিয়ে ব্যাপক অনিয়ম দেখতে পান। উপজেলা প্রকৌশলীকে বিষয়টি জানাতে দুইদিন অফিসে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি।
উপজেলা প্রকৌশলী মাইদুল ইসলাম খান জানান, 'এখন পর্যন্ত ঠিকাদার আমাদের কাজ বুঝিয়ে দেয়নি। ঠিকাদার যদি প্রাক্কলন বহির্ভূত কোন কাজ করেন তার বিরুদ্ধে যেকোনো বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।'