চট্টগ্রামের রাউজানের উত্তরাংশের ফটিকছড়ির সীমানা বিভক্তকারী সর্তা খালের পানির ওপর নির্ভরশীল দুই পাড়ের অনেক কৃষকের চাষাবাদ। খালটি এখন শুকিয়ে বালুতে পরিণত হয়ে পানি সংকটে পরেছে কৃষকরা।
খালের রাউজান অংশের হচ্চারঘাট এলাকায় সরেজমিন দেখা যায়, কয়েক কিলোমিটার দৃষ্টিসীমার মধ্যে খালটির তলদেশ মরুময়। দুই পাড়ের কৃষকরা ফসলিজমি, ক্ষেত-খামারে পানির জন্য খালের তলদেশে স্যালো পাম্প বসিয়ে রাখলেও পাচ্ছে না পানি। খালপাড়ের চাষাবাদ করে যারা জীবন নির্বাহ করেন তারা বলেছেন খালের পানিতেই তাদের জীবন-জীবিকা। শীত মৌসুমে দুইপাড়ে কৃষকদের উৎপাদিত সবজি চট্টগ্রাম অঞ্চলের চাহিদা পূরণ করে। কয়েকশ' একর জমিতে চাষাবাদ হয় বোরো ধান। এবার শীত মৌসুমে যারা চাষাবাদ করেছে পানি অভাবে তাদের জমি শুকিয়ে মরতে শুরু করেছে।
খবর নিয়ে জানা যায়, এই খালের উৎপত্তিস্থল পার্বত্য জেলার দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চল থেকে। খালটি রাউজানের হলদিয়া, নোয়াজিশপুর, গহিরা, ফটিকছড়ির নানুপুর, খিরাম, বক্তপুর, ধর্মপুর, আবদুলস্নাহপুর হয়ে রাউজানের গহিরায় এসে হালদা নদীর সঙ্গে মিলিত হয়েছে।
রাউজানের হলদিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা শফিকুল ইসলাম বলেছেন, প্রচীণকাল থেকে এই খালের মাধ্যমে পাহাড়ি অঞ্চল থেকে ঝিরঝির ধারায় পানি নেমে আসত নিচের দিকে। এই পানিতে কৃষকরা হাজার হাজার হেক্টর জমিতে চাষাবাদ করত। গত কয়েক বছর থেকে খালটির পূর্বাংশে নির্বিচারের পাহাড় কাটা ও পাহাড়ের ধসে খালটির তলদেশ বালুতে ভরাট হয়ে গেছে। এ কারণে নিচের দিকে পানি নেমে আসতে পাচ্ছে না। তিনি মনে করেন কৃষকদের জীবনধারা সচল রাখতে খালের তলদেশ থেকে বালু উঠিয়ে স্বাভাবিক পানি প্রবাহ নিশ্চিত করা না গেলে অদুর ভবিষ্যতে দুই পাড়ের হাজার হাজার কৃষক তাদের জমি অনাবাদি রেখে দেবে।
নোয়াজিশপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সরোয়ার্দ্দি সিকদার বলেছেন, তার ইউনিয়নের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া সর্তা খালের বিশাল অংশ ভরাট হয়ে যাওয়ায় শুষ্ক মৌমুমে পানির অভাবে মানুষ চাষাবাদ করতে পারছেন না। আবার বর্ষার সময় এই খাল হয়ে তীব্র স্রোতে পাহাড়ি পানি নামতে গিয়ে দুই পাড় ভাঙছে। তিনি জানান, এই পরিস্থিতিতে ভরাট হওয়া খালের অংশ পরিষ্কার করা হচ্ছে, ভাঙন রোধে বাঁক কেটে পানি প্রবাহ নিরাপদ করে দেওয়া হচ্ছে।
কৃষকরা জানিয়েছে, ফটিকছড়ির কতিপয় প্রভাবশালী ওপড়ের দিকে বিভিন্নস্থানে বাঁধ দিয়ে কৃষিকাজের পানির সুবিধা নিচ্ছে। অথচ নিচের দিকে থাকা কৃষকরা পানি পাচ্ছে না। এ অবস্থা থেকে কৃষি জীবিদের বাঁচাতে বাঁধ কেটে দেওয়ার পাশাপাশি তলদেশ থেকে বালু উঠিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করতে প্রশাসনের প্রতি আবেদন জানিয়েছে এ অঞ্চলের কৃষিজীবীরা।